নিজস্ব সংবাদদাতা:এবার শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের মধ্যেই মৃত্যু হল এক শিশুকন্যার। অসুস্থ হওয়ার সময় রেলের হেল্পলাইনে ফোন করেও সাড়া মেলেনি কারও এরকমটাই অভিযোগ করেছেন মৃত শিশুটির বাবা যদিও রেল এরকম কোনও অভিযোগ পায়নি বলেই জানিয়েছে। মঙ্গল- বুধবার রাত দেড়টা নাগাদ শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। কেরল থেকে আসা ট্রেনটি তখন ওড়িশার ব্রহ্মপুর স্টেশনের কাছাকাছি ছিল।এরপর মৃত শিশুটিকে নিয়ে খড়গপুর স্টেশনে নামার পরই ছুটে আসেন রেলের চিকিৎসক, তিনিই শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষনা করেন। মৃত শিশুকে নিয়ে যাওয়া হয় খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে। সেখানে ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহ নিয়ে পুরুলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন ওই শ্রমিক দম্পত্তি।
রেলপুলিশ সূত্রে জানা গেছে পুরুলিয়ার দিলদার আনসারী ও তাঁর স্ত্রী রেশমি খাতুন পুরুলিয়ার জয়পুর থানার বালিত গ্রামের বাসিন্দা যাঁরা পেট চালানোর খাতিরে কেরলের পানহানগড়ের একটি ব্যাগের কারখানায় কাজ করতেন। লকডাউনে আগেই বাড়ি ফেরার চেষ্টা করলেও রেশমি আসন্নপ্রসবা হওয়ায় ফিরতে পারেননি। এরপর শিশুটির জন্মের ১৭দিন বয়সের মাথায় তাঁরা গত সোমবার কাজিমগড় থেকে নিউজলপাইগুড়ি ট্রেনে চড়েছিলেন তাঁরা। দিলদার, রেশমি ও তাঁদের শিশুকন্যা রাবিয়া পারভিন ছাড়াও তাঁদের আরও দুই শিশুসন্তান রয়েছে। সঙ্গে আরও সাতজন ছিল।
দিলদার জানিয়েছে, “রাতে খাওয়া দাওয়ার পর আমরা শুয়ে পড়ি। কিছুক্ষন পর শিশুটির অস্বস্তি শুরু হয়। কখনও মনে হচ্ছিল গরমে কষ্ট পাচ্ছে আবার কখনও মনে হচ্ছিল শিশুটি ঠান্ডায় কাঁপছে। আমরা একবার গায়ে চাদর জড়াচ্ছিলাম আবার খুলেছিলাম। এরপর ব্রহ্মপুরের কাছে রাবিয়া চুপচাপ হয়ে যায়।”
দিলদার জানিয়েছে, “আমি বারবার রেলের হেল্প লাইনে ফোন করেছি প্রতিবারই ওপাশ থেকে বলা হয়েছে আপনি আপনার রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এরপর ভুবনেশ্বর, কটক, ভদ্রকে গাড়ি দাঁড়িয়েছে। খাবার, জল উঠেছে কিন্তু কোনও চিকিৎসক আসেননি। টানা ১২ঘন্টা আমরা মৃত শিশুকে ট্রেনে বয়ে এনেছি। বুধবার বেলা আড়াইটার সময় প্রথম একজন চিকিৎসকের দেখা মিলল খড়গপুর শহরে।” দিলদারের অনুমান যেহেতু শ্রমিক স্পেশাল দুটি রাজ্যের বিষয় তাই রেল বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামায়নি।যদিও দিলদার এ নিয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ করেনি।
রেলের তরফে খড়গপুর ডিভিশনের সিনিয়র কমার্শিয়াল ম্যানেজার আদিত্য চৌধুরী জানিয়েছেন, “সাধারন ভাবে এটা হয়না। রেলের কাছে সাহায্য চাইলে রেল চিকিৎসক পাঠিয়ে থাকে। উনি সত্যি হেল্প লাইনে ফোন করেছিলেন কী না আমরা খতিয়ে দেখছি।”দিলদার রাতেই বিষয়টি তার কাকাকে ফোন করেন। কাকা থানাকে বিষয়টি জানায়। সেখান থেকে পুরুলিয়া জেলা হয়ে যোগাযোগ করা হয় খড়গপুরের সঙ্গে। খড়গপুর রেলপুলিশ ও শহর পুলিশের তৎপরতায় ময়নাতদন্ত হবার পর পুরুলিয়া পুলিশের পাঠানো গাড়িতে মৃত মেয়েকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় পরিবার।