সন্দীপ মিশ্র : কচ্ছপের জীবন নাকি সহজে যায়না, দীর্ঘ বছর বাঁচে কচ্ছপ। কিন্তু প্রকৃতির এই বিরল গুন সম্পন্ন প্রাণীটিও রেহাই পাচ্ছেনা মানুষের তৈরি করা দূষণ থেকে। প্লাস্টিকের ফাঁদে পড়ে জীবন বিপন্ন তারও। গত রবিবার এরকমই একটি বিপন্ন কচ্ছপকে উদ্ধার করতে অবাক হয়েছেন পূজালি এলাকার একটি ক্লাবের সদস্যরা। আগাগোড়া প্ল্যাস্টিক ক্যারি ব্যাগের মধ্যে জড়িয়ে মৃত প্রায় হয়ে পড়েছিল কচ্ছপটি।
দক্ষিণ ২৪পরগনার পূজালি থানার অন্তর্গত রাজারামপুর গ্রাম। রবিবার সন্ধ্যায় সাংগঠনিক আলোচনায় নিজেদের মধ্যে ব্যস্ত ছিলেন পীর সম্মেলনি স্পোর্টিং ইউনিয়ন এর সদস্যরা। সে সময় ক্লাবেরই এক সদস্য আব্দুল আচমকা পাশের ডোবা থেকে বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ একটা অদ্ভুৎ শুনতে পান। কিন্তু আচমকা কোথা থেকে এমন শব্দ কানে আসছে তা বুঝতে না পেরে সবাই জড়ো হয়ে কোথা থেকে শব্দটি বেরুচ্ছে তা খোঁজার চেষ্টা করেন। অনেক পরে বোঝা যায় পাশের একটি ডোবা থেকে শব্দটি আসছে। বেশ কিছুক্ষণের খোঁজাখুঁজির পর তারা ডোবার মধ্যে একটি কচ্ছপটিকে দেখতে পান। দেখা যায় কচ্ছপটির গায়ে একটি প্লাস্টিক এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে তা কোনোভাবেই ছাড়াতে সক্ষম হচ্ছিল না কচ্ছপটি।
বিষয়টি নজরে আসতেই গ্রামেরই যুবক রতন এবং অন্য কয়েকজন ডোবায় থেকে কচ্ছপটিকে উদ্ধার করে প্রাণ বাঁচায়। এরপর প্লাস্টিকের আবরণটি শরীর থেকে বের করে তারা কচ্ছপটিকে বালতির মধ্যে রেখে দেন। এদিকে ততক্ষণে গ্রামে কচ্ছপ উদ্ধারের কথা ছডিয়ে পড়েছে৷ সেই অনুযায়ী গ্রামবাসীরাও কচ্ছপটিকে দেখার জন্য ভিড় জমায়। এরমধ্যেই কিছু মানুষ ওই যুবকদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে কচ্ছপটি কিনে নিতে আগ্রহী হন। কিন্তু সেসময় তমাল মান্না নামে ওই ইউনিয়নের একজন সক্রিয় সদস্য সকলকে বাস্তুতন্ত্রে বন্য প্রাণের উপযোগিতা সম্বন্ধে বোঝান। এরপর তিনিই বনবিভাগকে ফোন করে পুরো ঘটনাটি জানান। এদিকে খবর পেয়ে সোমবার বিকেলে বনবিভাগের উস্তি ফরেস্ট রেঞ্জ কচ্ছপটিকে নিয়ে যায় নিরাপদ জায়গায় ছেড়ে দেওয়ার জন্য।
কচ্ছপটিকে মেরে না ফেলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে কচ্ছপটিকে বাঁচিয়ে যে দায়িত্ব ক্লাবের সদস্যরা পালন করেছেন তার জন্য বনবিভাগের পক্ষে তমাল মান্না এবং পীর সম্মেলনি স্পোর্টিং ইউনিয়নের সদস্যদের ধন্যবাদ জানানো হয়। ডোবার মধ্যে এভাবে প্লাস্টিক ফেলে রাখার কারণে কচ্ছপটি আটকে পড়েছিল। কচ্ছপটিকে উদ্ধার না করা গেলে স্বাভাবিকভাবেই প্লাস্টিক জড়িয়েই মারা যেত এই কচ্ছপটি। এমনটি জানিয়েছেন বন দপ্তরের এক কর্মী।
দক্ষিন ২৪ পরগনার উস্তি ফরেস্ট রেঞ্জের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া কচ্ছপটি ‘ইন্ডিয়ান ফ্ল্যাপসেল টারটেল’ প্রজাতির। দক্ষিন এশিয়া জুড়ে এই প্রজাতির কচ্ছপের স্বাভাবিক বাস। আমরা সাধারন ভাবে আমাদের পুকুরে ডোবায় বা জলাশয়ে দেখতে পাই এই মিষ্টি জলের কচ্ছপটিকে। বনকর্মীরা আরও জানান, কচ্ছপ জলের ওপরে ভেসে উঠে একবার অক্সিজেন নিয়ে ফের জলের তলায় গিয়ে দীর্ঘক্ষণ নিচে থাকতে পারে। আবার প্রয়োজনে শ্বাস নিতে ওপরে ওঠে। আবার ডিম পাড়ার জন্য সে জল থেকে ডাঙ্গায় উঠে আসে। এই দুটি করনের যে কোনও একটি কারনে কচ্ছপটি জলের ওপরে উঠে আসার সময় জলে ভাসমান ক্যারিবেগের ভেতরে ঢুকে যায় সে এবং আটকে যায়। দীর্ঘক্ষণ এভাবে থাকলে মারা যেতে পারত কচ্ছপটি।