নিজস্ব সংবাদদাতা: প্রাথমিক শিক্ষক পদে সফল প্রার্থীরা টানা ৫দিন বিক্ষোভ দেখানোর পর এবার উঠে আসলেন জাতীয় সড়কে। মেদিনীপুর শহর লাগোয়া রানীগঞ্জ-বালেশ্বর ৬০নম্বর জাতীয় সড়ক এবং কেশপুর মেদিনীপুর রাজ্য সড়ক ঘিরে তাঁদের এই বিক্ষোভ অবরোধে ১ঘন্টারও বেশি সময় ধরে অচল হয়ে গেল যান চলাচল। তীব্র যানজটে আটকে গেল দুই সড়কের সমস্ত রকমের যান। এমনকি আটকে পড়লেন নির্বাচনী প্রচারের জন্য আসা সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম ও আইএসএফ নেতা আব্বাস সিদ্দিকী।
উল্লেখ্য গত ১৭ই মার্চ থেকে তাঁদের কাউন্সিলিং করার দাবিতে মেদিনীপুর শহরের প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অফিস, কালেক্টরেটের মোড় ইত্যাদি জায়গায় লাগাতার বিক্ষোভ প্রদর্শন করে চলেছেন সদ্য মেধা তালিকা ভুক্ত হওয়া ২০১৪সালের সফল পরীক্ষার্থীরা। তাঁরা দাবি করছেন অবিলম্বে তাঁদের কাউন্সিলিং করতে হবে। কারন একাংশের কাউন্সিলিং এমনকি চাকুরীর নিয়োগপত্র ও জয়েনিং হয়ে যাওয়ার পরও সিংহভাগেরই কাউন্সিলিং হয়নি। ১৫ই ফেব্রুয়ারি ফলাফল প্রকাশের পরই ১৭ই ফেব্রুয়ারি কিছু জনের নিয়োগ হয়ে যায় অথচ বেশিরভাগেরই কেন কাউন্সিলিং হয়নি এ নিয়ে প্রথমে বিক্ষোভ শুরু হয়।
তখন প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের ব্যাখ্যা ছিল জেলার প্রয়োজনীয় পদের কাউন্সিলিং হবে জেলাতেই এবং বাকিদের কেন্দ্রীয় ভাবে কাউন্সিলিং হবে কলকাতায়। যাঁদের কলকাতায় কাউন্সিলিং হবে তাঁরা অন্য জেলায় নিযুক্ত হবেন কিন্তু মেধা তালিকায় থাকা ১৫ হাজার ২৪৮জনই নিয়োগপত্র পাবেন। সেই মত আশ্বস্ত হয়ে বিক্ষোভ প্রত্যাহৃত হয়। এরই মধ্যে নিয়োগে বেনিয়মের অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হয় কিছু প্রার্থী। আদালতের একক বেঞ্চ সেই আবেদন খারিজ করে নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে যদিও পরে ডিভিশন বেঞ্চ নিয়োগ প্রক্রিয়া দু’সপ্তাহ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রেখে সমস্ত কাগজপত্র আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এবং বলে মেধা তালিকা আদালত ও প্রকাশ্যে এনে ফের নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করা যাবে। সেই মত শিক্ষা সংসদ মেধা তালিকা প্রকাশ করে এবং আদালতে জমা দেয় ঠিকই কিন্তু কাউন্সিলিং প্রক্রিয়া আর চালু করেনি। কেন এই কাউন্সিলিং প্রক্রিয়া চালু হয়নি এর কোনোও জবাবও পাওয়া যায়নি।
এদিকে দু’সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পরও কেন কাউন্সিলিং চালু হয়নি এই নিয়ে কয়েক হাজার সফল প্রার্থী বিক্ষোভ শুরু করেন পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কার্যালয়ের সামনে। জানা গেছে ওই দিন পশ্চিম মেদিনীপুর প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের জেলা পরিদর্শক তরুণস রকার বিক্ষোভকারীদের তিন সদস্যের দলের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। সেখানেই তিনি জানান, সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী তিনি কাজ করছেন। এখনও যেহেতু সরকারের কোনও কাউন্সিলিং সংক্রান্ত নির্দেশ নেই তাই তিনি কিছু করতে পারছেননা। ওই দিন জেলা পরিদর্শক ওই প্রতিনিধিদের সামনেই প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য্যর সঙ্গে ফোনে কথা বলার চেষ্টাও করেন। কিন্তু ভট্টাচার্য্য ফোনই ধরেননি।
এরপরই সফল প্রার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেইমত রবিবার মেদিনীপুর শহরের কালেক্টরেটের মোড়ে রাতভর অবস্থান করার প্রস্তুতি নেন তাঁরা। এদিকে নিবার্চনের মুখে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধান জায়গা যেখান থেকে জেলা জুড়ে নির্বাচন পরিচালনা হবে সেখানেই অবরোধ ইত্যাদির ফলে সমস্যা তৈরি হবে এই কথা মাথায় রেখে ফের বিক্ষোভ কারীদের সঙ্গে আরেকদফা আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কথা ছিল সোমবার বেলা দেড়টা নাগাদ সেই আলোচনা হবে। কিন্তু শেষ অবধি জেলা পরিদর্শক সেই আলোচনায় অংশ নেননি এই অভিযোগ তুলে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী চলে আসেন মেদিনীপুর শহরের ধর্মাতে। বিকাল পৌনে ৫টা নাগাদ শুরু হয় অবরোধ।
এই অবরোধের ফলে জাতীয় সড়কের দ্বিমুখী লেনের সমস্ত গাড়ি যেমন থমকে যায় তেমনি কেশপুর চন্দ্রকোনা, ঘাটাল থেকে আসা এবং মেদিনীপুর থেকে ওই পথে যাওয়ার সমস্ত গাড়ি বাস ইত্যাদি আটকে যায়। এই সময় গড়াবেতা থেকে প্রচার সেরে আসা সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম এবং কেশপুর থেকে প্রচার সেরে আসা আইএসএফ নেতা আব্বাস সিদ্দিকীও আটকে যান ওই জটে। তাঁদের খড়গপুর গ্রামীণ প্রার্থীর সমর্থনে মাতকাতপুরের একটি সভায় যাওয়ার কথা ছিল। প্রায় ঘন্টা খানেক অবরোধ চলার পর পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার স্বয়ং এলাকায় ছুটে যান। বিক্ষোভ কারীদের সঙ্গে কথা বলে অবরোধ প্রত্যাহার করাতে সক্ষম হন প্রায় ১ঘন্টা ১৫মিনিটের মাথায়। পুলিশ সুপার বলেছেন তিনি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলানোর চেষ্টা করবেন।
যদিও পুরো প্রক্রিয়ায় অন্ধকারে রয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদগুলি। আদৌ ভোটের আগে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে কী না, ভোট পেরুলেই বা কী হবে এবিষয়ে কোনও সুস্পষ্ট নির্দেশিকা নেই এঁদের কাছে ফলে কী জবাব দেবেন মেধা তালিকায় থাকা প্রার্থীদের ভেবে পাচ্ছেননা তাঁরা। ফলে আলোচনা এড়াতে চাইছেন তাঁরা। ওদিকে নির্বাচনে পলাশীপাড়া কেন্দ্র থেকে তৃনমূলের বিধায়ক পদ প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়ছেন মানিক ভট্টাচার্য। ফলে সমস্ত প্রক্রিয়া আপাতত বিশবাঁও জলেই বলে মনে করা হচ্ছে।