নিজস্ব সংবাদদাতা: মানুষের নিষ্ঠুর আচরন যে কোন মাত্রায় পৌঁছাতে পারে তারই নিদর্শন হয়ে রইল একটি গর্ভিনী হস্তিনী। ১২ মাসের ওই অন্তঃসত্ত্বা হাতিটিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে কেরলের একটি গ্রামে বলেই জানিয়েছে বনদপ্তর। গত বুধবার খুন করা হয় হাতিটিকে। জানা গেছে আনারসের মধ্যে বাজি ভরে খেতে দেওয়া হয় তাকে। এরপরই ওই হাতির মুখের মধ্যে ফেটে যায় বাজিটি। আর তার ফলে তার মাড়ি মারাত্মক রকম জখম হয়। মর্মান্তিক ভাবে মারা যায় হাতিটি। অভিযোগ স্থানীয় জনতার দিকে। উত্তর কেরলের মালাপ্পুরমের এক বন বিভাগের আধিকারিক সোশ্যাল মিডিয়ায় এই হত্যাকাণ্ডের বিশদ বিবরণ দেওয়ার পরে তা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর পোস্ট থেকে জানা যাচ্ছে, হাতিটি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে কাছের গ্রামে উপস্থিত হয় খাবারের সন্ধানে। সে পথ দিয়ে হাঁটার সময় তাকে আনারস খেতে দেয় স্থানীয় বাসিন্দারা।
ফেসবুকে মোহন কৃষ্ণন নামের ওই আধিকারিক লেখেন, ‘‘ও সবাইকে বিশ্বাস করেছিল। আনারসটি খাওয়ার পরে যখন তার মুখের মধ্যে সেটিতে বিস্ফোরণ হল ও নিশ্চয়ই শিউরে উঠেছিল। নিজেকে নিয়ে ভেবে নয়, বরং ওর শরীরে বেড়ে ওঠা প্রাণ, যে আরও ১৮ থেকে ২০ মাস পরে ভূমিষ্ঠ হত তাকে নিয়ে।”বিস্ফোরণটি এত ব্যাপক ছিল যে, হাতিটির জিভ ও মুখ ভয়ঙ্কর ভাবে চোটপ্রাপ্ত হয়। হাতিটি যন্ত্রণা ও খিদেয় হাতিটি গ্রামের পথে ছুটতে থাকে। কিন্তু এই চরম অস্বস্তির মধ্যেও সে কোনও বাড়ি ভাঙেনি। কাউকে আক্রমণও করেনি। ওই আধিকারিক তাঁর পোস্টে একথা জানিয়েছেন। পরে যন্ত্রণার উপশম পেতে সে স্থানীয় ভেলিয়ার নদীতে নেমে যায় জল খেতে। তাকে জল থেকে উদ্ধার করতে আরও দুই হাতিকে পাঠায় বন দফতর। কিন্তু নিজের অবস্থান থেকে নড়েনি হাতিটি। এরপর ২৭ মে বিকেল চারটেয় সে জলের মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই মারা যায়।
ছবিতে দেখা গিয়েছে হাতিটি তার শুঁড় সমেত মুখগহ্বর জলের মধ্যে ডুবিয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে। আসলে তার এতটাই যন্ত্রনা হচ্ছিল সে ওই অবস্থাতেই সে যন্ত্রনার উপশম চাইছিল। আর সে কারনে দুটি কুনকি হাতি তাকে উদ্ধার করতে গেছে জেনেও সে নড়েনি জায়গা থেকে। কুনকি দুটোও যেন বুঝতে পেরেছিল তার যন্ত্রনার কথা তাই তারাও বেশি জেদাজেদি করেনি। দু’একবার চেষ্টা করার পরে তারাও স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। যেন তাঁর যন্ত্রনা মুক্ত শান্তি পূর্ন মৃত্যু তারাও চেয়েছিল। এভাবেই কয়েক ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর মারা যায় হাতিটি। প্রচন্ড যন্ত্রনার ধকল না নিতে পেরেই হার্টফেল করে মারা যায় সে।
বনদপ্তরের ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, আমরা তাকে সেই শেষ সম্মানটুকু দিয়েছি যা তার পাওয়ার অধিকার ছিল। তাকে একটি লরিতে করে এনে যত্ন করে শুইয়ে দেওয়া হয় সাজিয়ে রাখা কাঠের ওপর। সেই কাঠের চিতা সাজানো হয়েছিল সেই মাটিতে যেখানে সে জন্ম নিয়েছিল, খেলেছিল আর বড় হয়ে উঠেছিল। হয়ত সেই মাটিতেই সে তার শাবকের জন্ম দিতেও চেয়েছিল। গভীর বেদনা ভরা তার মুখ ঢেকে দেওয়া হয়েছিল চাদর দিয়ে।তার দুচোখ বেয়ে শুকিয়ে যাওয়া জলের ধারা মুছিয়ে দেওয়া হয় যত্ন নিয়ে। আমরা তার জন্য প্রার্থনা করি আর শেষকৃত্যের আগে তাঁকে আমরা ঝুঁকে সম্মানের সঙ্গে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি। এরপর চিতা জ্বলে ওঠে।