অশ্লেষা চৌধুরী: দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতেই দাদার জয়কার। রাতারাতি কোন্ননগর জুড়ে পড়ল তৃণমূল বিধায়ক প্রবীর ঘোষালের ছবি সহ ফ্লেক্স পোস্টার। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুখ খোলার দু’দিনের মধ্যেই কোন্নগরে ছেয়ে গেল বিধায়কের ছবি সহ ‘দাদার অনুগামী’ লেখা পোস্টার।
শুরুটা হয়েছিল শুভেন্দু অধিকারীকে দিয়ে। দক্ষিনবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গ সর্বত্রই শুভেন্দুর ছবি দেওয়া পোস্টার পড়েছিল, লেখা ছিল- দাদার অনুগামী কোথাও বা দাদার ভক্ত। সেই শুভেন্দু আজ পদ্ম শিবিরে নাম লিখিয়েছেন। বাংলায় বিজেপির বেশ প্রভাবশালী মুখ হয়ে উঠেছেন তিনি। এরপরেই রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামেও দাদার অনুগামী পোস্টার পড়ে রাজ্যর বিভিন্ন জেলায়। তাঁর ভক্তরা তো শুভেন্দুর ভক্তদেরও টপকে যায় এক কদম। বুকে পোস্টার সেঁটে জমিয়ে সভা করতে দেখা গিয়েছে তাদের। এমনকি দাদার বিরুদ্ধে কেউ বললে তাঁকে ছেড়ে কথা না বলার হুমকিও দেন রাজীবের দা-র অনুগামীরা। সেই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও গত ২২শে জানুয়ারি রাজ্যেও মন্ত্রীত্ব থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। এক পা পদ্ম শিবিরে বাড়িয়ে রেখেছেন বলেই জল্পনা তুঙ্গে। আর এবার দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলে জেলার দুটো পদ থেকেই ইস্তফা দিয়েছেন উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল। এর পরে অবশয় দলের তরফ থেকে প্রবীর ঘোষালকে সতর্ক করে নোটিস পাঠানো হয়েছিল। এবার সেই প্রবীর বাবুর নামেই দাদার অনুগামী লেখা পোস্টারে ছেয়ে গেল কোন্নগর।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ২৬ শে জানুয়ারি কোর কমিটির সদস্যপদ এবং জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র পদ থেকে ইস্তফা দেন বেসুরো উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল। জানান, ‘যেহেতু দলের মধ্যে আমি ব্রাত্য তাই দলের কাজে নিজেকে যুক্ত রাখা যুক্তিযুক্ত হবে বলে মনে করছি না। তাই হুগলি জেলায় আমার দুটি পদ থেকেই আমি ইস্তফা দিলাম।’ ক্ষোভ উগরে আরও বলেছিলেন, ‘লক্ষ্মীরতন শুক্লা যেদিন মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করলেন সেদিন মুখ্যমন্ত্রী আমায় ফোন করেছিলেন। তাঁকে উত্তরপাড়ায় দলের মধ্যে যে সমস্যা হচ্ছে সেই কথা জানাই। তিনি আমাকে অন্য কেন্দ্র থেকে লড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু আমি পরিষ্কার জানিয়েছি যে আমি এখানকার ভূমিপুত্র, ভোটে দাঁড়ালে এই কেন্দ্র থেকেই দাঁড়াব।’ সেইসাথে তিনি বলেন, ‘আমি বিধায়ক পদ ছেড়ে দেব ভেবেছিলাম। কিন্তু আধার কার্ড, স্কলারশিপ–সহ বিভিন্ন কাজে বিধায়কের সই প্রয়োজন পড়ে সাধারণ মানুষের। তাই মানুষের কথা ভেবেই আমি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেইনি।’
রাশভারী গলায় অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমি নবগ্রাম হীরালাল পাল কলেজের ছাত্র ছিলাম। আমার সুপারিশেই এই কলেজে গভর্নিং বডি তৈরি হয়। এবারও হয়েছে। কলেজে একটি নতুন প্রশাসনিক ভবন তৈরি হয়েছে, যার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল আজ, ২৬ জানুয়ারি। কলেজ কর্তৃপক্ষকে বলা হয়, এই অনুষ্ঠানে শুধু সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত থাকবেন। অর্থাৎ প্রবীর ঘোষালকে ডাকা যাবে না। আমন্ত্রণপত্রেও আমার নাম নেই।’ এই ব্যাপারে অবশ্য কল্যাণ বাবু বলেন, ‘কলেজ কাকে ডাকবে আর কাকে ডাকবে না সেটা তো আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এই সব অভিযোগের ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।’
দলের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ করে বিধায়ক জানান, ‘একটা গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার কাজও ফেলে রাখা হয়েছে। একটা চক্র কাজ করছে যাতে তৃণমূলের ভাল লোক কাজ করতে না পারে। এখানে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে যাতে আমাকে হারিয়ে দেওয়া যায় সেরকম একটা চক্র কাজ করছে।’ ‘লোকসভা ভোটে আমরা হুগলি আসনে হেরেছি তার কারণ হল আমাদের অন্তর্কলহ। সেই সমস্যা এখনও মেটেনি। ঝগড়া কমেনি, ঝগড়া বেড়েছে। পিকে–র কাজকর্মে হুগলিতে দলে কোনও উন্নতি হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না। বরং ঝগড়াঝাটি বেড়েছে। ভাল লোকজন এই দলে থাকতে পারবে না,’ বলেও বোমা ফাটান এদিন প্রবীর ঘোষাল। সাংবাদিক বৈঠক করে এভাবে ক্ষোভ উগরে দেওয়ার পরই দল বিরোধী কাজের অভিযোগে প্রবীর ঘোষালকে শো কজ করে দল।
আর শুভেন্দু, রাজীবের মতই এরপর এদিন প্রবীর ঘোষালের নামে পড়ল দাদার অনুগামির পোস্টার। আর এই ঘটনা আবারও প্রবীর বাবুর পদ্ম শিবিরে যোগদানের জল্পনার পালে বাতাস দিল।