ভীষ্মদেব দাশ: বিশ্বের বৃহত্তম কুমির প্রজাতির ছানাদের উদ্ধারকে ঘিরে গবেষনারত প্রানীবিদদের তথ্যে উঠে এসেছে এক চমকপ্রদ তথ্য। জানা গেছে আমফান বিদ্ধস্ত সুন্দরবন থেকে নিরাপদ জায়গায় ঘর বাঁধতে এবং ডিম পাড়তেই ১৫০ কিলোমিটার উজান বেয়ে মিষ্টি জলে উঠে এসেছিল নোনা জলের অতিথিরা। গবেষণায় আরও জানা গেছে লক ডাউন পরিস্থিতি আরও সহায়ক হয়েছে ওই অত্যাশ্চর্য অভিবাসন পর্বে। পূর্ব মেদিনীপুরের
খেজুরি, পটাশপুরে কোথা থেকে এল একের পর এক কুমির ছানা? কেনই বা এল এখানে? এই প্রশ্নকে ঘিরেই কৌতূহলী বিশেষজ্ঞরা গবেষনা করতে গিয়ে জেনেছেন উদ্ধার হওয়া কুমির ছানাগুলি সল্ট ওয়াটার ক্রোকোডাইল প্রজাতির। পূর্ব মেদিনীপুরে বিশ্বের বৃহত্তম নোনা জলের কুমির প্রজাতির (সল্ট ওয়াটার ক্রোকোডাইল) কুমির ছানা উদ্ধারের ঘটনা রেকর্ড গড়েছে। কারন সুদুর অতীতেও এর নজির নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কুমির বাসা বাঁধতে সুন্দরবন থেকে ১৫০কিলোমিটার দুরে শান্তপ্রিয় জায়গার সন্ধান পেয়েছিল। সম্ভবত বঙ্গোপসাগর বা সপ্তমুখী, মুড়ি গঙ্গা, হুগলি নদী এবং হলদি নদীর সাথে সংযোগকারী নদী নালা দিয়েই এসেছে কুমির। কেন এত পথ পাড়ি দিয়েছিল কুমির? কিসের সন্ধানে এসেছিল সল্ট ওয়াটার ক্রোকোডাইল? এপ্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন কারন পর্যালোচনা করেছেন। কারন হিসেবে উঠে এসেছে আমফান, লকডাউন এবং ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। বিশেষজ্ঞদের মতে আমফানের ফলে প্রকৃতি স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়েছিল। আমফানের জেরে উত্তাল সুন্দরবন থেকে বাঁচার তাগিদে উঁচু নিরিবিলি স্থানের খোঁজেই কুমির বঙ্গোপসাগর, হুগলি নদী, হলদি নদী বরাবর এসেছিল।
এই পথ বরাবর আসার কারনে ম্যানগ্রোভ অরন্য ঘেরা শান্ত উঁচু জায়গা পেয়েছিল। করোনা-লকডাউন কুমিরের স্থানান্তরের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। লকডাউনের ফলে প্রকৃতি ফিরে পেয়েছে তার রুপ। দূষণহীন বিশুদ্ধ জল, বাতাসের ফলে প্রাণ ফুরে পেছে বন্য প্রাণী থেকে জলজ প্রাণী। লকডাউনের ফলে শান্ত ছিল সমুদ্র, নদী। বন্ধ ছিল মৎস্যজীবীদের ট্রলার, জাহাজ। ফলে জল স্থির ছিল। জাহাজ, ট্রলারের শব্দ, জলের তলকানি থেকে মুক্ত ছিল সমুদ্র, নদী। যা জলজ প্রাণী, কুমিরের ক্ষেত্রে চলাচলের আদর্শ সময়।
প্রসঙ্গত ১২ ই সেপ্টেম্বর এবং ২৪শে সেপ্টেম্বর নিজকসবা বনদপ্তরের অধীন নিজকসবা ও পাঁচুড়িয়া থেকে কুমিরছানা উদ্ধার হয়েছিল। তারপর ২৬শে সেপ্টেম্বর পটাশপুর থানার তাপিন্দা গ্রামে বাগুই নদীতে মৎস্যজীবীর জালে ধরা পড়েছিল কুমিরটি। প্রথম দুটি কুমিরছানা বনদপ্তরের তরফে সুন্দরবনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। তৃতীয় কুমিরটি অর্থাৎ পটাশপুর থেকে উদ্ধার হওয়া কুমিরটি আলিপুর চিড়িয়াখানায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হবে বলে জানা গিয়েছে। আলিপুর চিড়িয়াখানার প্রধান বন্যপ্রাণী ওয়ার্ডেন ভি কে যাদব বলেছেন, খেজুরি, পটাশপুরে নোনা জলের কুমির দেখার আগে কোনও রেকর্ড নেই। বাগুই নদী থেকে উদ্ধার হওয়া কুমিরটির বয়স প্রায় দেড় মাস এবং দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩ ইঞ্চি। তাঁর মতে, গত দুই দশক ধরে নিজকসবায় ম্যানগ্রোভ লাগানো হয়েছে। ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল কুমিরের ডিম পাড়ার জন্য আদর্শ স্থান।
নোনা জলের কুমির প্রজনন ও তাদের আচরন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ ও ডব্লিউ.সি.এস (Wildlife conservation society, India ) সদস্য অনির্বাণ চৌধুরী জানান, কুমির সাথী, বসবাসের অনুকূল স্থানের সন্ধানে দীর্ঘ দূরত্বে ভ্রমণ করতে পারে। “তারা অভিবাসনের রুট হিসাবে সমুদ্রকে ব্যবহার করে। একটি সময়ের মধ্যে প্রায় ৯০০কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করতে পারে। ভ্রমণের সময়, তারা তাদের পক্ষে জলের স্রোত ব্যবহার করে। কুমিরের পূর্ব মেদিনীপুরে যাওয়ার সম্ভাব্য রুটটি বঙ্গোপসাগর বা সপ্তমুখী, মুড়ি গঙ্গা, হুগলি এবং হলদি নদীর সাথে সংযোগকারী নদী নালা।