অশ্লেষা চৌধুরী: দলত্যাগীদের বিরুদ্ধে একাধিক জায়গা জুড়ে পোস্টার। কারও জুটেছে বিশ্বাসঘাতকের তকমা, তো কেউ পেয়েছেন চোর বা অশুভ শক্তির আখ্যা, আবার কারও কপালে জুটেছে নারী পাচারকারীর তকমা। পুরোনো দল ও নতুন দলের চাপে যেন যাঁতাকলে পিষছেন সদ্য তৃণমূল ত্যাগীরা।
বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডায়মন্ড হারবারে তৃণমূলত্যাগী বিধায়কের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়েছে। বুধবার সকালে স্টেশন বাজার থেকে জেটিঘাট পর্যন্ত একাধিক জায়গায় জাতীয় সড়কের দু’ ধারে দীপক হালদারের নামে বিশ্বাসঘাতক লেখা পোস্টার দেখা যায়। বিধায়কের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজন পোষণের অভিযোগ তোলা হয়েছে ওই পোস্টারে।
অপরদিকে, শান্তিপুর বিধানসভার বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য-এর বিরুদ্ধে মঙ্গলবার একাধিক জায়গায় পোস্টার পড়েছে। তবে তাঁকে ঘিরে ক্ষোভ এই প্রথম নয়। এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে নতুন দলের ক্ষোভ আছড়ে পড়েছে। কংগ্রেসের টিকিটে জোটের সহযোগিতায় জয়ী হয়েছিলেন নদীয়ার অরিন্দম ভট্টাচার্য। শান্তিপুর বিধানসভার বিধায়ক হন তিনি। পরে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান এবং তারও কিছুদিন পর বিজেপিতে যোগদানের ফলে লোকালয়, সর্বত্রই দলত্যাগ করা নিয়ে একাধিক গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে অরিন্দমের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সকালে শান্তিপুর শহরের একাধিক জায়গায় পোস্টার দেখা যায় বিধায়কের বিরুদ্ধে। শান্তিপুর শহরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের, রামনগর চর, শশী খাঁ পোল, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ডাকঘর, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বড়বাজার, বেলঘড়িয়া ২ নম্বর অঞ্চলের ফুলিয়া পাড়া, হরিপুর অঞ্চলের নৃসিংহ পুর এ রকমই শান্তিপুর শহর ও গ্রামের একাধিক জায়গায় পোস্টার পড়তে দেখে এলাকাবাসী। যাতে লেখা আছে “দম বন্ধ হওয়া শান্তিপুর আজ অভিশাপমুক্ত, অশুভ শক্তির বিনাশ, তাই শান্তিপুরের ঘরে ঘরে নতুন করে আজ বাঁধভাঙ্গা স্বাধীনতার আনন্দ।” আবার কোনওটায় লেখা, “পাপটা বিদায় হয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেস জিতে গিয়েছে, বাকি শুধু আবির খেলা, অরিন্দম তুমি শান্তিপুর ছেড়ে পালাও।”
অন্যদিকে, তৃণমূল ছেড়ে পদ্ম শিবিরে গিয়েও অস্বস্তি কমেনি উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষালের। মঙ্গলবার তাঁর বিরুদ্ধে ফেসবুকে একাধিক অভিযোগ তুলে সরব হলেন বিজেপি কর্মীদের একাংশ। প্রবীর বাবুকে শিশু পাচারকারী আখ্যা দিয়েছেন তাঁরা। শুধু তা-ই নয়, ফেরিঘাট ইজারা পাইয়ে দিয়ে কাটমানি নেওয়া অথবা কোন্নগর পুরসভার লজে মধুচক্র চালানোর মতো গুরুতর অভিযোগও তুললেন বিজেপি-র ওই কর্মীরা। এমনকি, ‘উত্তরপাড়ার বিধায়ক বিজেপি থেকে দূর হটো’-র মতো স্লোগানও লেখা হয়। তবে প্রবীর বাবুর দাবী, বিজেপি কর্মীরা নন, তৃণমূলই এ সব করিয়েছে। কারণ তিনি শনিবার তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর দিনই তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন পুরনো দলের কর্মীরা। উত্তরপাড়ায় তাঁর পোস্টারে কালি লেপে লেখা হয়েছিল, ‘গদ্দার মীরজাফর’। মঙ্গলবার নতুন দলেও প্রায় একই ধরনের প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হল তাঁকে। তবে প্রবীর বাবু বলেন, “আমি মানুষের ভোটে বিধায়ক হয়েছি। কোনও দলের ভোটে নয়।” যদিও প্রবীর বাবুর এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন শাসকদলের নেতারা।
পোস্টার পোস্টার খেলা যেন এখন বঙ্গ রাজনীতির একটি নতুন অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিধানসভা নির্বাচন কড়া নাড়ছে দরজায়, আর একের পর এক নেতা, বিধায়কদের তৃণমূল ত্যাগ করে পদ্ম শিবিরে যোগদানের যেন ধুম পড়েছে। বিভিন্ন সময়ে দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন তারা, আর তারপরেই গিয়ে নাম লেখাচ্ছেন পদ্ম শিবিরে। শুরুটা শুভেন্দু অধিকারীকে দিয়ে শুরু হলেও সেই তালিকা ক্রমশই লম্বা হচ্ছে। তবে পাশাপাশি এই সকল দলত্যাগীদের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন অনেকেই, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে কখনও পোস্টারের মাধ্যমে, আর নয়তো সোশ্যাল সাইটে।