অশ্লেষা চৌধুরী: তৃনমূল আছে তৃনমূলেই! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা প্রশান্ত কুমাররা যখন আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে মুখে দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে খাবি খাচ্ছেন তখন কোচবিহারের দিনহাটায় খোলাখুলি কোন্দলে ব্যস্ত তৃনমূলের দুই গোষ্ঠীর কর্মীরা। রীতিমত সভা করে এক পক্ষ জানিয়ে দিলেন যে বিধায়ক উদয়ন গুহকে প্রার্থী হিসাবে চান না তাঁরা। প্রকাশ্যে সভা করে তাঁকে প্রার্থী না করার দাবী জানালেন সেই তালিকায় থাকা নেতা-কর্মীরা। ঘটনায় চরম অস্বস্তিতে দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল নেতারা।
শনিবার দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকের নয়ারহাট হাই স্কুলের মাঠে তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি মীর হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে এক কর্মী সভার আয়োজন করা হয়। এই কর্মী সভায় উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মীর হুমায়ুন কবীর, দিনহাটা ২ নম্বর ব্লক যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মিলন সেন, তৃণমূল নেতা তরণী কান্ত বর্মন, গোবরা ছাড়া নয়ারহাট গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মমতাজ বেগম, অজয় রায়, সাবির সাহা সহ অনান্য নেতা কর্মীরা। আসন্ন বিধানসভা ভোটে দিনহাটা কেন্দ্রে বিধায়ক উদয়ন গুহ যাতে প্রার্থী না হতে পারেন তার জন্য জেলা এবং রাজ্য নেতাদের কাছে আর্জি জানানো হবে বলে উপস্থাপন করেন এদিনের কর্মীসভায় নেতা কর্মীরা। দিনহাটা ২ ব্লকের তৃণমূলের যুব সাধারণ সম্পাদক মিলন সেন জানান, ‘‘এবার আমরা দিনহাটায় উদয়ন গুহকে প্রার্থী চাইনা ৷ তার জায়গায় অন্য কেউ প্রার্থী হলে আমরা পুরনো কর্মীরা তাকে জেতানোর দায়িত্ব নেব৷’’
পাশাপাশি তারা বলেন, বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের যে ব্লক ও গ্রামপঞ্চায়েত কমিটি গঠিত হয়েছে সেখানে বিধায়কের নিজের পছন্দের লোকজনদের স্থান দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তারা তৃণমূলের কর্মীই নন। দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকে যাদের নেতৃত্বে তৃণমূল চলছে তারা গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে ভোট দেয়নি। ফলে প্রকৃত যারা তৃণমূল কর্মী তাদের এই কমিটিতে স্থান দেওয়া হয় নি। তাই, এই কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি গঠন করার দাবি জানান কর্মী সভার বক্তাগণ।
উল্লেখ্য, মাস কয়েক আগে দিনহাটা ২ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কমিটি গঠনের পর থেকেই দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহের সঙ্গে মীর হুমায়ূন কবীর অনুগামীদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামনে চলে আসে। উভয় গোষ্ঠী আলাদা আলাদা ভাবে কর্মসূচি পালন করে চলেছে। মিলন সেন, দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি মীর হুমায়ুন কবীরের ঘনিষ্ঠ। যদিও বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে দিনহাটার তৃণমূল বিধায়কের, কে কী মন্তব্য করল সে বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। কোচবিহারের তৃণমূল নেতৃত্ব দাবী করেছেন, দল ঠিক করবে কে প্রার্থী হবেন। কোচবিহারের তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল আহমেদ বলেন, ‘প্রার্থী কে হবে তা ঠিক করবে দল, এ বিষয়ে যা বলার দলের ভেতরে কথা বলব।‘
অপরদিকে বিষটি নিয়ে কটাক্ষ করার সুযোগ হাতছাড়া করেনি পদ্ম শিবির। কোচবিহারের বিজেপি জেলা কমিটির সদস্য বিরাজ বসু বলেন, ‘‘তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে তিতিবিরক্ত সাধারণ মানুষ, তারা পরিবর্তন চাইছে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পক্ষে পরিবর্তন আসন্ন ৷’’
প্রসঙ্গত, কেবল দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহই নয়, সিতাইয়ের বিধায়ক জগদীশ বর্মা বাসুনিয়াকে যেন ফের প্রার্থী না করা হয়, সম্প্রতি এমনই দাবী তোলেন তৃণমূলের একাংশ। বিধানসভা নির্বাচনের মুখে কোচিবিহার জেলায় এইভাবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরম আকার নেওয়ায় শাসকশিবির যে চরম অস্বস্তিতে পরেছে, তা বলাবাহুল্য।