নিজস্ব সংবাদদাতা: ৮ টি পর্যায়ে ভোট হতে চলেছে বাংলায়, যা এক কথায় নজিরবিহীন। বাংলায় এত দফায় ভোট হয়নি আগে। এত দফায় ভোট হওয়ার কারণ যেমন বাংলার নির্বাচনে নজির বিহীন সন্ত্রাস হার জীবনহানির ঘটনা তেমনই রয়েছে করোনা পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত সতর্কতা বজায় রাখার চেষ্টা। বাংলার আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে যেমন করোনা আর সন্ত্রাস মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ তেমনই দুই মেদিনীপুর আর জঙ্গলমহলের তিন জেলা পুরুলিয়া বাঁকুড়া আর ঝাড়গ্রামে রয়েছে একটি আলাদা বৈশিষ্ট্য আর সেই বৈশিষ্ট্যর নাম শুভেন্দু অধিকারী। ২বছর আগে ২০১৯ লোকসভা ভোটে এই ৫টি জেলায় তৃনমূলের নেতৃত্ব হিসাবে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী আর এবার তিনি বিপরীত শিবিরে, বিজেপিতে।
দু’বছর আগে এই পশ্চিমের জেলাগুলিতে দাপুটে ফল করেছিল বিজেপি। এবার সেই জেলাগুলি দিয়েই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট শুরু হতে চলেছে। সেইসঙ্গে এবার শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ফলে দুই মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে রীতিমতো মর্যাদার লড়াই হবে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে। যত ভোটের দিন এগিয়ে আসবে, তত ওই জেলাগুলিতে রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়বে ধারণা সংশ্লিষ্ট মহলের। সেই পরিস্থিতিতে প্রথম দু’দফায় পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং বাঁকুড়ার সব আসনে ভোটগ্রহণ পর্ব মিটে যাবে। একনজরে দেখে নিন চার জেলার কোন আসনে কবে ভোটগ্রহণ হবে –
প্রথম দফা (২৭ মার্চ) : ভোট হতে চলেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুর, কাঁথি উত্তর, ভগবানপুর, খেঁজুরি, কাঁথি দক্ষিণ, রামনগর, এগরায়। ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর, ঝাড়গ্রাম, বিনপুরে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর, কেশিয়াড়ি, খড়্গপুর, গড়বেতা, শালবনি, মেদিনীপুরে। পুরুলিয়ার বান্দোয়ান, বলরামপুর, বাঘমুণ্ডি, জয়পুর, পুরুলিয়া, মানবাজার, কাশীপুর, পারা, রঘুনাথপুর এবং বাঁকুড়া জেলার শালতোড়া, ছাতনা, রানিবাঁধ এবং রায়পুরে।
দ্বিতীয় দফা (১ এপ্রিল) : পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক, পাঁশকুড়া পূর্ব, পাঁশকুড়া পশ্চিম, ময়না, নন্দকুমার, মহিষাদল, হলদিয়া, নন্দীগ্রাম, চণ্ডীপুর। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন, খড়্গপুর সদর, নারায়ণগড়, সবং, পিংলা, ডেবরা, ঘাটাল, চন্দ্রকোণা, কেশপুর, বাঁকুড়ার তালড্যাংরা, বাঁকুড়া, বড়জোড়া, ওন্দা, বিষ্ণুপুর, কোতুলপুর, ইন্দাস এবং সোনামুখী।
উল্লেখ্য এই ৫৫টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পুরুলিয়ার ৯টি বিধান ৯টিতেই এবং ঝাড়গ্রামের ৪টির সব গুলিতেই একদফা বা প্রথম দফায় ভোট শেষ হয়ে যাবে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ১৬টি বিধান সভা কেন্দ্রের ৭টি তে প্রথম দফায় ও বাকি ৯টিতে দ্বিতীয় দফায় ভোট। পশ্চিম মেদিনীপুরের ১৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে প্রথম দফায় ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে এবং বাকি ৯টিতে দ্বিতীয় দফায় ভোট শেষ হচ্ছে। অন্যদিকে বাঁকুড়া জেলার ১২টি বিধানসভা ক্ষেত্রের ৪টি প্রথম দফায় এবং বাকি ৮টি আসনে দ্বিতীয় দফায় ভোট গ্রহণ পর্ব সমাপ্ত হবে।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃনমূলের ১০০শতাংশ সাফল্য ছিল এই ৫৫টি আসনেই কিন্তু ২০১৯ হিসাব বদলে দিয়েছে সব কিছুরই। মাঝের পঞ্চায়েত নির্বাচন(২০১৮) এই এলাকায় যে পদ্মের চাষ শুরু হয়েছিল তার উর্বরতা এতটাই বেড়ে যায় যে ২০১৯শের লোকসভায় এই ৫জেলার ৮ আসনের ৫টিতেই পদ্ম ফুটে যায় এবং বাকি তিন আসনের একটি ঘাটাল লোকসভায় কোনোও রকমে মান রক্ষা হয় তৃনমূলের। বাকি দুটি পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক ও কাঁথি যেখানে তৃনমূলের হয়ে অধিকারী পরিবারের পিতা-পুত্র জয়ী হলেও এখন মোটের ওপর তাঁদের ঝোঁক পদ্ম-শিবিরে। যদিও এখনো এই পাঁচ জেলার মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরেই ভালো অবস্থানে রয়েছে তৃনমূল। ৫৫টি আসনের মধ্যে এই জেলাতেই তৃনমূল কিছুটা ভালো ফল করতে পারে বাদ বাকি জেলা গুলোতে বিজেপি লোকসভার হিসাবে অনেকটাই এগিয়ে।
লোকসভার শক্তি বিন্যাস অনুযায়ী এই ৫৫আসনের মধ্যে ১৫টি আসনে সুবিধা জনক অবস্থানে রয়েছে তৃনমূল বাকি গুলিতে এগিয়ে বিজেপিই। যদিও ২বছরে অনেকটাই পট পরিবর্তন হয়েছে। কোথাও কোথাও বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকট হয়েছে। শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপিতে যুক্ত হওয়ায় পূর্বের বেশ কিছু বিধানসভায় তৃনমূল বিরোধী ক্ষোভ প্রশমন হয়েছে যা তৃনমূলের প্লাশ পয়েন্ট। যদিও এটা খুব সামান্য এলাকা জুড়ে। এরই মধ্যে বামপন্থীরা নিজেদের শক্তি ফিরে পেয়েছেন বেশকিছু জায়গায়। এই ৫৫টির অন্ততঃ ১০টি আসনে বাম জোট ভালো লড়াই করার জায়গায় রয়েছে। আর সর্বশেষ রাজ্য সরকারের শেষ পর্যায়ের জনপ্রিয় কর্মসূচিগুলি কিছুটা হলেও মানুষের ক্ষোভ প্রশমন করেছে। এই অনেক রকম ফ্যাক্টরের মধ্যে দাঁড়িয়ে এবারকার ভোট যার ফলাফল জানা যাবে ২রা মে।