Homeএখন খবরপুলিশে অসন্তোষ বাড়ছেই, তৃতীয় দফায় বিক্ষোভ আছড়ে পড়ল সল্টলেকের ব্যাটালিয়নে

পুলিশে অসন্তোষ বাড়ছেই, তৃতীয় দফায় বিক্ষোভ আছড়ে পড়ল সল্টলেকের ব্যাটালিয়নে

নিজস্ব সংবাদদাতা: ক’দিন আগেই পুলিশ কর্মীদের দ্বারাই থানা ভাঙচুর হয়েছিল কলকাতার গড়ফাতে। তার দু’দিন আগেই কলকাতা পুলিশের ট্রেনিং সেন্টারে হয়ে গেছে তুমুল বিক্ষোভ। বাঁশ দিয়ে পেটানো হয়েছিল কমাডেন্টকে এবার বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন কলকাতা পুলিশের চতুর্থ ব্যাটেলিয়নের পুলিশ কর্মীরা। গত সাড়ে চার দশকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে এই লাগাতার বিক্ষোভের ছবি নেই বললেই চলে। তারও আগে এমন হয়েছে কিনা এমনটা জানা নেই আপাতত। বাম জামানার প্রথমে জ্যোতি বসুর সময়ে একবার বিক্ষোভ দেখানো হয়েছিল বটে কিন্তু সেটা ধোপে টেকেনি। সেই প্রথম সেই শেষ। কিন্তু এভাবে পরপর বিক্ষোভের নজির নেই।
শুক্রবার এই বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে  কলকাতা সশস্ত্র পুলিশের চতুর্থ ব্যাটেলিয়নের হেডকোয়ার্টার রয়েছে সল্টলেকের ১ নম্বর সেক্টরে। এ দিন বিকেল থেকে সেখানকার পুলিশকর্মীরা প্রবল বিক্ষোভে নেমে পড়েন। ব্যাটালিয়নের মধ্যে তাঁদের কেউ কেউ ভাঙচুর করেন। এমনকি ইট বৃষ্টিরও ঘটনা ঘটেছে বলেই জানা গেছে।

এ ক্ষেত্রেও বিক্ষোভরত পুলিশ কর্মীদের অভিযোগ, গত বেশ কিছুদিন ধরে তাঁরা কোনও ছুটি পাচ্ছেন না। করোনা সংক্রমণের মোকাবিলায় তাঁদের ঠেলে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাঁদের সুরক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। তাঁদের এক সহকর্মী ইতিমধ্যেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।  এক পুলিশ কর্মীকে চিৎকার করে বলতে শোনাও গেছে যে , ‘আমরা কি করোনায় মরব নাকি!’ কয়েক মিনিটের মধ্যেই খবর পৌঁছে যায় নবান্নে। তৎপর হয়ে ওঠেন শীর্ষ অধিকেরা।

খোদ ব্যাটেলিয়নের হেড কোয়ার্টারে বিক্ষোভের খবর পেয়ে এ দিন বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট থেকে উচ্চপদস্থ কর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। প্রথম পুলিশের বড় বাহিনী সেখানে পৌঁছলে দেখা যায়, আবাসনের গেটের ভিতর থেকে পুলিশ কর্মীরা তাঁদের বিরুদ্ধেও তীব্র সমালোচনা করছেন। কিন্তু পরে অবশ্য সিনিয়র অফিসারদের ভিতরে ঢুকতে দেখা যায়। জানা গেছে আলাপ আলোচনার পর উত্তেজিত পুলিশ কর্মীদের শান্ত করতে সক্ষম হয়েছেন আধিকারিকরা।

পুলিশ কর্মীদের অভিযোগ ছুটি যেমন মিলছেনা তেমনই নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন তাঁরা কর্তব্য পালন করতে গিয়ে।  এই একই অভিযোগ ছিল পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের কর্মীদেরও। দিন রাত  কাজ করার পর ব্যারাকে নূন্যতম পরিষেবা মিলছেনা বলেই তাঁদের অভিযোগ ছিল। তাঁরা বলেছিলেন , তাঁদের ক্যান্টিন রয়েছে। কিন্তু খাবারের মান ভাল নয়। মুখ্যমন্ত্রীর সামনেও তাঁরা তাঁদের সমস্ত অসন্তোষের কথা উজাড় করে দিয়েছিলেন। দাবি উঠেছিল এক পুলিশ কর্তার অপসারন করার।

পরের ঘটনা গড়ফার। অসুস্থ অবস্থাতেও ডিউটি করতে বাধ্য করা হয়েছিল ওই কর্মীকে এবং সে কারনেই তাঁদের সহকর্মী পুলিশ কনস্টেবলের মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে এবং যথেষ্ট চিকিৎসার অভাবে তাঁদের সহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে দাবি করে গড়ফা থানার মধ্যে তাঁরা ভাঙচুর করেন। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, পুলিশের মধ্যে এই বিক্ষোভ ভাল লক্ষণ। এ ধরনের বিক্ষোভের সংক্রমণও দ্রুত ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। সম্ভবত সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী নিজে পিটিএসে গিয়ে পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন।

বারংবার পুলিশের মত  একটি শৃঙ্খলাপরায়ণ বাহিনীর এই বিক্ষোভ রাজ্যের স্বাস্থ্যের পক্ষে আদৌ ভাল লক্ষন নয়।  বিদ্রোহের পরে নয় আগেই ক্ষোভের আঁচ পাওয়া এবং তৎক্ষণাৎ উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে কর্মীদের শান্ত করা দরকার বলেই মনে করছেন অভিজ্ঞরা। কেন এই ক্ষোভের বিষয়টি গোয়েন্দারা আগেভাগেই টের পাচ্ছেননা লাখ টাকার প্রশ্ন সেটাও। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, পুলিশ বাহিনীর মধ্যেও সংযমের প্রয়োজন রয়েছে। কোনও অভাব অভিযোগ থাকলে তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তা জানাতে পারতেন। কিন্তু পুলিশই যদি বিক্ষোভে নেমে পড়ে তা হলে সামগ্রিক ভাবে প্রশাসন ও পুলিশি ব্যবস্থা সম্পর্কে ভুল বার্তা যায়। তা না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। করোনা, লকডাউন ও আমফানের মত বিষয়গুলি রাজ্যকে কঠিন আবর্তে ঘিরে ফেলেছে ঠিকই কিন্তু এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে ঠান্ডা মাথায় ও পরিকল্পনা মাফিক।

RELATED ARTICLES

Most Popular