নিউজ ডেস্ক: তৃণমূলের নির্বাচনী বৈতরণী পার করে জয় এনে দেওয়ার উপহার পেলেন পিকে ওরফে প্রশান্ত কিশোর। রাজ্যসভার জন্য তাঁকে মনোনীত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের পর থেকেই গুঞ্জন উঠেছিল, প্রশান্ত কিশোরকে রাজ্যসভায় পাঠাতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে রাজনীতির দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে চলছেন পিকে। একসময় নীতিশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেডের সদস্য ছিলেন পিকে। কিন্তু প্রকাশ্যে দলের সমালোচনা করে বহিষ্কৃত হন তিনি।
যদিও রাজনীতি থেকে আপাত অবসরের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শদাতা ও ভোট কুশলীর দায়িত্ব নিয়ে পিকে মিশে গেছিলেন তৃনমূলের সাথে। দলের কেউ না হয়েও ক্লাস নিয়েছেন তৃনমূলের নেতা মন্ত্রীদের। ২০২১ বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে দুই সংখ্যা টপকাতে পারবে না এবং তৃণমূল আবারও রাজ্যে ক্ষমতায় আসবে- সেই কথা পিকে বার বার বলেছিলেন। আর হয়েছেও তাই। তিন অঙ্কের ঘর ছুঁতে পারেনি বিজেপি এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরেছে তৃণমূল। এরপরেই রাজ্যসভার শূন্য আসন নিয়ে চর্চা শুরু হয়। এই মুহূর্তে একটি আসন শূন্য রয়েছে। আরও একটি আসন শূন্য হবে শীঘ্রই । আর এই দুটি আসনে তৃণমূলের তরফে প্রশান্ত কিশোর এবং প্রাক্তন বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্ত সিনহাকে নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু হয়েছে। তৃণমূল সূত্রে জানা যায় এই দুজনের নাম নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে আলোচনা শুরু হয়। পাশাপাশি বৈঠকে প্রশান্ত কিশোর হাজির ছিলেন। রাজভবন ও তৃণমূল ভবন, এই দুই জায়গাতেই প্রশান্ত কিশোর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ির পিছনের আসনে বসেই গেছেন।
এদিকে চ্যালেঞ্জে জিতেও নিজের পেশা থেকে অব্যাহতি চেয়ে নিয়েছিলেন পিকে। সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে কমিশনের বিরুদ্ধেও বিস্ফোরক অভিযোগ আনেন তিনি। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে। আমাদের প্রচার করা মুশকিল হয়ে গিয়েছিল। আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম।’ তবে নিজের গণনা স্থির হওয়ার পরেও কেন পেশা থেকে অব্যাহতি চাইছেন তিনি? এমন প্রশ্নের উত্তরে নিজেকে ব্যর্থ রাজনীতিবিদ বলে আখ্যা দেন পিকে। তিনি বলেন, ‘আমি একজন ব্যর্থ রাজনীতিবিদ। আমাকে ফিরে যেতে হবে এবং আমাকে কী করতে হবে তা দেখতে হবে।’ সেইসঙ্গেই তিনি জানান, আসামে পরিবারের কাছেই ফিরে যেতে চান এবং সেখানে গিয়ে চা-বাগানের কাজ করবেন বলেও জানান পিকে।
উল্লেখ্য, পিকে আগেই জানিয়েছিলেন, বাংলায় বিজেপি দুই সংখ্যা পার করতে পারবে না। এই বিষয়ে তিনি ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর ট্যুইটও করেছিলেন। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘বাস্তবে দুই সংখ্যা পার করতে কসরত করতে হবে বিজেপিকে। ট্যুইটটি সেভ করে রাখুন। এর চেয়ে বেশি আসন পেলে পেশা ছেড়ে দেব।’ রবিবার ভোট গণনার দিনও এই লেখাই তিনি রি-ট্যুইট করেন। শেষ পর্যন্ত মিলেও যায় তাঁর বক্তব্য। কিন্তু তারপরেও ভোটের ফলাফল ঘোষণার দিনই নিজের পেশা থেকে অব্যাহতি নিতে চান বলে ঘোষণা দেন পিকে।
ফলে রাজ্যসভায় প্রশান্ত কিশোরকে পাঠানোর বিষয়টাও আরও সুস্পষ্ট হয়ে যায়। আবার প্রশান্ত কিশোরের রাজনৈতিক কাজের ইতিহাসও রয়েছে। তিনি তরুণ বয়সে বিহারে নীতিশ কুমারের জেডিইউ-র শীর্ষ পদে ছিলেন। তাই বিজেপি বিরোধী প্রশান্তের সঙ্গে তৃণমূলের নীতিগত পার্থক্য সেই অর্থে নেই বললেই চলে। তাই রাজনীতিতে অভিজ্ঞ, সুবক্তা প্রশান্তের তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ হওয়ার পথে কোনও বাধা থাকার কথা নয়। সেই মতোই তাঁকে তাঁর কাজের পুরস্কার দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো।একইসঙ্গে যশবন্ত সিনহা-কেও রাজ্যসভার জন্য মনোনীত করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো।