নিজস্ব সংবাদদাতা: রাজধানীর প্রবেশ মুখে ফেলে রাখা হয়েছিল টন টন কংক্রিটের ব্লক কিন্তু সে সব সরিয়ে রাস্তার পাশেই উল্টে ফেলেছেন কৃষকরা। অমিত শাহের কেন্দ্রীয় বাহিনীর পুলিশ এরপর রাস্তায় আড়াআড়িভাবে দাঁড় করিয়ে দেয় শত শত ট্রাক। কিন্তু নিজেদের ট্রাক্টরদিয়ে টেনে সেগুলিকেও রাস্তার পাশে উল্টে ফেলে দেওয়া হয়েছে। দিল্লিতে ঠান্ডাটা এখন জাঁকিয়ে পড়েছে। সদ্য বিহার জয় করা নরেন্দ্র মোদি আর অমিত শাহের এখন শীত উপভোগের সময় কিন্তু পরিবর্তে এই শীতেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে তাঁদের কারন দিল্লির দখল নিয়েছেন লাখো কৃষকের দল। দাবি একটাই প্রত্যাহার করতে হবে কৃষি বিল। কোনোমতেই তাঁদের বাগে আনতে পারছেন না প্রবল প্রতাপশালী মোদি শাহ জুটি।
নতুন কৃষি বিল পাশের পর থেকেই দেশ জুড়ে বিক্ষোভ হয় দফায় দফায়। তবে সেসবে কান না দিয়ে কার্যত ফুৎকারে উড়িয়ে দেয় বিজেপি। বদলে এমপি এমএলএদের দিয়ে কৃষি বিলের সমর্থনে বাড়ি বাড়ি প্রচার করে বিজেপি। তবে সেসবে কিছুই কাজের কাজ হয়নি সেটা এখন পরিষ্কার। পাঞ্জাব হরিয়ানা সহ গোটা দেশ থেকে কৃষকরা পার্লামেন্ট অভিযানে নেমেছেন। প্রায় লাখখানেক কৃষক এই মুহূর্তে দিল্লির সীমানায় অবস্থান করছেন এই ঠান্ডায়, যার মধ্যে প্রায় হাজার কুড়ি মহিলাও রয়েছেন।দিল্লি অভিযানে বাধার সম্মুখীন হতে পারে বা সময় লাগতে পারে সেই চিন্তা করে প্রায় ছমাসের খাবার পর্যন্ত তাঁরা সঙ্গে নিয়ে এসেছেন।
কেন্দ্র সরকার এই বিক্ষোভের আঁচ পেয়ে আগে থেকেই বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে রেখেছিল। কেন্দ্রের অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশ দিয়ে গোটা দিল্লির সীমানা সিল করে দেওয়া হয়। সেসবও কাজে আসবেনা বুঝে একাধিক জায়গায় রাস্তার ওপর সিমেন্টের ব্লক বানিয়ে রাস্তা আটকে দেওয়া হয়।কৃষকদের আটক করে রাখার জন্য দিল্লির তিনটি স্টেডিয়ামকে অস্থায়ী জেল বানানোর জন্য কেজরিওয়াল সরকারের কাছে আবেদন করে কেন্দ্র। তবে সেই আবেদন নাকচ করে দেন কেজরিওয়াল।
এই কৃষক আন্দোলনের মধ্যেই একাধিক ছবি নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এক আন্দোলনকারী যুবক নিজের ট্রাক্টরের ওপর থেকে লাফিয়ে জলকামানের জল বন্ধ করে নিজের ট্রাক্টরে ফেরত আসেন। নিজের সহ আন্দোলনকারীদের জন্য এই ঝুঁকি নিয়ে কার্যত নেট দুনিয়ায় হিরো হয়ে গেছেন ওই যুবক। পাশাপাশি লাঠি চার্জ করা এক পুলিশ কর্মীর জন্য রুটি নিয়ে যাওয়া এক কৃষকের ছবিও নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়। এই ছবিই আজ গোটা দেশের সামনে কৃষকদের অবদানের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।
এরই মধ্যে আন্দোলনের তীব্রতা বুঝে ইতোমধ্যে কেন্দ্র ডিসেম্বরের তিন তারিখ আলোচনার জন্য দিন ধার্য্য করেন। তবে কৃষক নেতাদের কথায় এর আগেও আলোচনা করা হলেও তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এর একমাত্র সমাধান এই কৃষি বিল প্রত্যাহার করা। তবে তাঁরা আলোচনার দরজা বন্ধ করছেন না। তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বৈঠকের দিন ঠিক করবেন বলে জানিয়েছেন। ইতোমধ্যেই আন্দোলনকারী কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে তামাম বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। ইতিপূর্বে মহারাষ্ট্রে সিপিআই-সিপিআইএমের নেতৃত্বে কৃষক লংমার্চ জাতীয় রাজনীতিতে বড় ছাপ ফেলে গেছিল। এবারও সেই বাম দলগুলির কৃষক সংগঠনগুলিই কার্যত এই আন্দোলনের মুখ।
তবে শাসক দলও থেমে নেই। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর জানান এই আন্দোলন সম্পুর্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ন। ঠিক এমনটাই প্রথমে বলেছিলেন অমিত শাহ কিন্তু তাঁর পরেই বিক্ষোভ আরও জোরালো হওয়ার আঁচ পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে ঘুরিয়ে নিয়েছেন কথা। বলেছেন, ‘ আন্দোলনের পেছনে রাজনৈতিক মদত আছে এমনটা আমি বলিনি। আমি বলেছি কৃষি আইন সম্পর্কে ভুল বোঝানো হচ্ছে কৃষকদের। আইনের খুঁটিনাটি তাঁরা বুঝতে পারছেননা।” নাছোড়বান্দা কৃষকদের একটাই দাবি, প্রত্যাহার করতে হবে কৃষি আইন।