অশ্লেষা চৌধুরী: পার্শ্ব শিক্ষকদের নবান্ন অভিযান ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়াল সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে। পার্শ্বশিক্ষক ও পুলিশের ধস্তাধস্তিতে আহত উভয় পক্ষেরই বেশ কয়েকজন। ঘটনায় আটক বেশ কয়েকজন পার্শ্বশিক্ষক।বেতন কাঠামো চালু-সহ একাধিক দাবী তুলে নবান্ন অভিযানের ডাক দেয় পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চ। মিছিল ও অভিযানের সমস্ত পারমিশন থাকলেও মিছিলের শুরুতেই কড়া প্রহরীর রূপে অবতীর্ণ হন পুলিশ প্রশাসন। স্টিলের ব্যারিকেড, গার্ড ওয়াল, জল কামান সবকিছুর ব্যবস্থাই করা হয় পার্শ্বশিক্ষকদের আপ্যায়ণের জন্য।
এদিন দুপুর ১২টায় পার্শ্ব শিক্ষকদের নবান্ন অভিযানের কথা ছিল। কিন্তু মিছিলের শুরুতেই তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ৷ বাধা প্রাপ্ত হয়ে তারা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে বসে পড়েন ধর্না অবস্থানে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয় দুপুর দেড়টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর সাথে তাঁদের দেখা করিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা করা হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হলেও কোনও আশার আলো দেখতে পান না পার্শ্ব শিক্ষকেরা। এরপরেই দুপুর আড়াইটে নাগাদ যখন পার্শ্বশিক্ষকরা পুলিশের ব্যারিকেড সরিয়ে বিধানসভার দিকে এগোতে চান, তখনই সূচনা হয় গণ্ডগোলের। দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। ক্রমেই রণক্ষেত্রের রূপ নেয় সমগ্র এলাকা। শিক্ষক-শিক্ষিকার ভেদাভেদ না দেখেই পুলিশ লাঠি চার্জ করে বলে অভিযোগ ওঠে। এমনকি ছেলে পুলিশই পার্শ্ব শিক্ষিকাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় বলেও অভিযোগ ওঠে। তাঁর পায়ে আঘাত লাগে। আরও এক শিক্ষিকা অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশের কাছে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করার আবেদন জানালেও পুলিশ তাতে কর্ণপাত করে না বলেই অভিযোগ।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করে বলেন, “পুলিশ নির্মমভাবে আমাদের উপর লাঠিচার্জ করে। বুকে মারে।” বেশ কয়েকজন অসুস্থও হয়ে পড়েন। অসুস্থ এক পার্শ্ব শিক্ষক বলেন, “আমরা ন্যায্য দাবীতেই এই কর্মসূচি ডেকেছিলাম। আমরা ছেলে মেয়ের মুখে খাবার তুলে দিতে পারি না। মা-বাবার চিকিৎসা করাতে পারি না। অথচ মুখ্যমন্ত্রী আমাদের দাবী দাওয়া নিয়ে কোনও সহানুভূতিই দেখান না। উল্টে রাজ্যের পুলিশ আমাদের উপর এভাবে লাঠি চালাল।” আন্দোলনকারীদের আরও একজন জানান, “আমরা তো অন্যায় কিছু চাইনি।আমরা ন্যায়সঙ্গত ভাবেই আন্দোলন করছি। এত কম বেতনে আমরা কি অনাহারে মারা যাব? ওনার(মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) সঙ্গে একটু দেখা করতে চেয়েছিলাম উনি সেটাও শুনলেন না!” এদিন শতাধিক পার্শ্ব শিক্ষকদের আটক করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে এবং আটকদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবী জানিয়েছেন পার্শ্বশিক্ষকেরা।
নিজেদের দুর্দশার কথা জানিয়ে কদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজেদের রক্ত দিয়ে চিঠি লেখেন আন্দোলনকারীরা। চিঠিতে কেউ লিখেছিলেন ‘দিদি আমাদের বাঁচান’, তো কারও কাগজ লাল হয়েছে ‘ভাতা নয়, দিদি বেতন চাই’ বার্তায়। আবার কারও দাবী, ‘দিদি, বেতন কাঠামো দিন।’ ‘দিদি, আমার পরিবারকে রক্ষা করুন’ ও লেখা রক্ত দিয়ে। সেইসময়ই দাবী পূরণ না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটার ইঙ্গিতও দিয়েছেন তাঁরা। উল্লেখ্য় নবান্ন অভিযানের আগে ৫০ দিন ধরে বকাশ ভবনের সামনে ধর্না অবস্থান করছে পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চ। প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করেই তারা এই অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন।
জানুয়ারি মাসেই আত্মঘাতী হয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের পার্শ্বশিক্ষক ৫০ বছর বয়সী দুলাল চন্দ্র দে । পার্শ্বশিক্ষকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ভগীরথ ঘোষ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী ধীরে ধীরে পার্শ্বশিক্ষকদের স্থায়ীকরণ ও বেতনক্রমে আনার আশ্বাস দিয়েছিলেন। আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ভগীরথ ঘোষের আক্ষেপ, পার্শ্বশিক্ষকরা বেতনের নামে যে টাকা পান তাতে সংসার চলে না। প্রাথমিকে ৮,৮০০ টাকা ও উচ্চ প্রাথমিকে ১১,৩০০ টাকা মেলে। এতে এই বাজারে পরিবারের পাশে দাঁড়ানো মুশকিল।