পলাশ খাঁ, গোয়ালতোড় :- এযেন ঠিক রুপকথার গল্পের রাজপুত্র যিনি ফুলের গন্ধে ঘুমিয়ে পড়েন আবার ফুলের গন্ধেই জেগে উঠেন। ফুলের এই নেশা থেকেই এলাকার রেঞ্জ অফিসার থেকে হয়ে উঠেছেন ‘ফুলবাবু’। এই ফুলবাবু হলেন রুপনারায়ন বনবিভাগের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনীর ভাদুতলা রেঞ্জ অফিসের রেঞ্জার পাপন মহন্ত। যিনি ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল, বালতি সহ অব্যবহৃত প্লাস্টিকের জিনিস দিয়ে সাজিয়েছেন পুরো অফিস চত্বর। তাতে লাগানো রয়েছে রংবেরঙের ফুল, পাতা বাহারের গাছ। যা দেখলে মনে হবে এটি রেঞ্জ অফিস নয়, কোনো শিশু উদ্যান। আর জঙ্গলমহলের এই রেঞ্জ অফিসার তার এই কর্মকান্ডের জন্য হয়ে উঠেছেন সহকর্মী ও এলাকাবাসীর কাছে ফুলবাবু। ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের এই পুন:ব্যবহার এক দিকে যেমন পরিবেশ দুষনের থেকে মুক্তি ঘটাচ্ছে অপর দিকে সারা বিশ্বকে পথ দেখিয়েছেন তরুণ এই বনকর্মী। শুধু ভাদুতলা নয় এর আগে পিড়াকাটা রেঞ্জ অফিসের দায়িত্বে থাকার সময়ও তিনি একই কাজ করেছিলেন।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটি বাড়িতেই কিছু না কিছু বর্জ পদার্থ জমে। সেগুলো হয় ডাস্টবিনে নয়তো পুরসভার ময়লা সংগ্রহকারীকে দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু গ্রামের দিকে সেই অব্যবহৃত বর্জ্য গুলি যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হয়৷ সেই বর্জ্য পদার্থ গুলির মধ্যে কিছু পচনশীল জিনিস থাকে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। আর থাকে কিছু অপচনশীল পদার্থ। যা মাটিতে দিনের পর দিন পড়ে থাকলেও নষ্ট হয় না। তার মধ্যে একটি হলো প্লাস্টিক। এই পৃাথিবী সবচেয়ে বড় শত্রু হলো প্লাস্টিক। যা কখনই নষ্ট হয় না, আর এই প্লাস্টিক চুপিসারে সর্বনাশ করে দিচ্ছে এই ধরিত্রীর।দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন ব্যবহারকারী সমস্ত ধরনের প্লাস্টিকের ব্যাবহার বন্ধ হবে ভারতে ।
কিন্তু তাতেই কি দুষণ বন্ধ হয়ে যাবে? এত বছর ধরে ব্যবহার হয়ে যাওয়া যে প্লাস্টিকের সামগ্রী ধরিত্রীর বুকে জমে আছে তার পরিমাণও কম নয়। সেই ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ক্ষতির পরিমাণও বিপুল। তার উপর আড়ালে আবডালে চলছে এখনো প্লাস্টিকের ব্যবহার। এমন কিছু কিছু জিনিস রয়েছে যা প্লাস্টিকের বোতলেই এখনোও ক্রেতার কাছে পোঁছায়। ঠান্ডা পানীয় সহ জলের বোতল এমন কি সরকারী অনুমোদিত বাঙলা মদের প্লাস্টিকের বোতল প্রতিদিন বিপুল পরিমাণে ব্যবহার হচ্ছে। যার ক্ষতির পরিমাণ কম নয়। এই অব্যবহৃত প্লাস্টিকের ওয়েস্ট ম্যনেজমেন্ট করার তিনটে উপায় রয়েছে যে জিনিসের বর্জ ক্ষতিকারক তা কম ব্যবহার করা, পুনর্ব্যবহার করা। সেই কাজটিই করে বিশ্ববাসীর কাছে নজির সৃষ্টি করছেন জঙ্গলমহলের এক বনকর্মী।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ভাদুতলা রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার পাপন মহন্ত। তিনি তাঁর এলাকায় পড়ে থাকা সমস্ত প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে এনে তাতেই ফুলের গাছ লাগিয়ে সাজিয়েছেন তার অফিস।এতে শুধু তার অফিসের শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে তা নয় তারচেয়েও বড় ব্যাপার এই প্লাস্টিক আর মিশেতে পারছেনা মাটির সঙ্গে । ৩৮ বছরের এই রেঞ্জারের পৃথিবীকে বাঁচানোর উদ্যোগ এখানেই থেমে থাকেনি। তিনি তার অফিস থেকে এলাকা, গ্রাম, আশেপাশের সব মানুষকে এই কাজে উদ্বুদ্ধ করে চলেছেন। তার এই উদ্যোগ সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের চোখ খুলে দিয়েছে। তাঁর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বন দপ্তরের উর্ধতন আধিকারিকরা। পাপন বাবুর কথায় ” আমরা সবাই যদি ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল থেকে ছোটখাটো কনটেনরে গাছ লাগিয়ে সাজিয়ে ফেলি আমাদের চারপাশ তাহলে প্লাস্টিক মুক্ত পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গে রঙবেরঙের ফুলে সাজানো বাড়ি, ঘর, ছাদ আর এলাকা পাব। যা শুধু নয়নাভিরামই হবে না চারপাশ থাকবে অক্সিজেনে পরিপূর্ণ। আর আমাদের কাজটাই তো হলো পরিবেশ রক্ষা করা, পৃথিবীর বুকে সবুজের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া। সেই কাজটাই আমি করে চলেছি। এই কাজে আমাকে সর্বতোভাবে সাহায্য করেছেন আমার সহকর্মীরা। তাদের সাহায্য এছাড়া এই উদ্যোগ সফল হতো না “।