ওয়েব ডেস্ক: প্রতিবছর রথের রশিতে টান দিতে প্রায় লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয় পুরীতে। জগন্নাথ মন্দিরের ইতিহাসে আজ অবধি কখনও রথ যাত্রা আয়োজনে বিঘ্ন ঘটে নি। কিন্তু এই বছরটি অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেকটাই আলাদা। দেশে ইতিমধ্যেই করোনা সংক্রমণ ৪ লক্ষ ছুঁই ছুঁই। এই পরিস্থিতিতে ভক্তদের সমাগমে সংক্রমণের আশঙ্কায় রথযাত্রা আয়োজনের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে শীর্ষ আদালত। কিন্তু সেবাইতদের কথায়, জগন্নাথ মন্দিরের ইতিহাসে আজ অবধি কখনও রথ যাত্রা আয়োজনে বাধা সৃষ্টি হয়নি।
পরিস্থিতি যেমনই হোক প্রাচীনকাল থেকেই রীতি মেনে প্রতি বছর এই উৎসব মন্দিরের সেবাইতদের পালন করতে হয়। কোনও কারণে রীতিতে বাধা এলে তা মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করে বলে। ফলে পরিস্থিতি যাই হোক জগন্নাথ দেবের রথ যাত্রার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়ে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন জমা দেন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের প্রধান সেবাইত জনার্দন পত্তযোশী মহাপাত্র। তার আবেদন, ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু নামক মহামারীর সময়ও পুরীর রথ যাত্রা উৎসব পালিত হয়েছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে ভক্তদের সমাগম বন্ধ করে অন্তত রথ যাত্রার অনুমতি দেওয়া হোক।
শীর্ষ আদালতের কাছে তার আবেদন, জগন্নাথ দেবের রথ যাত্রায় অংশ নিতে প্রতিবছর দেশ বিদেশ থেকে বহু ভক্তের সমাগম হয়। কিন্তু এবছর সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কায় তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়৷ ফলে রথযাত্রা একেবারে বন্ধ না করে জনসাধারণের উপস্থিতি ছাড়া মন্দির কর্তৃপক্ষকে ‘আর্থ মুভার্স’ এর সাহায্যে আগামী ২৩ জুন রথ যাত্রা ও তার সঙ্গে যুক্ত রীতিনীতি পালন করার অনুমোদন দেওয়া হোক। পাশাপাশি, পুরীর বাসিন্দা এবং দেশ-বিদেশের লক্ষাধিক ভক্তবৃন্দের কথা মাথায় রেখে টেলিভিশনের পর্দায় রথ যাত্রার সরাসরি সম্প্রচারের অনুরোধও জানানো হয়।
পুরীর মন্দিরের প্রধান সেবাইত জনার্দন পত্তযোশী মহাপাত্র শীর্ষ আদালতকে প্রস্তাব দেন, “যদি রথ যাত্রার দিন কারফিউ জারি করে ‘আর্থ মুভার্স’-এর সাহায্যে জগন্নাথ মন্দির থেকে গুন্ডিচা মন্দির পর্যন্ত রথটেনে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা যায়, তবে এক ঘণ্টারও কম সময়ে এই ২.৮ কিমি পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব। জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য উৎসব পুরোপুরি বন্ধ রাখার প্রয়োজন নেই।”
এদিকে দেশে ইতিমধ্যেই করোনা সংক্রমণ বিপুল আকার ধারণ করেছে৷ এর মধ্যে জগন্নাথ দেবের রথ যাত্রার আয়োজন হলে স্বাভাবিকভাবেই প্রচুর ভক্তদের সমাগম হবে। এর জেরে করোনা সংক্রমণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কায় এ বছর পুরীর জগন্নাথ মন্দির-সহ ওড়িশার সমস্ত মন্দিরে রথ যাত্রা উৎসবে স্থগিতাদেশ জারি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে সুপ্রিমকোর্টের নিষেধাজ্ঞা জারি করার আগেই ওড়িশা বিকাশ পরিষদ নামে এক এনজিওর তরফে দিল্লির নিজামুদ্দিনের সমাবেশ থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর উদাহরণ দিয়ে জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তার স্বার্থে আদালতে রথ যাত্রা বন্ধ করার আবেদন করা হয়। এরপরই মানুষের স্বার্থে এবছর পুরীর মন্দিরে জগন্নাথ দেবের রথ যাত্রা বন্ধের নির্দেশ দেন শীর্ষ আদালত।