নিজস্ব সংবাদদাতা: কসবা কাণ্ডের জেরে রাজ্য জুড়ে সতর্ক স্বাস্থ্য দপ্তর ও পুলিশ। কোথায় কোথায় অনুমতি ছাড়া করোনা টিকাকরন কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে শুরু হয়েছে তার ওপর নজরদারি। পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর শহরে এরকমই এক টিকাকরনের উদ্যোগ নেওয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিককে গ্রেপ্তার করল খড়গপুর টাউন থানার পুলিশ। জানা গেছে আগামীকাল অর্থাৎ সোমবার এই টিকাকরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল যার জন্য টাকা দিয়ে নাম নথিভুক্ত করেছিলেন অনেকেই। অভিযোগ করোনা ভ্যাকসিন বা টিকা বাবদ ঘোষিত মূল্যের চেয়েও বেশি টাকাও নেওয়া হচ্ছিল যা রশিদে দেখানো হচ্ছিলনা। সেরকম কিছু রশিদও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
পুলিশের কাছে প্রথমে এই অভিযোগ আসে যে ওই ডায়গনস্টিক সেন্টারটি টিকাকরন বাবদ যা মূল্য নিজেই ঘোষণা করেছে বাস্তবে তার চেয়ে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে অথচ সেই টাকার রশিদ না দিয়ে কম করে মূল্য লেখা হচ্ছে রশিদে।
এরকমই বেশ কয়েকটি অভিযোগ পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। রবিবার বিকালে খড়গপুর মহকুমা শাসক(SDO) আজমল হোসেন এবং খড়গপুর মহকুমা পুলিশ শাসক (SDPO) দীপক সরকারের নেতৃত্বে শহরের মালঞ্চ রোডের অভিযান চালানো হয় অ্যাপোলো ডায়গনস্টিক সেন্টার নামক ওই প্রতিষ্ঠানটিতে। ওখান থেকেই আটক করা হয় এই ডায়গনস্টিক সেন্টারের অন্যতম কর্মকর্তাকে যাকে পরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এছাড়াও আরও ২জন কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে। এখান থেকেই পাওয়া যায় প্রচুর রশিদ ও নগদ প্রায় ৭৭হাজার টাকা যা বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
খড়গপুর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ধৃত ব্যক্তির নাম আবির বন্দ্যোপাধ্যায়। আবির খড়গপুর শহরের সুভাষপল্লী এলাকার বাসিন্দা। আরও জানা গেছে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ জানিয়েছিলেন খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ ছিল স্বাস্থ্য দপ্তরের কোনও অনুমতি ছাড়াই এই কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে এবং এই জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে। এবং সরকারের নির্ধারিত মূল্যের অনেক বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য সরকার বেসরকারি ক্ষেত্রে টিকার মূল্য নির্ধারণ করেছেন ৭৮০ টাকা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ১১৫০টাকা করে নিচ্ছিল। অথচ রশিদ দিচ্ছিল ৭৮০টাকারই।
অভিযোগ আরও যে টিকাকরন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছিল অ্যাপোলো ডায়গনস্টিক সেন্টারের নামে অথচ রশিদ দেওয়া হচ্ছিল এস এন্ড আর নামের একটি সংস্থার। খড়গপুর মহকুমা শাসক আজমল হোসেন জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য দপ্তরের অনুমতি তো ছিলইনা পাশাপাশি টিকাকরনের কর্মসূচি চালানোর মত উপযুক্ত পরিকাঠামো ছিলনা। মহকুমা শাসক (SDO) জানান, ‘এই তিনি বলেন এই ধরনের কর্মসূচি নিতে গেলে প্রথমে স্বাস্থ্য দপ্তরকে জানাতে হবে। স্বাস্থ্য কর্তারা ওই টিকাকরন কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। তাঁদের সম্মতি পাওয়া গেলে তবেই করা যাবে। এক্ষেত্রে সে সব কিছুই করা হয়নি। ”
জানা গেছে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা খড়গপুর মহকুমা সরকারি স্বাস্থ্য আধিকারিক অথবা খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার কোনও স্তরেই এই বিষয়টা অবগত ছিলেননা। এসব অনুমতি পাওয়ার পর পুলিশেরও অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন ছিল কারন পুলিশের অনুমতি ছাড়া করোনা কালে জমায়েত, শিবির ইত্যাদি করা যায়না। কিন্তু কোনও স্তরেই অনুমতি নেওয়া হয়নি। এই সব অভিযোগের ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিপর্যয় মোকাবিলা আইন ও জালিয়াতি প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।