নিজস্ব সংবাদদাতা: ১৯৯৮ সাল থেকে তৃনমুলে থাকা সবংয়ের সিংহভাগ তৃনমূল নেতা আর কর্মী যোগ দিলেন বিজেপিতে। গত ১৯ডিসেম্বর মেদিনীপুরে যোগ দিয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং তৃনমূলের প্রবীণ নেতা তথা জেলা পরিষদ কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি আর বুধবার প্রায় পুরো আদি তৃণমূলটাই চলে গেল বিজেপিতে। এদিন সবংয়ের প্রাক্তন তৃনমূল ব্লক সভাপতি তথা বর্তমান জেলা সহ সভাপতি প্রভাত মাইতি ( সভায় ছিলেন না, তবে তালিকায় নাম রয়েছে।) জেলা তৃনমূল যুবর সাধারণ সম্পাদক শেখর মাইতি, সবং ব্লক তৃনমূল সংখ্যালঘু সেলের প্রেসিডেন্ট রফিক আলি সায়াদ, সবং অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক সেক মুন্না আলি সহ একগুচ্ছ নেতা যোগ দিলেন বিজেপিতে।
বুধবার সবংয়ে শুভেন্দু অধিকারীর জনসভা থেকে মোট ৪৬জন তৃনমূল নেতৃত্বের নাম প্রকাশ করা হয়েছে যাঁরা তৃনমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। সবংয়ের ১৩টি অঞ্চলের এই ৪৬জন নেতার অনুগত প্রায় ৭ হাজার কর্মী সমর্থক রয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।
যদিও এর বাইরে রয়ে গেছেন শীর্ষ তৃনমূল নেতাদের একাংশ যাঁরা আইনি কারনে প্রকাশ্যে দল ত্যাগ করেননি কিন্তু মনে মনে বিজেপিতে চলে গেছেন। যেমন সবং পঞ্চায়েত সমিতির সহসভাপতি গুরুপদ, শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ পার্থ প্রতিম মাইতি, খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ অশোক চিনি। তবে জন স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ মাধব পাত্র আগেই বিজেপিতে চলে গেছিলেন।
এখন সবং তৃণমূলের আদি নেতৃত্ব হিসাবে যাঁরা থেকে গেলেন তাঁরা হলেন কৃষি কর্মাধ্যক্ষ তরুন মিশ্র, বিষ্ণুপুর অঞ্চল সভাপতি গণেশ প্রামানিক এবং নারানবাড় অঞ্চল সভাপতি অমর মাইতি। যদিও এই তিনজনের এলাকা থেকেই ব্যাপক মানুষ শুভেন্দুর তেমাথানির জনসভায় এসেছিলেন বিশেষ করে তরুণ মিশ্রর ভেমুয়া অঞ্চল থেকে ভাল ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
বিজেপির নিজস্ব শক্তির সঙ্গে আদি তৃনমূলের এই শক্তি যুক্ত হয়ে যাওয়ায় বর্তমান তৃনমূলের ‘ভোট করানোর’ মেশিনারি জোর ধাক্কা খাবে এ ব্যাপারে কোনোও সন্দেহ নেই। মানস ভূঁইয়া তৃনমূলে যোগ দেওয়ার পর সবং বিধানসভায় ৫০হাজারের বেশি ভোটে উপ নির্বাচন জিতেছিলেন গীতা ভূইঁয়া যে ভোটটা কার্যত লুট করেছিল তৃনমূল এমনই অভিযোগ ছিল বিজেপি এবং সিপিএম দু’তরফেই। সেই ভোটের সেনাপতি শুভেন্দু অধিকারী এদিন স্বীকার করে নিয়েছেন সেই ভোট লুটের কথা। বলেছেন, ‘সত্যিকারের ভোট হলে গীতা ভূইঁয়া হারতেন। কেমন ভোট হয়েছিল?
শুভেন্দু ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন এলাকার পর এলাকায় মানুষকে ঘরে থাকতে বাধ্য করে ছাপ্পা দিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের শুভেন্দু বাহিনী। এই বাহিনী এবার পাবেনা সবং তৃনমূল। এমতাবস্থায় সবং তৃনমূলের একমাত্র ভরসা সিপিএমের সংগঠন। বর্তমান সবং তৃনমূলের এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, “গতবার কিছুটা হলেও মানস ভূঁইয়ার ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারনে কংগ্রেসের ভোট পাওয়া গেছিল এবার সেটা পাওয়া যাবেনা কারন কংগ্রেস এবার হারানো আসন পেতে মরিয়া। তাছাড়া মানস ভূঁইয়ার ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেকটাই। এলাকায় কংগ্রেসের সংগঠন বলতে তেমন কিছুই নেই তবে সিপিএমের সংগঠন জোরদার। ওদের ভালো ভোট রয়েছে। সেই ভোটটা যদি সিপিএম ধরে রাখে তাহলে আমাদের লাভ হবে কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নিচু তলার সিপিএম সমর্থকরা পার্টির নির্দেশ মানবে কী?”
প্রবীণ নেতার বক্তব্য, ” যদি সিপিএমের প্রতীকে লড়াই হত অর্থাৎ সিপিএম প্রার্থী দিত তাহলে প্রতীকে নির্দ্বিধায় ভোট দিতেন সিপিএম সমর্থকরা। কিন্তু কংগ্রেস প্রতীকে ভোট তাঁরা দেবেন কিনা সন্দেহ রয়েছে। একবার তাঁরা কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে ঠকেছেন। অন্যদিকে তৃনমূল যেমন শুভেন্দুকে মীরজাফর বলছে ঠিক তেমনি সবংয়ে সিপিএম-কংগ্রেসের কাছেও মানস ভূঁইয়া মীরজাফর। ফলে শুধু মানস ভূঁইয়াকেই বা তাঁর নেতৃত্বকে হারানোর জন্যই যদি সিপিএমের নীচু তলার সমর্থকরা বিজেপিকে ভোট দেয় তবে অবাক হবার কিছু নেই। আর সেক্ষেত্রে তৃনমূলকে বাঁচানো কার্যত অসম্ভব। এখন তাই একটাই কামনা করছি যে সিপিএমের ঘরের ভোটটা ঘরে থাক।” এখন দেখার এটাই যে, ২০১৬ সালের নির্বাচনে সরাসরি না হলেও ঘুরিয়ে সিপিএম মানস ভূঁইয়াকে সুযোগ করে দেয় কিনা!