Homeরাজ্যউত্তরবঙ্গসম্পত্তি না পেয়ে মাকেই বাড়ী থেকে বের করে দিল গুণধর ছেলে! প্রবল...

সম্পত্তি না পেয়ে মাকেই বাড়ী থেকে বের করে দিল গুণধর ছেলে! প্রবল শীতে খোলা আকাশের নীচেই রাত কাটল অসহায় বৃদ্ধার

আশ্লেষা চৌধুরী : শীতের রাতে গর্ভধারিণী মাকে বাড়ী থেকে বের করে দিল ছেলে-বৌমা।, মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জে। অসহায় ওই বৃদ্ধার নাম আরতি দাস।জানা গিয়েছে, লোকের বাড়ীতে কাজ করে নিজের প্রতিপালন করেন আরতি দাস। বয়স তাঁর ৬৭ বছর।

বৃদ্ধার ছেলে-বৌমা আছে, কিন্তু নামেই। মায়ের দেখাশোনা তো দুরস্ত, উল্টে মায়ের ওপর দিন-রাত চলে অকথ্য অত্যাচার। আরতি দেবীর শেষ সম্বল বলতে কেবল নিজের বাড়ীটি, কিন্তু সেই বাড়ীও ছেলে হাতিয়ে নিতে চায়। তার জন্য মায়ের ওপর চলে অকথ্য অত্যাচার। কিন্তু ছেলের হাজার অত্যাচার সহ্য করেও বাড়ী লিখে দেননি আরতি দেবী। আর তাই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে ছেলে বৌমা। অত্যাচারের মাত্রা অতিক্রম করে চরম সীমা। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার বৃদ্ধা মা কে মারধর করে বাড়ী থেকে বের করে দেয় তারা। শীতের রাতে অভুক্ত অসহায় মা আরতির ঠাঁই হয় ফুটপাতে। অভুক্ত অবস্থায় সারা রাত কাটে সেখানেই। শুক্রবার সকালে স্থানীয়রা উঠে দেখতে পান এই চরম অমানবিক দৃশ্য। তারা পুলিশে অভিযোগ জানিয়ে বৃদ্ধাকে রায়গঞ্জ মেডিকেলে ভর্তি করার ব্যবস্থা করেন। ঘটনার পর থেকেই পলাতক অভিযুক্ত ছেলে ও বৌমা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রায়গঞ্জ শহরের শক্তিনগর এলাকায় একমাত্র ছেলে নারায়ণ দাস ও তাঁর স্ত্রী ষষ্ঠী দাসকে সঙ্গে নিয়ে বসবাস ওই বৃদ্ধার। বৃদ্ধা হলেও মানুষের বাড়ীতে পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালাতেন তিনি; সৌজন্যে ছেলে ও ছেলের বৌ। বৃদ্ধার অবলম্বন দেড় কাঠা জমির ওপর সেই সেই বসত বাড়ীটিই। তবে অনেকদিন ধরেই সেটা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলতে থাকে। নিজের নামে লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে বৌমা ও ছেলে। কিন্তু আরতি দেবী রাজি না হওয়ায় তাঁকে প্রায়ই মারধর করা হত বলে অভিযোগ। বিষয়টি একাধিকবার স্থানীয় কাউন্সিলারকে জানানো হয় এবং মা-ছেলের গোলমাল মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করা হয়। ছেলেকে রায়গঞ্জ পুরসভায় অস্থায়ী সাফাইকর্মী পদে নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত জট পেকে রয়েছে, বের হয়নি সমাধান সূত্র।

এরপর বৃহস্পতিবার রাতে বিবাদ চরমে ওঠে। মাকে বাড়ী নিজের নামে লিখে দিতে এক নাগারে চাপ সৃষ্টি করেন গুণধর ছেলে ও বৌমা । তাতেও কাজ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত রাতে ছেলে ও বৌমা বাড়ী থেকে বের করে দেয় মাকে। ঠান্ডায় ফুটপাথে রাত কাটে ওই বৃদ্ধার। শুক্রবার সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা রায়গঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করেন ওই বৃদ্ধাকে। বৃদ্ধা আরতি দাস বলেন, ‘কত কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছি। আজ ছেলের কাছেই ব্রাত্য আমি। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কী হতে পারে! জীবনের শেষ বেলায় এসে ছেলে বৌমার হাতে এই পরিণতি হবে ভাবতেও পারিনি।‘

স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলার বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আরতি দাস মানুষের বাড়ীতে পরিচারিকার কাজ করেন। পুরসভার তরফে বার্ধক্য ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। ছেলে নারায়ণ দাস ব্রাউন সুগারে আসক্ত। এর আগে নেশা মুক্তি কেন্দ্রে ছেলেকে ভর্তি করে সুস্থ করা হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী ও শাশুড়ি মিলে ওই বৃদ্ধাকে মারধর করেছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। অভিযোগ পেয়ে তৎপর হয়েছে রায়গঞ্জ থানার পুলিশ।‘ পুলিশ সূত্রে খবর, মারধরের ঘটনায় ছেলে নারায়ণ দাস, বৌমা ষষ্ঠী দাসের সাথে ছেলের শাশুড়ি সারথি দাসও জড়িত রয়েছেন। তবে ঘটনার পর থেকে গুণধর ছেলে আর বৌমাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

RELATED ARTICLES

Most Popular