নিজস্ব সংবাদদাতা: ভয়ঙ্কর বজ্রপাতের ঘটনায় মৃত্যু হল একটি দাঁতালের। কয়েক মিটারের হেরফের হওয়ায় বেঁচে গেল সঙ্গি আরেকটি দাঁতাল। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে জলদাপাড়া অভয়ারন্যে। ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে বনকর্মীদের মধ্যে। জানা গেছে প্রায় বনকর্মীদের চোখের সামনে ঘটনাটি ঘটেছে কারন ওই সময় হাতি দুটিকে একটি জনবসতি লাগোয়া ভুট্টা ক্ষেত থেকে সরিয়ে বনকর্মীরা জঙ্গলের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
ঘটনাটি ঘটেছে, সোমবার গভীর রাতে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন খাঁউচাঁদপাড়া গ্রামে। রাতের দিকে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান থেকে খাবারের সন্ধানে দলছুট হয়ে বেরিয়ে পড়ে দাঁতাল দুটি এবং প্রবেশ করে খাঁউচাঁদপাড়া গ্রাম লাগোয়া ভুট্টা ক্ষেতে। ভুট্টা সহ গাছ খেতে শুরু করে হাতি দুটি। ব্যাপক ফসলের ক্ষয়ক্ষতি সর্বস্ব হারানোর আশঙ্কায় জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষের কাছে হাতি দুটিকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য আকুতি প্রকাশ করেন গ্রামবাসীরা। খবর পাওয়া মাত্রই গ্রামবাসীদের আবেদনে সাড়া দিয়ে বনকর্মীদের একটি দলকে পাঠায় উদ্যান কর্তৃপক্ষ। যেহেতু মাত্র ২টি হাতি তাই তাঁদের জঙ্গলে ‘পুশ ব্যাক’ করার কাজটি সহজ হবে ভেবেই রাতের মধ্যেই কাজটি সেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারন দিনের বেলায় হাতি তাড়াতে গেলে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভবনা বেড়ে যায়। হাতি লোকালয়ে ঢুকে যেতেও পারে।
এদিকে আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস ছিল যে ২-৫ মে উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গে ব্যাপক বজ্রপাত ও বৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে। একদম সেই পূর্বাভাস মেনেই যেন ওই সময় জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায় প্রচন্ড পরিমানে বজ্রপাত হচ্ছিল। তারই মধ্যে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের কর্মীরা।
ওই হাতি দুটির এবং স্থানীয়দের কোনও ক্ষতি যাতে না হয়, তাই ভারী বৃষ্টি ও বজ্রপাতের মধ্যেই হাতি দুটিকে জঙ্গলে পুশব্যাক করতে শুরু করেন বনকর্মীরা।
বনকর্মীরা জানিয়েছেন হাতি দুটিকে ভুট্টা ক্ষেত থেকে তাড়িয়ে বের করে গ্রামের পাশ দিয়ে তারা জঙ্গলের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। গ্রাম ছাড়িয়ে জঙ্গলের প্রবেশের কিছুটা আগে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ পেরিয়ে যাওয়ার সময় ওই মাঠের মধ্যেই একটি ভয়ঙ্কর বজ্রপাত হয় একটি দাঁতলের ওপরই। ঘটনাস্থলে উপস্থিত বনকর্মীদের চোখের সামনেই ছটফট করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে দাঁতাল হাতিটি। মাত্র পাঁচ মিনিটেই মৃত্যু হয় দাঁতালটির। মাত্র কয়েক গজ এগিয়ে থাকা দাঁতালটি বেঁচে যায় এবং ভয়ার্ত চিৎকার করে জঙ্গলের দিকে ছুটে পালিয়ে যায়।
সারা রাত বনকর্মীরা হাতিটিকে ঘিরেই বসেছিলেন। মঙ্গলবার গাড়ি নিয়ে এসে ক্রেনের সাহায্যে হাতিটিকে জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয় ময়নাতদন্ত করার জন্য। উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণ শাখার মুখ্য বনপাল রাজেন্দ্র জাখর জানিয়েছেন, “ময়নাতদন্তের পর দেখা গিয়েছে হাতিটির হৃদযন্ত্রে রক্ত জমাট বেঁধে কালো হয়ে যাওয়ার দরুণ হাতিটির মৃত্যু হয়েছে। যার থেকে আমরা নিশ্চিত যে বজ্রপাতের কারনেই হাতিটির মৃত্যু হয়েছে।” পরে জঙ্গলেই দুটি বিশাল দাঁত সহ পুড়িয়ে দেওয়া হয় হাতির দেহ। এর আগে ২০০৭ সালেও বজ্রপাতে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে এক সঙ্গে পাঁচটি হাতির মৃত্যু হয়েছিল। ঘটনায় বেশ কয়েকজন বনকর্মীকে চোখের জল ফেলতে দেখা গিয়েছে।