নিজস্ব সংবাদদাতা: ঝাঁ ঝাঁ করে বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। আর এই আকাশ ছোঁয়া দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে রাজ্য সরকার গোঁ ধরে বসে রয়েছিলেন কর্মচারীদের ডি.এ দেবেননা বলে। এমন কি এই বিষয় নিয়ে রাজ্য সরকার আবেদন করেন স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল বা স্যাটের কাছে। জানায় করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের অর্থ ভাঁড়ারে যথেষ্ট টান রয়েছে। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু সেই আবেদন ধোপে টিকলনা। বকেয়া ডিএ দিতে হবে বলে আগেই যে রায় স্যাট দিয়েছিল সেখানেই অনড় রইল। সেই রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি বুধবার খারিজ করে স্যাট জানিয়ে দিল ডি.এ দিতেই হবে। হয়ে গেল।
বুধবার স্যাটের বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগ ও প্রশাসনিক সদস্য সুবেশকুমার দাস এই রায় দেন। ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু হলেও বকেয়া ডিএ দেওয়া হবে না বলে যে ঘোষণা রাজ্যের পক্ষে করা হয়েছিল তার পরে এই রায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের উপরে নিঃসন্দেহে বড় চাপ তৈরি করল। করোনা পরিস্থিতির জন্য আগামী দেড় বছর কেন্দ্র কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা বাড়াবে না বলে জানিয়েছে। তবে গত ১ জানুয়ারিতেই কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ৪ শতাংশ ডিএ ঘোষণা হয়। কেন্দ্রের ওই ডিএ বৃদ্ধির ফলে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা ২১ শতাংশে পৌঁছায় বলে দাবি বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠনের।
নতুন বছর থেকেই রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি হয়েছে। লাগু হয়েছে ষষ্ঠ বেতন কমিশন। বেতন বৃদ্ধি হলেও বকেয়া ডিএ নিয়ে সরকারের তরফে কিছু না বলায় যথেষ্ট ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকারি কর্মীরা। আর স্যাটে শুনানি চলাকালীন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত জানান, রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। এই পরিস্থিতিতে কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই সরকারের। বিভিন্ন সময়ে একই কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রীও। তিনি এমনটাও বলেন যে, “আমার পক্ষে আর দেওয়া সম্ভব নয়। তোমরা সবসময়ই এই দাও, ওই দাও করছ। সবটাই সরকার যেন বিনা পয়সায় করে দেবে! সরকারের টাকার অবস্থা ভাল নয়। চাইলেই টাকা পাওয়া যাবে না। প্রত্যেকটা খরচ আগে থেকে ভেবে করতে হবে। আট বছর আগে মাসের এক তারিখে মাইনে হত না। এখন হয়। আট বছরে গোটা রাজ্য ঘুরে দাঁড় করিয়ে দিয়েছি”।
২০১৯ সালের ২৬ জুলাই রাজ্য সরকারকে স্যাট নির্দেশ দিয়েছিল, পরবর্তী ছ’মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ দিতে হবে। রাজ্য সরকার তা না-দেওয়ায় সরকারি কর্মীদের সংগঠন স্যাটে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করে। রাজ্য পুনরায় স্যাটে রিভিউ পিটিশন দায়ের করে। গত ৩ মার্চ রিভিউ পিটিশনের শুনানি শেষ হয়। এদিন রায় ঘোষণা হল।
কেন্দ্রীয় হারে ডিএ বা মহার্ঘ ভাতার দাবি তুলে স্যাটে মামলা করেছিল কংগ্রেস সমর্থিত ‘কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্মেন্ট এমপ্লয়িজ়’ ছাড়াও আরও দু’টি সরকারি কর্মীদের সংগঠন। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্যাট যে রায় দিয়েছিল তাতে বলা হয়, ডিএ দেওয়া বা না -দেওয়া রাজ্যের ইচ্ছার উপরে নির্ভর করে। স্যাটের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় সরকারি কর্মচারিদের সংগঠন। এর পরে ২০১৮ সালের ৩১ অগস্ট কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত ও বিচারপতি শেখর ববি শরাফের ডিভিশন বেঞ্চ রায়ে বলে, ডিএ সরকারি কর্মীদের অধিকার। একই সঙ্গে মামলাটি পুনরায় স্যাটে ফিরিয়ে দিয়ে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ডিএ কীভাবে ও কী হারে দেওয়া হবে, তা বিচার করে স্যাট তিন মাসের মধ্যে জানাবে। রাজ্য সরকার ওই রায় পুনর্বিবেচনা করে দেখার জন্য একটি রিভিউ পিটিশন দাখিল করে ডিভিশন বেঞ্চে। গত বছরের ৭ মার্চ হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ টন্ডন ও বিচারপতি শেখর ববি শরাফের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের দায়ের করা রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দেয়।
এবার ফের রাজ্য সরকারকে জানিয়ে স্যাট জানিয়ে দিল, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ দিতেই হবে। এবার দেখার রাজ্য কী করে!