নিজস্ব সংবাদদাতা: বিয়ের ১৫ দিনের মাথায় অধ্যাপকের মৃত্যুর ঘটনায় নববধূ এবং নববধূর বাবাকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুরের আন্দিচক গ্রামের বাসিন্দা এবং নাড়াজল কলেজের এডুকেশনের অধ্যাপকের মৃত্যুকে ঘিরে এমনিতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। তার ওপর অধ্যাপকের নববধূ এবং তাঁর বাবাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় রহস্য ছড়িয়েছে এলাকায়। বুধবারই নববধূ ও তাঁর বাবাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ মেদিনীপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তুললে দুজনকেই ১৪দিনের জন্য বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃত ৩০ বছর বয়সী ওই অধ্যাপকের নাম প্রতিম মাইতি। অন্য দিকে গ্রেপ্তার হয়েছেন নববধূ ব্রততী মাইতি এবং নববধূর বাবা সুভাস চন্দ্র দে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ১৮ই জানুয়ারি বিয়ে হয়েছিল প্রতিম এবং ব্রততীর। অনলাইনে পাত্রপাত্রীর বিজ্ঞাপন মারফৎই সম্বন্ধ পাকা হয় দুজনের। ব্রততীর বাপের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলারই ডেবরা থানা এলাকার শালকাঠি গ্রামে।
সোমবার কেশপুরের বাড়িতে রাতে খাওয়া দাওয়া পর নিজেদের রুমে ঘুমোতে যান নব-দম্পত্তি। জানা গেছে ওইদিন গভীর রাতে শারীরিক অস্বস্তি এবং গোঁগানি শুরু প্রতিমের। অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এরপরই মৃত্যু নিয়ে শুরু হয় চাপান উতোর। প্রতিমের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় ব্রততীই শ্বাসরোধ করে খুন করেছে প্রতিমকে। প্রতিমের পরিবার এও দাবি করে যে , প্রতিমের কোনোও অসুস্থতা ছিলনা। এরকম তরতাজা যুবক কী করে অসুস্থ হয়ে পড়ল আর কেনই বা সে জিহ্বা বের করে মারা যাবে? প্রতিমের পরিবারের অভিযোগ নববধূ ব্রততীই খুন করেছে ।
প্রতিমের বাবা মানিক মাইতি বলেন, ‘বউমা প্রায়ই বলতো আমি এম টেক ইঞ্জিনিয়ার। আমি গ্রামে বাড়িতে থাকবো না। বাইরে চাকরি করবো। বাড়িতে চুড়িদার পরবো। ছেলে বউমাকে বোঝাতো, দুটো মাস অন্তত গ্রামে শাড়ি পরো, তারপর চুড়িদার পরলে পরবে। আমাদের অনুমান বউমাই আমার ছেলেকে শ্বাসরোধ করে মেরে দিয়েছে। ছেলের মৃত্যুর জন্য আইনানুগ ব্যবস্থার জন্য যা করতে হয় করবো।’
প্রতিমের মা পারুল বলেন, আমার সুস্থ শবল ছেলেকে মেরে দিল। রাতে খাবার খেয়ে দুজনে ঘুমোতে গেল। তারপর রাতে ছেলে জিভ বের করে মারা গেল। বউমাই আমার ছেলেকে মেরে দিল।ওর যাবজ্জীবন জেল চাই।
অন্যদিকে ব্রততীর দিদি শতাব্দী চৌধুরীর প্রতিমের মৃত্যুকে অস্বাভাবিক বলে দাবি করেছেন,”ঘটনার তদন্ত হোক। আমার বোনের উপর মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছে। ওদের দু’জনের সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। আমার বোন কোনোভাবেই একাজ করতে পারেনা। বোন খুব সহজ সরল।’
নববধূর মা, মৃতের শাশুড়ি ঝর্ণা দে বলেন, ‘সোমবার জামাইয়ের সঙ্গে কথাও হয়েছে। আমি মেয়েকে নিয়ে ওদের আসতেও বলেছি। বুধবার ওদের দুজনের আমাদের বাড়িতে আসার কথা। একটা বিড়ালকে মারলে আমার মেয়ে কান্নাকাটি করত। সে কখনো মারতে পারেনা। জামাই খুব ভালো। কিন্তু ওদের বাড়ির লোক ভালো নয়। মেয়ে প্রায়ই ফোন করে বলতো, বাড়ির কেউ ভালো ব্যবহার করতোনা। আমাদের খুব একটা পছন্দ ছিলনা। ছেলেটা ভালো বলেই মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম। মেয়ের কপালে যে এমন ছিল তা ভাবতেও পারিনি।’
এটা ঘটনা যে, যে কোনও কারণেই হোক ব্রততীর সঙ্গে প্রতিমের বাড়ির লোকেদের সম্পর্ক ভালো ছিলনা। প্রতিবেশিরা জানিয়েছে, ‘বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির সাথে নতুন বউয়ের কিছু সমস্যা চলছিল। যেমন তাঁর চুড়িদার পরা নিয়ে আপত্তি ছিল। অনেকে বলছেন, নতুন বউ অধিকাংশ সময় ফোনে ব্যস্ত থাকেন। কারোর সঙ্গে তেমন ভাবে কথাবার্তাও বলতেন না। আবার নবধূর অভিযোগ, শাশুড়ি,ভাসুর, জা কেউ তার সঙ্গে কথা বলতে চাইতেন না। এমনকি নববধূ কোনোকিছু রান্না করলে সেটা খেতেনও না তার ভাসুর। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এমটেক করা ব্রততীর সঙ্গে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেদের মানসিক মেলবন্ধন গড়ে ওঠার আগেই অধ্যাপকের এই ধোঁয়াশা জনিত মৃত্যু সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে। এরই মধ্যে প্রতিমের বাড়িতে থেকে ব্রততীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করায় পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ব্রততী এবং তাঁর বাবাকে।
যদিও পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “খুনের অভিযোগ আসার পরই ওঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে নিয়মমাফিক। আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া অবধি কিছু বলতে পারছিনা। সেই রিপোর্ট হাতে আসার পরই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে পারব।” আইন বিশেষজ্ঞদের ধারণা পুলিশ এই ঘটনায় এখনো অবধি ব্রততী বা তাঁর বাবাকে দোষি মনে করছেনা যদি করত তাহলে পুলিশ তাঁদের নিজেদের হেফাজতে চাইত আরও তদন্তের স্বার্থে। কারন ময়নাতদন্তের বাইরেও পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমাণাদি বলে একটি বিষয় থাকে। সেই ক্ষেত্রে সম্ভবত পুলিশ ওঁদের বিরুদ্ধে কিছু পায়নি।