নিজস্ব সংবাদদাতা: ‘বুয়া ভাতিজা বা পিসি-ভাইপো রাজ্যে উন্নয়ন চরম ভাবে পিছিয়ে পড়ছে। সেই উন্নয়নকে ফের লাইনে আনতে গেলে দরকার ডবল ইঞ্জিন। খোদ প্রধানমন্ত্রীও বলে ফেললেন ‘পিসি-ভাইপো’র সরকার আর সেই সরকারকে ফেলতে কৃষক আর যুবদের জন্য রেখে গেলেন এক ঝুড়ি প্রতিশ্রুতি। আর ২০২১য়ের মহারনে মমতা মন্ত্রীসভারই দুই সদ্য প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী আর রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ে রীতিমত আস্থা রেখে গেলেন তিনি।
হলদিয়ার হ্যালিপ্যাড ময়দানে আসন্ন বিধানসভার আগে বাংলায় প্রথম নির্বাচনী প্রচারে মোদি নজির বিহীন ভাবে একাধিকবার বুয়া-ভাতিজা (পিসি-ভাইপো)শব্দটি ব্যবহার করেছেন। রাজনৈতিক নেতাদের মত যা একজন প্রধানমন্ত্রীর মুখে উচ্চারিত হওয়ায় এটা প্রমান হয়ে গেছে যে বাংলা দখলে কতটা মরিয়া হয়ে আছেন নরেন্দ্র মোদি।
একবার বলেছেন, “‘সময় আর পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। পিসি-ভাইপোবাদকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিদায় দেওয়ার জন্য আপনারা প্রস্তুতি সেরে ফেলেছেন। তৃণমূলের নেতারাও পিসি-ভাইপোবাদে অতিষ্ঠ। তারা বাংলার সেবা করার জন্য উন্মুখ। তাই ওদের সঙ্গে রাম রাম করে এদিকে জয় শ্রীর রাম করতে এসেছেন।”
ফের একবার বলেছেন,’ পিসি-ভাইপো শাসনের শেষ সময় এসে গেছে।” এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পিসি-ভাইপো শাসনে কিভাবে বাংলা শিল্পে পিছিয়ে পড়েছে, দুর্নীতি বাংলায় গ্রাস করেছে এবং অত্যাচার, অপশাসন বাড়ছে তার উল্লেখ করেছেন রীতিমত নমুনা ধরে ধরে।
এরপরই তাঁর বক্তব্য, “বাংলার উন্নয়নের জন্য এখানেও ডাবল ইঞ্জিন সরকার প্রয়োজন। বিজেপি এলেই এখানে আসল পরিবরত্ন ঘটবে। পরিবর্তন কী তা ত্রিপুরার মানুষ অনুভব করছেন। ওখানেও বছরের পর বছর অত্যাচার সইছিলেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু আমারা পরিশ্রম বন্ধ করিনি। আজ দেখুন ওখানে কত উন্নয়ন ঘটেছে।”
প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, ‘বাংলার মানুষ ফুটবলপ্রেমী। সেই ভাষাতেই বলি, তৃণমূল একের পর এক ফাইল করেছেন, অপশাসন, বিরোধীদের উপর হিংসা, বাংলার মানুষের টাকা লুঠ এবং বিশ্বাসের উপর ফাউল। খুব শীঘ্র বাংলার মানুষ তৃণমূলকে রাম কার্ড দেখাতে চলেছেন। পিসি-ভাইপোর সরকারকতে উৎখাত করার পরিকল্পনা নিয়ে ফেলেছেন বাংলার মানুষ।’
আমফান নিয়ে রাজ্যের তৃনমূল নেতাদের দুর্নীতির স্মৃতি উসকে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এত বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ এল, ঘূর্ণিঝড়ের সময় অনেক টাকা দিয়েছিল কেন্দ্র। সেই টাকার জন্য আদালতকেও হস্তক্ষেপ করতে হয়। করোনার সময়ও কম বিপদ ছিল না। অনেক মানুষের রোজগার চলে গিয়েছিল। বাংলার মানুষের জন্য সেই সময় বিনামূল্যে রেশনের ব্যবস্থা করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু কেন্দ্রের রেশন এখানকার সরকার সঠিক ভাবে দরিদ্র মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারেনি।”
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “রাস্তায় রোজ খুন খারাপি হলে যুবকরা চাকরি পাবেন কী করে। উন্নতির কথা বললেই দিদি রেগে যান। ভারত মাতা কি জয় শুনলে রেগে যান। কিন্তু দেশবিরোধী মন্তব্যে কিছু যায় আসে না ওঁর।” তাঁর কথায় আজ বাংলায় দাঁড়িয়ে একটা প্রশ্ন করতে চাই। ব্রিটিশ শাসনের সময়ও পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে সবচেয়ে বিকশিত রাজ্য ছিল। পরিকাঠামো, বাণিজ্যে বাংলার মোকাবিলা করার মতো কেইউ ছিল না। বাংলার কৃষক খুব পরিশ্রমী। বাংলায় উন্নয়নের সেই গতি থমকে গেল কেন? এত বড় বড় বন্দর থাকতে অন্য রাজ্য বানিজ্যে বাংলাকে টপকে গেল কি ভাবে?” মোদি ফিরিয়ে এনেছেন চা বাগানের শ্রমিকদের দুর্দশার কথাও। বলেছেন, ” চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য ১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। বিশেষ করে মহিলা শ্রমিকরা সুবিধা পাবেন। তাঁদের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে। চা-বাগানের সঙ্গে যুক্ত সব পরিবারকে অভিনন্দন জানাই।
বক্তব্য শেষে এদিন সদ্য পদত্যাগী মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। রাজীবের সাথে এগিয়ে যান শুভেন্দু অধিকারীও। হলদিয়া সহ এই অঞ্চল যে শুভেন্দুর এলাকা সেটা আগে থেকেই জানতেন মোদি। রাজীব আর শুভেন্দুর পিঠ চাপড়ে দিয়েকয়েকটি কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী যা অবশ্য জনসমক্ষে শোনা যায়নি তবে বুঝতে অসুবিধা হয়না যে ২০২১ মহারনে এই দুই তরুণ সেনার ওপরেও ভরসা অগাধ মোদির।