নিজস্ব সংবাদদাতা: যেখানে মন্ত্রীদের হাত পেতে ঘুষ নিতে দেখা যায় সে মামলা যে সাধারণ হতে পারেনা তারই ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন বিচারপতিরা। আর সেই কারণেই আরও একদিন পিছিয়ে গেল নারদ মামলার শুনানি৷ আগামীকাল, শুক্রবার বেলা ১২টায ফের মামলার শুনানি হবে। এই প্রসঙ্গে বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘জামিন মঞ্জুর করলে, আজকেই গোটা মামলার নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। কিন্তু এটা সাধারণ মামলা নয়।’ফলত: এই ঘুষের মামলায় অভিযুক্ত ৪ নেতা-মন্ত্রী আপাতত মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বিধায়ক মদন মিত্র ও প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গৃহবন্দি থাকতে হচ্ছে, অন্ততঃ আরও ২৪ ঘন্টা।
তাঁদের জামিনের আবেদন নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে আবেদন করেছিলেন আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। আজ, বৃহস্পতিবার দুপুর ২টোয় শুরু হয় নারদ মামলার শুনানি৷ এদিন শুনানির শুরুতেই রাজ্যকে পার্টি করা হয়নি বলে আদালতে জানান অ্যাডভোক্যাট জেনারেল কিশোর দত্ত। পাল্টা আদালতে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানলেন ‘রাজ্যকে পার্টি করতে কোনও অসুবিধা নেই।’ এরপরই রাজ্যকে মামলায় পার্টি করার অনুমতি দেয় হাইকোর্ট।
এদিন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা কলকাতা হাইকোর্টের পাঁচ বিচারপতির কাছে প্রশ্ন করেন, “জনগণকে দিয়ে বিচার ব্যবস্থার উপর চাপ তৈরি করা হয়েছে৷ এই কৌশলের জন্য যদি আদালত কড়া পদক্ষেপ না নেয় তাহলে আগামী দিনে কোনও দুষ্কৃতী গ্রেফতার হলে এই জিনিস হবে। বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা হারাবে মানুষ।” অভিষেক মনু সিংভি তখন বলেন, ‘ জনরোষ জামিন বাতিলের কারণ হতে পারে না। তুষার মেহেতা যেসব প্রশ্ন তুলছেন তা পরেও আলোচনা হতে পারে। মেহেতা জামিন ছাড়া অন্য বিষয়ে কথা বলছেন। জামিনের দরজাটা তিনি বন্ধই রাখতে চাইছেন।’
এই বাদানুবাদের মধ্যেই বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘বিচারকের প্রভাবিত হওয়ার প্রমাণ না থাকলে আমরা কী করতে পারি?’ বিচারপতি বলেন, ‘দেশে প্রচুর হাই প্রোফাইল গ্রেফতারির ঘটনা ঘটে। সেখানেও মানুষের আবেগ আছে, মানুষের দুঃখ থাকে। কিন্তু প্রমাণ করতে হবে যে বিচারক তার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। সেটা না হলে এই উদাহরণ আপনাদের বিপরীতে যেতে পারে।’
উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্ৰধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল, বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন, বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়। এই মামলায় প্রথমে চারজনকেই জেলে পাঠানোর পর তাঁদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে গৃহবন্দি থাকতে বলা হয়েছে। তবে জামিন নাকচ হয়ে গেলে ফের তাঁদের জেলে যেতে হতে পারে। তাঁদের জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে সব দিক বিচার করে হাঁটতে হচ্ছে হাইকোর্টকে কারন জামিন হলেই তার বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে সিবিআই। যেখানে লালু প্রসাদ, জয়ললিতা কিংবা চিদাম্বরমের মত মানুষদের জেলে থাকতে হয়েছে বিচার চলাকালীন সেখানে এই নেতা মন্ত্রীরা কতটা হাই প্রোফাইল যে তাঁদের বাইরে রেখে মামলা চালাতে হবে এই প্রশ্ন উঠতে পারে তখন।