নিজস্ব সংবাদদাতা- যাকে বলে নিজে মরে অন্যদেরও মেরে ফেলা। নিজের অজান্তে তেমনটাই করে গেছেন সুন্দরী ভৌমিক। নিজে তো মারাই গেছেন সঙ্গে যেন মেরে গেছেন ছেলে বউ সমেত গোটা পরিবারটাকেই। হাড়ে হাড়ে সুন্দরীর পরিবার টের পাচ্ছেন দেখে শুনেও মরতে হয় আর তা নাহলে যাদেরকে এই দুনিয়ায় রেখে তিনি মারা যাচ্ছেন তাঁদের জীবনটা হারাম হয়ে যায়। অসময়ে মানে লকডাউনের সময়ে মৃত্যু হলে যে কি বিপদে পড়তে হয় তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন ।আর তার ফলে মৃতের বাড়িতে পারলৌকিক ক্রিয়ায় অংশ নিতে এসে গরীব আত্মীয় বাড়িতেই আটকে গেছেন প্রায় সাতাশ জন।
ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার পলাশীপাড়া থানা এলাকায়। ৮৫ বছরের বৃদ্ধা বেশ কিছুদিন হল তিনি গত হয়েছেন। গত ১৯ তারিখ তাঁর পারলৌকিক ক্রিয়ায় যোগ দিতে প্রায় সাতাশ জন আত্মীয় আসেন। কিন্তু মার্চের বাইশ তারিখ জনতা কারফিউর কারনে তাঁরা ফিরতে পারেননি। সোম মঙ্গলবারও পশ্চিমবঙ্গে কার্যত লকডাউন চলছিল। তারপর গোটা দেশেই লকডাউন শুরু হয়ে যায়। আর এই মুহূর্তে প্রায় একমাসের বেশি সময় ধরে ওই সাতাশ জনই আত্মীয়বাড়িতে গৃহবন্দি। এই গৃহবন্দি দশাতে সবচেয়ে বড় অসুবিধা যেটা হয়েছে সেটা হল খাদ্যের। তাঁরা সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দা না হওয়ায় কেউই রেশন পাচ্ছেননা। ফলে কার্যত খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।পাশাপাশি আন্ত:জেলা বর্ডার সিল থাকার কারনে ফিরতেও পারছেন না।
মৃতার পরিবারের সদস্য অতুল ভৌমিক জানান, ”এক মাসের বেশি সময় ধরে এতজন আত্মীয়দের খাবার ব্যবস্থা করা তাঁদের কাছে সত্যিই খুব অসুবিধার বিষয়। তিনি আরো জানান স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনোরকম সাহায্য করতে পারেননি। এই অবস্থায় মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর এর পক্ষ থেকে স্থানীয় এসডিও কে রেপুটেশন দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাহায্য করার আবেদন করা হয়েছে।”
ভৌমিক জানিয়েছেন, ” দাহকার্য থেকে শুরু করে পারলৌকিক ক্রিয়াতেই পুঁজি শেষ হয়ে গেছে। তারপর প্রথম দফার লকডাউনের অবশিষ্ট সব। তিনটি বাচ্চা আছে যারা দুধ ছাড়া অন্য কিছু খেতে পারেনা। দু’জন মা আছেন যাদের শিশুরা মায়ের দুধ খায়। এদের তো মুখে কিছুটা তুলে দিতে হয়। কোনও ক্রমে প্রথম দফায় চালিয়েছি। কাজকর্ম কিছুই নেই । এরপরও দ্বিতীয় দফার লকডাউন! এরপর না খেয়ে মরা ছাড়া আর তো কিছু উপায় দেখছিনা।”