নিজস্ব সংবাদদাতা: মাকে রান্না করতে বলেছিল ছোট্ট মেয়েটা আর তাই শুনে রান্নার বঁটি দিয়ে মেয়ের মুন্ডুটাই কেটে আলাদা করে দিল মা। বুধবার সকালে এমনই ভয়ঙ্কর, মর্মান্তিক ঘটনায় হতভম্ব পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরি এলাকা। খবর পেয়েই ঘটনা স্থলে ছুটে যায় খেজুরি থানার পুলিশ। ঘরের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় রক্তে ভেসে যাওয়া কচি মেয়ের দেহটি। থানায় নিয়ে যাওয়া হয় ঘাতক মা কেও। তখনও তাকে বলতে শোনা যায়, বেশ করেছি খুন করেছি, নিজের মেয়েকে খুন করেছি। প্রাথমিকভাবে পুলিশের মনে হয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই মহিলা।
জানা গেছে ঘটনাটি ঘটেছে খেজুরি এলাকার বিদ্যাপীঠ এলাকায়। বিদ্যাপীঠ জমজমাট বাজার এলাকা। লকডাউনের জন্য সকাল ৭টা থেকে ১০টা অবধি বাজার খোলা থাকে বলে বেশ ভিড় ছিল বাজারে। স্থানীয় মানুষজনের বক্তব্য তাঁরা প্রথমে দেখতে ও শুনতে পান এক মহিলা বাজারের এক দিক থেকে চিৎকার করতে করতে আসছে আর বলছে, ” আমার মেয়ে আমি কেটেছি, বেশ করেছি। আমি ওকে কেটে দিয়েছি।” মহিলাকে স্থানীয় মানুষ চিনতে পারেন মহিলাকে। তাঁর নাম সাগরিকা পাত্র। মহিলা মানসিক ভারসাম্যহীন, কখনও কখনও চিৎকার চেঁচামেচি জুড়ে দেন।
মহিলার কথা শুনেই টনক নড়ে পরিচিতদের। তাঁরা জানতেন মহিলার একটি ছোট মেয়ে রয়েছে যে কিনা আবার শারীরিক ভাবে অশক্ত। এরপরই মহিলার বাড়িতে ছুটে যান তাঁরা আর গিয়েই দেখতে পান সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানিয়েছেন,” হঠাৎ ওই মহিলার চিৎকার শুনে মনে হয়েছিল প্রলাপ বকছে। এমনটা ও মাঝে মধ্যেই করে থাকে। কিন্তু যখন ও বলতে থাকে, ‘আমাকে কিনা বলে রান্না কর। যেইনা বলেছে দিয়েছি ওর গলাটা কেটে।’ তখনই সন্দেহ হওয়ায় বাজারের মানুষজন যখন ওই মহিলার বাড়িতে ছুটে যাই। আর ঘরের ভেতরে গিয়ে দেখি বাচ্চা মেয়েটা গলা কাটা অবস্থায় রক্তাক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে বিছানার মধ্যে। ততক্ষনে নিথর হয়ে গেছে শিশুটির দেহ। রক্তে ভেসে যাচ্ছে গোটা ঘর।এটা দেখার পর আর থাকতে পারিনি। ছিটকে বেরিয়ে আসি ওখান থেকে।”
ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ভিড় জমে যায় ওই এলাকায়। খবর যায় খেজুরি থানায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ওই শিশু কন্যার দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় সাগরিকা পাত্রকেও। খেজুরি থানার ওসি কৃষ্ণেন্দু প্রধান জানিয়েছেন, “আমরা গ্রেপ্তার করার পর মেয়েটির মা-কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে খুনের কথা স্বীকার করে। মেয়েটির প্রতিবন্ধী ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে। আমরা মেয়েটির মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। তবে কী কারণে এই ধরনের নৃশংস ঘটনা তা এখনও পরিষ্কার নয়।”
পুলিশ এও জানিয়েছে যে মহিলা মানসিক ভারসাম্যহীন। মহিলার স্বামী বিশ্বজিৎ পাত্র যিনি সেল ফোন সরানোর কাজ করেন। ওদের প্রকৃত বাড়ি খেজুরি থানারই ভাঙ্গনমারি এলাকায়। নিজের কাজের সুবিধার জন্যই স্ত্রী এবং ৯ বছরের কন্যাকে নিয়ে বিদ্যাপীঠ এলাকায় থাকতেন বিশ্বজিৎ। ঘটনার সময় দোকানে নিজের কর্মস্থলে গেছিলেন। বাড়িতে ছিল মা ও মেয়ে। তারপরই এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে যায়। যদিও এই ঘটনার জন্য মাকে ঘাতক বলতে রাজি নন মানসিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে এই ধরনের শিশুদের জন্য মায়েরা জীবনের সমস্ত সুখ বিসর্জন দিয়ে দেন। এক্ষেত্রে মহিলাটির চিকিৎসার দরকার ছিল। সেটা অবহেলা করারই মাশুল দিতে হয়েছে।