অশ্লেষা চৌধুরী: কয়েকদিন আগেই প্রয়াত হয়েছেন ‘ফেলুদা’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এবার চলে গেলেন জয়বাবা ফেলুনাথ ছবির অন্যতম চরিত্র ‘মছলিবাবা’-ও। প্রয়াত হলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা মনু মুখোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। এরপর আজ রবিবার সকাল ৯.৩৫- নাগাদ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
জনপ্রিয় এই অভিনেতার মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লেখেন, প্রবীণ চলচ্চিত্র ও থিয়েটার অভিনেতা মনু মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে গভীর শোকাহত। ২০১৫ সালের টেলি-সম্মান পুরষ্কারে আমরা ওনাকে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট সম্মানে ভূষিত করেছিলাম। তাঁর পরিবার, সহকর্মী ও ভক্তদের আমার সমবেদনা।
মনু মুখোপাধ্যায় ১৯৩০ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন । তাঁর ভালো নাম ছিল সৌরেন্দ্রনাথ, কিন্তু সকলে তাকে মনু বলে ডাকতেই ভালোবাসতেন। তিনি শৈশব কালে পাড়ার নাটকে মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করতেন। ১৯৫৭ সালে তিনি প্রম্পটার হিসেবে নিজের কাজ শুরু করেন। এরপর কালী বন্দোপাধ্যায়ের পরিবর্তে “ক্ষুধা” নাটকে শিল্পী হিসেবে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। এরপরের ধীরে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ হয় মনু মুখোপাধ্যাযয়ের। অভিনয়ের জগতে আসার আগে তিনি হাইকোর্টে কেরানির পদে চাকরি করেতেন, কিন্তু অভিনয়ের টানে তার চলচ্চিত্র জগতে আসা।
মৃণাল সেনের ‘নীল আকাশের নীচে’ ছবিটিতে প্রথম মনু মুখোপাধ্যায়কে দেখা যায়। এই ছবির মুখ্য চরিত্রে ছিলেন কালী বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর তিনি বিশ্ববিখ্যাত পরিচালক সত্যজিত রায়, রোন্যান্ড জোফির সঙ্গে কাজ করেছেন।
অভিনেতার পাশাপাশি তবলা বাদক হিসেবে বিশেষ খ্যাতি ছিল তাঁর। তিনি বিখ্যাত তবলা বাদক কৃষ্ণকুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে তবলা শিখতেন। একাধিক সিনেমা, সিরিয়াল সহ ওয়েব সিরিজে কাজ করেছেন মনু মুখোপাধ্যায়। সুদামা দ্যা হাফ ম্যান ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। যদিও সেই ছবি মুক্তি পায়নি। তাঁর প্রথম ছবি মৃণাল সেনের নীল আকাশের নীচে। ছবিটি ১৯৫৯ সালে মুক্তি পায়।
এরপর উত্তরায়ণ, অশনি সংকেত, জয় বাবা ফেলুনাথ, দাদার কীর্তি, সাহেব, গণশত্রু, পাতালঘর, বাকিটা ব্যক্তিগত, গয়নার বাক্সর ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। পাশাপাশি পৌষ ফাগুনের পালা, বয়েই গেল, সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন। অভিনয় করেছেন ব্যোমকেশ- মাকড়সার রস ওয়েব সিরিজেও। ছোট পর্দাতেও নিয়মিত অভিনয় করেছেন মনু মুখোপাধ্যায়। বর্ষীয়ান এই অভিনেতার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে।