নিজস্ব সংবাদদাতা: মাত্র দেড় মাসের মধ্যেই এক গৃহবধূর মৃত্যুকে ঘিরে তুলকালাম কান্ড ঘটে গেল পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানা এলাকার হোসেনপুর গ্রাম। ব্যাপক ভাঙচুর ও লন্ডভন্ড করা হল মৃত গৃহবধূর শ্বশুরবাড়িতে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য উদ্ধার করতে এসে ক্ষোভের মুখে পড়তে হল পুলিশকেও। বধূর মৃতদেহ আটকে রেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন গৃহবধূর বাপের বাড়ির আত্মীয় পরিজন ও গ্রামবাসীদের একাংশ। তান্ডবের আগেই অবশ্য ক্ষোভের আভাস পেয়েই বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে মৃতার স্বামী এবং শ্বশুর শাশুড়ি। ঘটনায় ব্যপক উত্তেজনা রয়েছে এলাকায়। ভাঙচুরের ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার বেলা ১০টা নাগাদ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে মৃতা গৃহবধূর নাম মনিকা বেরা ঘোড়ই(২২),স্বামীর নাম দীপঙ্কর ঘোড়ই। হোসেনপুর গ্রামের ঘোড়ই পরিবারে মনিকা এসেছিল ওই থানারই যদুপুর গ্রাম থেকে। যদুপুরের বাসিন্দা হেমন্ত বেরার মেয়ে মনিকা। দেড় মাস আগে বিয়ে হয় দীপঙ্কর ও মনিকার। মনিকার বাবা, মা সহ পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে বাইরে রয়েছেন। এই পরিবারের সোনার ব্যবসা রয়েছে বাইরে। সেই সূত্রে তাঁদের প্রায়ই বাইরে থাকতে হয়। ঘটনার খবর পেয়ে রওনা দিয়েছেন তাঁরা। জানা গেছে রবিবার রাতে মনিকার বাপের বাড়িতে ফোন করে জানানো হয় যে মনিকা খুবই অসুস্থ। যেহেতু মনিকার পরিবার বাইরে থাকে তাই তাঁরা এক আত্মীয়কে পাঠান মনিকাকে দেখার জন্য। সেই আত্মীয় রাতেই মনিকার শ্বশুরবাড়িতে আসেন এবং দেখেন যে মনিকাকে মৃত অবস্থায় তাঁর শোয়ার ঘরের বিছানায় শুইয়ে রাখা হয়েছে।
ঘটনাটি দেখেই ফিরে যায় ওই আত্মীয়। বিষয়টি জানতে পারে মনিকার বাপের বাড়ি বেশ কিছু মানুষ সোমবার সকালেই রওনা দেয় হোসেনপুরে।মনিকার আত্মীয়রা সদলবলে আসছে এই খবর পেয়েই সম্ভবতঃ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় মনিকার স্বামী শ্বশুর ও শাশুড়ি। ফলে আদতে মনিকার কী হয়েছিল, কেন সে মারা গেল এর কোনও উত্তর পাওয়া যাচ্ছেনা। এমন কী পুলিশও তা জানতে পারছেনা। যদুপুরের লোকেরা এসে যখন দেখেন যে মৃতাকে ফেলেই পালিয়েছে সবাই তখন আরও উত্তেজনা ছড়ায়। ব্যাপক ভাঙচুর শুরু হয়। ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র যেমন চেয়ার টেবিল, খাট, টিভি ইত্যাদি ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হয়।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়েই হোসেনপুর গ্রামে এসে পৌঁছায় পুলিশ। জনতার রাগ গিয়ে পড়ে পুলিশের ওপর। পুলিশ মনিকার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের উদ্দেশ্যে নিয়ে যেতে চাইলে বাধা দেয় মনিকার বাপের বাড়ির লোকেরা। পুলিশকে ঘিরে শুরু হয় বিক্ষোভ। উপস্থিত পুলিশ আধিকারিক প্রায় ১ঘন্টা ধরে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের ক্ষোভ প্রশমন করে মৃতদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হন। তিনি আশ্বস্ত করেন অভিযোগ পেলে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও সেই অভিযোগ মোতাবেক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।
যদিও এদিন দুপুর অবধি দাসপুর থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। জানা গেছে মনিকার বাবা-মা, দাদা ইত্যদিরা এসে পৌঁছানোর পরই অভিযোগ দায়ের হবে। সেই অভিযোগ না হওয়া অবধি পুলিশও কিছু বলতে পারছেনা। ওদিকে মনিকার ময়নাতদন্তের কাজ শুরু হয়েছে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে। এই ময়নাতদন্তের রিপোর্টই একমাত্র মনিকা মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন করতে পারে।