নিজস্ব সংবাদদাতা: চোখ বন্ধ করে এই সভা যদি কেউ শুনতেন তা’হলে মনে হত বিজেপি কিংবা সিপিএমের সভা হচ্ছে। যে কথা এতদিন বিরোধীরা বলে আসতেন সেই কথা, সেই পুলিশকে সক্রিয় আর নিরপেক্ষ হওয়ার কথা বলছে তৃনমূল! বলছেন রাজ্যের মন্ত্রী, বলছেন সাংসদ! রবিবার তাই বিজেপির পাল্টা সভা করতে গিয়ে সবং তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীরা যেন পুলিশের বিরুদ্ধেই সভা করে বসলেন যা শুধু নজির বিহীন নয়, তাৎপর্য পূর্নও বটে।
রাজ্যের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেছেন, বুড়ালে বিজেপির সভার দিন বিজেপি যে তান্ডব চালিয়েছে তার বিরুদ্ধে পুলিশ তেমন কোনও ভূমিকাই নেয়নি। তাঁর আরও অভিযোগ পুলিশের ভুমিকা নিরপেক্ষ ছিলনা। পুলিশ আড়াই ঘণ্টা পরে ঘটনাস্থলে যায়। এবং মন্ত্রী আরও অভিযোগ করেছেন যে, এক অংশের পুলিশ বিজেপির দিকে ঢলতে শুরু করেছে। তাঁদের ধারনা বিজেপি বোধহয় ক্ষমতায় চলেই আসছে।
মন্ত্রী এও বলেছেন যাঁরা ভাবছেন ২০২১ বিজেপি ক্ষমতায় আসছেন তাঁদের সে ভাবনার গুড়ে বালি। প্রায় একই কথা বলেছেন রাজ্যসভার সাংসদ মানস ভূঁইয়াও যিনি পুলিশকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, পুলিশের ভূমিকা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘটনা দেখা নয়, জনগণকে রক্ষা করা। বলাবাহুল্য তৃনমূল নেতারা খুব নরম ভাষায় পুলিশকে এক প্রকার সতর্কতাই করেছেন। কিন্তু সবংয়ের সভার এই মূল সুর বলে দিচ্ছে যে, পুলিশের ভরসায় রাজনীতি করার ভয় যেন পেয়ে বসেছে তাঁদের। ভয়, পুলিশ যেন পাশ থেকে সরে যাচ্ছে।
দুদিন আগেই সবংয়ের এই বুড়ালে সভা করেছিল বিজেপি। সদ্য পাশ হওয়া কৃষি বিলের সমর্থনে ভারতী ঘোষ এবং দিলীপ ঘোষের সভা ছিল। সেই সভাকে ঘিরে সেদিন ধুন্ধুমার বেঁধে যায়। আগুন ধরানো হয় মোহাড়ের তৃনমূল পার্টি অফিসে। বেশ কিছু বাইক ভাঙচুর হয়। আহত হন একাধিক তৃনমূল ও বিজেপি সমর্থক। যদিও তৃণমূলের সমর্থকরাই আহত হয়েছেন বেশি। তাঁদের মেদিনীপুর এমনকি কলকাতায় পাঠানো হয় চিকিৎসার জন্য। এই ঘটনায় পুলিশ ডজন খানেক বিজেপি সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে, বিভিন্ন জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয়তা দেখিয়েছে, ঘটনা হচ্ছে এটা তৃণমূলের দায়ের করা অভিযোগ বা তৃনমূল বলেই হয়েছে বিপরীত ঘটনা হলে হত কিনা সন্দেহ।
কয়েকদিন আগেই পিংলাতে খোদ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের গ্রামেই মেরে পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে এক শিক্ষক সহ দুই বিজেপি নেতার। এমনকি এই মোহাড়েই সদ্য খুন হয়েছেন এক বিজেপি কর্মী দীপক মন্ডল। সমস্ত অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন? না। তাহলে পুলিশকে দোষারোপের মত কী হয়েছে? আসলে মনে হচ্ছে তৃনমূল নেতারা পুলিশকে আরও সক্রিয় হওয়ার কথা বলছেন এবং অবশ্যই সেই সক্রিয়তা তাঁদের স্বপক্ষেই। ২০১১ র দলটা আর ২০১১ তে নেই এবং সবংয়ে তো নেইই। একটা জন বিচ্ছিন্নতা, জন ক্রোধ কী টের পাওয়া যাচ্ছে ২০২১য়ের আগে?না হলে যে দল এত মানুষের সমর্থন দাবি করে সেই দল পুলিশের পেছনে পড়ে যাচ্ছে কেন?