নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনা আর লকডাউন পর্যায়ে দেশের বড় বড় শিল্পপতিদের জন্য ৬৮ হাজার ঋন মকুব করেছে কেন্দ্রে সরকার। সেই টাকা তাঁরা ধার নিয়েছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে, সে টাকা দেশের জনগণের টাকা। অথচ নিজের মত করে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য যে লক্ষ লক্ষ সাধারন মহিলা লোন নিয়েছিলেন তাঁদের লোন মুকুব তো করাই হয়নি উল্টে সরকার ঘোষিত তিন মাস সুদ না নেওয়ার জন্য যে নীতি প্রণয়ন করা হয়েছিল তা মানতে চাইছেনা মাইক্রো ফিন্যান্স কোম্পানি গুলি। মাইক্রো ফিন্যান্স, এখন মূর্তিমান আতঙ্ক মহিলাদের কাছে। ঘর বয়ে এসে লোন দিয়ে এখন চলছে চোখ রাঙানি সঙ্গে অশ্লীল আচরন।
সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাশাসকের দপ্তরে ঋণ মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে এসে এমনই অত্যাচারের কাহিনী শোনালেন কয়েক’শমহিলা ঋণগ্রহীতা। তাঁরা জানান, সংসারে একটু স্বচ্ছল হওয়ার জন্য বিভিন্ন মাইক্রোফিনান্স থেকে ঋণ নিয়েছিলেন তাঁরা। কেউ স্বামীকে কিনে দিয়েছেন আটো কেউ বা টোটো। কেউ আবার নিজের মত করে ছোট খাটো ব্যবসা শুরু করেছিলেন। এদের বেশির ভাগই গৃহবধূ। কিন্তু লকডাউন পর্বে চূড়ান্ত ভাবে মার খেয়েছে উপার্জন। এখন ঋণের কিস্তি শোধ করতেই জীবন কয়লা হয়ে যাওয়ার যোগাড় বলে জানিয়েছেন ওই মহিলারা।
ঋন গ্রহীতা এক গৃহবধূ জানান, ” মনে করুন সপ্তাহে ৪ হাজার টাকা রোজগার হবে ধরে নিয়েই লোন নেওয়া। ২ হাজার টাকা ঋন শোধ করব আর ২ হাজার টাকায় সংসার চালাবো। কিন্তু এখন আয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার টাকা। এখন ছেলে মেয়ের মুখেই ভাত তুলে দিতে পারছিনা তো লোন শোধ করব কি ভাবে?”মহিলাদের বক্তব্য, লোন মেটানোর জন্য মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এমনকি অশ্লীল ভাষায় কথাও বলেছেন আদায়কারীরা। ইতিমধ্যেই গঠিত হয়েছে মাইক্রো ফিন্যান্স লোন গ্রহীতা সংগ্রাম সমিতি।
সমিতির উপদেষ্টা ভবানী চক্রবর্তী বলেন, ” দেশের ধনী, শিল্পপতিদের হাজার হাজার কোটি টাকা ঋন মুকুব অথচ দরিদ্র মানুষের জন্য কোনই ব্যবস্থা নেই। না রাজ্য, না কেন্দ্র সরকার কেউই ভাবছেন না এই প্রান্তিক মানুষগুলোর জন্য। অন্যদিকে ফিনান্স কোম্পানিগুলির চাপ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা দাবি করছি কেন্দ্রীয় সরকার যখন বড় বড় শিল্পপতিদের কোটি কোটি টাকা ঋণ মুকুব করেছে তখন একই নিয়মে আমাদেরও ঋণ মুকুব করতে হবে। আমরা ঋণের কিস্তি শোধ করতে অক্ষম।”
জেলাশাসকের দপ্তরে ডেপুটেশন দেওয়ার পর সংগঠকরা জানিয়েছেন, “এই দাবি নিয়ে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের পথে এগিয়ে যাবেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই রাজ্যস্তরে এই ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”