নিজস্ব সংবাদদাতা: এক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু রীতিমত ধন্দে ফেলেছে মেদিনীপুর কোতোয়ালি পুলিশকে। সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায় পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর ঘন্টা দেড়েকের মধ্যেই ছাত্রটি কিভাবে মারা গেল তাই নিয়ে রহস্যও যথেষ্ট ঘনীভূত হয়েছে। শুক্রবার রাত ১২টা নাগাদ নিজের ঘরের তালা ভেঙে উদ্ধার করা হয় পোশাকহীন ওই ২০ বছরের যুবকের। শরীরের কোথাও কোনও আঘাতের চিহ্ন অন্তত বাইরে থেকে বোঝা যায়নি। আত্মহত্যার চেষ্টারও কোনও নমুনা মেলেনি। মুখমন্ডলেও ছিলনা কোনও বিকৃতি।
ঘটনাটি ঘটেছে মেদিনীপুর শহরের বেড়বল্লভপুর সংলগ্ন প্রগতিনগর এলাকায়। হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ছাত্রের নাম দেবদীপ মেট্যা (২০)। শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ‘ইলেকট্রনিক্স কমিউনিকেশন’ এর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল দেবদীপ। জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় রীতিমত ভাল ফল করে শিবপুর কলেজে ঠাঁই করে নিয়েছিল সে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, লকডাউনের আগেই হোস্টেল থেকে বাড়ি ফিরেছিল দেবদীপ। বাড়িতে থেকেই চালিয়ে যাচ্ছিল অনলাইন ক্লাশ ও গৃহপাঠ্য। শুক্রবার রাতে সাড়ে দশটা নাগাদ পরিবারের সবার সঙ্গে খাবার খেয়ে বাড়ির একতলায় নিজের রুমে ঢুকে পড়েন। সাধারন ভাবে দরজা ভেজিয়ে রেখেই শুয়ে পড়ে দেবদীপ। কোনও কোনও দিন রাতে পড়াশুনা করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়ে আলো নেভানো হয়না। শুক্রবার সাড়ে বারোটা নাগাদ নিজে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দেবদীপের বাবা ছেলে আলো নেভালো কিনা দেখতে গিয়ে দেখেন দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। বিষয়টা অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় বাবা ডাকেন। সাড়া না পেয়ে জানালা দিয়ে দেখেন ছেলে বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। দরজা ভেঙে উদ্ধার করে রাতেই নিয়ে যাওয়া হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষনা করেন।
দেবদীপের দাদা শুভঙ্করও যথেষ্ট মেধাবী। খড়্গপুর আই আই টি’র এম টেকের ছাত্র শুভঙ্কর বলেন, গত বছর ভাইয়ের ব্রেনের একটা অপারেশন হয়েছিল। এমনিতে ভালই ছিল। কোন সমস্যা ছিলনা। কিন্তু কীভাবে মারা গেল কিছুই বুঝতে পারছিনা। ল্যাপটপ বা মোবাইলে কিছু হয়েছে কিনা জানিনা। ময়না তদন্তে নিশ্চয় জানা যাবে।’
খবর পেয়ে পুলিশ আসে। দেবদীপের ঘর তল্লাশি করে মোবাইল ও ল্যাপটপ সিজ করে নিয়ে যায়। পুলিশ দেখতে পায় ল্যাপটপ চালু থাকা অবস্থায় মারা গেছে দেবদীপ। সেই সময় ল্যাপটপে ভিডিও চ্যাট অথবা অন্যকিছু করছিল কিনা তা এখনও জানা যায়নি কারন ল্যাপটপটি পাসওয়ার্ড দিয়ে বন্ধ করা। সেই পাসওয়ার্ড ক্র্যাক করার জন্য বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নেওয়া হয়েছে।
পুলিশের দ্বিতীয় সন্দেহ কেন দেবদীপ উলঙ্গ অবস্থায় ছিল। ”আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, ল্যাপটপের ভেতরকার বিষয় ও মোবাইলটি ঘেঁটে কি পাওয়া যায় দেখছি। তবেই এই রহস্য উদঘাটন হবে।” জানিয়েছেন এক আধিকারিক। “আমরা কিছুই বুঝতে পারছিনা কেন এমন ঘটল। একটা তরতাজা ছেলে একটু আগেই খোশ মেজাজে গল্পগুজব করে খেল তারপর নিজের ঘরে গেল আর কিছুক্ষণের মধ্যে মারা গেল! কেনই বা সে বিবস্ত্র ছিল? আমার বাবা-মা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। পুলিশ যত দ্রুত এই রহস্য উন্মোচন করে তত দ্রুত রিলিফ পাব আমরা।” জানালেন শুভঙ্কর।