নিজস্ব সংবাদদাতা: মাত্র ১২ঘন্টার ব্যবধানে ফের ২ মৃত্যু নজর কেড়ে নিল জেলার, নজর কেড়ে নিল করোনাকে সতর্ক নজরে না দেখার। গত কয়েকদিন ধরেই পর্যাপ্ত উপসর্গ থাকা স্বত্ত্বেও তা গ্রাহ্য করেননি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ পঞ্চানন কুন্ডুর মাত্র ৫২ বছর বয়সী গাড়ির চালক। কাশি, গলা ব্যথার উপসর্গ নিয়েই কাজ করে যাচ্ছিলেন। জানা গেছে শরীরে অল্প তাপমাত্রাও আসছিল মাঝে মাঝে।
সেই অবস্থা গ্রাহ্য না করেই চালাচ্ছিলেন গাড়ি। এমন কি গত শুক্রবারও ডঃ কুন্ডুকে তাঁর বাঁকুড়র বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে ফিরেছিলেন। তখনও নাকি অধ্যক্ষ পরামর্শ দিয়েছিলেন করোনা পরীক্ষা করিয়ে নিতে কিন্তু শনিবার রবিবার এমন কি সোমবারও পেরিয়ে যায়। সোমবার সম্ভবতঃ নিজেই অনুভব করেছিলেন যে নিজের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে শরীর। এরপর নিজেই হাপাতালের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে মঙ্গলবার নিজের নমুনা দেবেন বলে নাম লিখিয়ে রাখেন। কিন্তু সেই পরীক্ষা আর জীবিত অবস্থায় করাতে হয়নি তাঁকে।
জানা গেছে সোমবার রাত ১২টা নাগাদ বাড়িতে থাকা অবস্থাতেই হঠাৎই তাঁর প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। মেডিক্যাল কলেজ থেকে মাত্র কয়েক মিটারের মধ্যেই বাড়ি ওই চালকের। তড়িঘড়ি করে বাড়ির লোকেরা তাঁকে নিয়ে আসেন মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে। খোদ অধ্যক্ষের গাড়ির চালক তাই চেষ্টার কোনও ত্রুটি হয়নি। দ্রুততার সঙ্গেই চিকিৎসকরা তাঁর শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করেন। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করেই হাসপাতালে আসার ঘন্টা খানেকের মধ্যেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
চালক হিসাবে যথেষ্ট সুনাম ছিল তাঁর। দীর্ঘদিন আ্যম্বুলেন্স চালিয়েছেন কলকাতায় স্থানান্তরিত হওয়া রোগিদের নিরাপদে পৌঁছে দিয়েছেন এসএসকেএম কিংবা এনআরএসে। এই দক্ষতার কারণেই অধ্যক্ষের গাড়ির চালক পদে আসীন করা হয় তাঁকে। কিন্তু আনুষঙ্গিক কিছু অভ্যাসের কারনে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সমস্যা ছিল। আর সেই কো-মর্বিডিটিই তাঁর মৃত্যুকে নিশ্চিত করে। মৃত্যুর পরে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে তাঁর।
ঘটনার প্রায় ১২ঘন্টা আগে পরেই শালবনী করোনা হাসপাতালে মৃত্যু হয় সবং থানা এলাকার এক পরিচিত দলিল লেখকের। সত্তরোর্ধ এই ব্যক্তির মৃত্যূ হয়েছে করোনা সুনিশ্চিত হওয়ার পরই। জানা গেছে বেশ কয়েকদিন অসুস্থ হয়ে বাড়িতে ছিলেন তিনি। রবিবার ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার পর করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। সোমবার তাঁর শ্বাসকষ্ট প্রবল হওয়ায় শালবনী করোনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। চিকিৎসকদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে দুপুরের দিকে মৃত্যু হয় তাঁর।
উল্লেখ্য জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী গত ৪ঠা সেপ্টেম্বরের হিসাব অনুযায়ী সবং থানা এলাকায় মোট ৩জনের মৃত্যু হয়েছিল মঙ্গলবারের মৃত্যু ধরে তা ৪ হল। অন্যদিকে ওই তারিখে সবংয়ে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১২৬ যদিও এর পরে সবং থানার মেজবাবু সহ আরও ৪জন পুলিশ কর্মী এবং বেশ কয়েকজন সাধারন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন ফলে সংখ্যাটি এখন ১৩৫য়ের কাছাকাছি হতে পারে। এরমধ্যে মাত্র ৪০ জন বর্তমানে পজিটিভ রয়েছেন বাকিরা করোনা মুক্ত। মঙ্গলবারই করোনা আক্রান্ত চিহ্নিত হওয়ার ৮দিনের মাথায় সবং থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সুব্রত বিশ্বাস নেগেটিভ হয়ে করোনা মুক্ত হয়েছেন বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে।