নিজস্ব সংবাদদাতা: কারও স্টকে ১০কুইন্টাল তো কারও ২৫। জামাই ষষ্ঠী উপলক্ষ্যে মজুদ করেছিল মেদিনীপুর শহরের বিভিন্ন খাসি মাংসের দোকানদাররা। কিন্তু শালী আর শাশুড়ির পাকা ধানে মই দিয়েছে করোনা ভাইরাস। সংক্রমনের ভয়ে অধিকাংশ জামাই এবার শ্বশুরবাড়ির চৌকাট মাড়ায়নি। তাতে শালী কিংবা শাশুড়িদের মন খারাপ হলেও শ্বশুরের পকেট বেঁচেছে। কিন্তু সব চেয়ে খারাপ অবস্থা হয়েছে খাসি মাংস বিক্রেতাদের। হাই সুগার আর ক্লোরোস্টলের ভয়ে মেদিনীপুরের যে পরিবার গুলিতে ভুলেও খাসি মাংস ঢোকেনা জামাইয়ের জন্য বছরে একটি বার তাদেরও আসতে হত ষষ্ঠীর দিনে। কিন্তু এবার মাঠেই মারা গেছে খাসি মাংসের ব্যবসা।
রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতো বটেই এমনকি বিহার থেকে আনা পাটনাই খাসি এখনও দিব্যি বেঁচে বর্তে আছে আর ঘাস, অশ্বত্থ পাতা চিবুচ্ছে! এ পর্যন্ত হলেও না’হয় হত কিন্তু আরও সমস্যা হল প্রতিদিনই দেড় থেকে দু’কেজি ওজন কমছে খাসিগুলোর ফলে মাথায় হাত বিক্রেতাদের, লাভের গুড় খেয়ে যাচ্ছে জামাই খাসির দল। অগত্যা সেল সেল সেল! ৭০০ টাকা কেজির খাসি রবিবার সকালে মেদিনীপুর শহরে বিক্রি হয়ে গেল ৫০০ টাকা দরে। আর শহর তো বটেই, ফোনে খবর পেয়ে ১০-২০কিলোমিটার দূর থেকে বাইক হাঁকিয়ে লোক লম্বা লাইনে জুটে গেল খাসি দোকানের সামনে।
মেদিনীপুর শহরের পঞ্চুর চকে ইসাক মিট শপ ছাড়াও আরও কয়েকটা দোকান, বটতলার মামা মিট শপ ছাড়াও তিনটে, গোলকুয়ার জামিল মিট শপ, কেরানিতলা, সিপাহিবাজার, বাসস্ট্যান্ড, গেটবাজার, পাটনাবাজার সর্বত্রই রবিবার খাসির ৫০০টাকার সেলের মাংস নিতে আজ উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। শহর তো বটেই আশেপাশের মাৎকাতপুর, ভাদুতলা, কঙ্কাবতী, নদীর ওপারের বড়কলা, ওয়ালিপুর অবধি লোক এসেছে খবর পেয়ে। তার চেয়েও অবাক কথা ২০কিলোমিটার দুরের বসন্তপুর থেকেও লোক এসেছেন সেলের মাংস কিনতে। আর আসবেননাই বা কেন? বসন্তপুরের হীরক মাইতির কথায় দু’বন্ধু মিলে নিজেদের জন্য আর প্রতিবেশীর জন্য মোট ৫কেজি মাংস নিলাম। ১০০০টাকা সেভ হল, তার থেকে তেলের দাম ১০০টাকা বাদ দিন। ইসাক মিট শপের ছেলেটি জানালো, এ’ছাড়া উপায় ছিলনা। প্রতিদিনই দেড় থেকে দু’কেজি ওজন কমছে। সাড়ে সাতশ থেকে হাজার টাকা লস হচ্ছে একটা খাসিতে। ঘাস পাতা তো দুরের কথা দানা ভুসি দিয়েও ওজন রাখা যাচ্ছেনা। বাধ্য হয়েই সব দোকানদার মিলে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হল। এরপর নিজের নিজের দায়িত্বে মাইক প্রচার। ব্যাস, কেল্লা ফতে। অন্য সময় এমনি খাসির মাংস ৭০০ আর চর্বি ছাড়া ৮০০টাকা কেজি কিন্তু আজ সব ফ্ল্যাট রেট। কিন্তু ওজন কমছে কেন? কোনও রোগ নয় তো?
পশু চিকিৎসকরা বলছেন না, পাটনাই খাসি আসলে চরাতে হবে। প্রতিদিন চরে চরে পাঁচ থেকে সাত কেজি অবধি ঘাস পাতা খাবে, হাঁটবে ছুটবে তবেনা গায়ে গতরে বাড়বে। শহরে সে চরানোর জায়গা কোথায়? হঠাৎ করে জামাইষষ্ঠীর জন্য মজুত করে নিয়েছিল। ভেবেছিল দু’চার দিনে মাল কেটে যাবে কিন্ত বিধি বাম। চলে এল করোনা। আর সব মিলিয়ে শহরে খাসি জমা হয়ে গেছিল প্রায় ৫০০টি। তবে পাটনাই খাসিকে জামাই খাসি বলায় অনেকে মেনে নিতে পারেননি। তাঁদের বক্তব্য ভাই ফোঁটার সময় কেউ তো ভাই খাসি বলেনা।