নিউজ ডেস্ক: চওড়া,মাংসল ডান বাহুতে বড় করে ট্যাটু আঁকা চে গুয়েভারার আর হৃদয়ে রাখা ফিদেল কাস্ত্রো! ২০১৬ সালের ২৫শে নভেম্বর, সারা বিশ্ব শুনেছিল সেই নিদারুণ সংবাদ, মৃত্যু হয়েছে জীবন্ত বিপ্লব ফিদেল কাস্ত্রোর। সেই মৃত্যু সংবাদ শোনার পর হাহাকার করে কেঁদে উঠেছিলেন ফুটবলের রাজপুত্র দিয়াগো মারাদোনা। বুক চাপড়ে বলেছিলেন, “আমার দ্বিতীয় পিতার মৃত্যু হল, এখন আমি কার আশ্রয়ে থাকব!” ইতিহাসের কী আশ্চর্য্য সমাপতন! ঠিক চার বছরের মাথায় সেই ২৫শে নভেম্বর চলে গেলেন বিশ্ব ফুটবলের আরেক কিংবদন্তি! শুধুমাত্র কমিউনিস্ট রাষ্ট্র হওয়ার কারনে মার্কিনী মদতে আমেরিকা আর ইউরোপীয় দেশ গুলোর সিংহভাগ অর্থনৈতিক অবরোধ জারি করেছে কিউবায়, বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে হার্ট অপারেশন থেকে যকৃৎ প্রতিস্থাপন সব চিকিৎসাই নিঃখরচায়। পথভ্রষ্ট ফুটবলের দেবপুত্র তখন মাদকাসক্ত। পরিশ্রুত কোকেনের ভাগাড় থেকে ফিদেল তুলে আনলেন দিয়াগোকে, বাকিটা ইতিহাস!
মাত্র ৬০ বছর বয়স হয়েছিল এই লাতিন আমেরিকার বিস্ময় প্রতিভার। স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ার পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। বেশ কিছু জটিল পরীক্ষা নিরীক্ষাও হয়েছিল হাসপাতালে। একটি স্ক্যানে রক্তের জমাট বাঁধার বিষয়টি মস্তিষ্কে প্রকাশিত হয়েছিল। এর পরে তার মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড় দেওয়া হয়। কিছুদিন আগে তাঁর করোনার পরীক্ষাও হয় যেখানে নেগেটিভ রিপোর্ট আসে তাঁর। তারপর হঠাৎই হার্ট আ্যটাক। না, এবার আর সময় মেলেনি তাঁকে চিকিৎসার।
মোট চারটি ফিফা বিশ্বকাপ খেলেছিল। ১৯৮৬ সালে তাঁরই হাত ধরে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ ঘরে তোলে। গত ৩০শে অক্টোবর ম্যারাডোনা তাঁর ৬০ তম জন্মদিন উদযাপন করেছেন। যেহেতু এক সময়ে মাদক ও অ্যালকোহলে আসক্ত ছিলেন তাই মারাদোনাকে অত্যধিক ঝুঁকির রোগী হিসাবে দেখা হয়েছিল। কিছুদিন আগেই তাঁর এক দেহরক্ষীর মধ্যে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ লক্ষ্য করার পরে মারাদোনা গত সপ্তাহে দ্বিতীয়বার সেল্ফ আইসোলেশনে ছিলেন। জানা গেছে মারাদোনার সাবডিউরাল হেমোটোমা ছিল, যার অর্থ একটি ঝিল্লি এবং মস্তিষ্কের মধ্যে রক্ত জমা হওয়া এবং ৩রা নভেম্বর তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়। এক সপ্তাহ পরে তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপরই এই দুঃসংবাদ।
বুয়েনস আইরেসের উপকণ্ঠে ভিলা ফিয়েরিতো অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করা মারাদোনা তার পেশাদার ফুটবলে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন যখন ১৯৫৬ সালে আর্জেন্টিনো জুনিয়র্সের সাথে, তখন তার বয়স ছিল ১৫ বছর। ১৯৮১ সালে বোকা জুনিয়র্সে যাওয়ার আগে জুনিয়র্সের হয়ে তিনি ১১৫টি গোল করেছিলেন।
১৯৮২ সালে তার প্রথম বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে তাঁর ভূমিকা হতাশা জনক হলেও বার্সেলোনায় রেকর্ড ব্রেকিং পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।সারা বিশ্ব জুড়ে রয়েছে মারাদোনার ভক্তরা রয়েছেন। ভারতের সাথে তাঁর আত্মিক যোগ রয়েছিল। একাধিকবার এদেশে এসেছেন, এসেছেন কলকাতাতেও। প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি ট্যুইট করেছেন, আমার নায়ক আর নেই। তোমার আত্মা শান্তিতে থাকুক. তোমার কারণে আমি ফুটবল দেখেছি। ”
কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, “দিয়েগো আরমান্ডো মারাদোনার মৃত্যুর বিষয়টি শুনে গভীরভাবে দুঃখিত হয়েছি। আর্জেন্টিনার এই ফুটবলার সর্বকালের অন্যতম সেরা অ্যাথলিট ছিলেন। শোকাহত পরিবার এবং বিশ্বজুড়ে তাদের ভক্তদের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা। আমরা সবাই তাকে মিস করব, এই সুন্দর খেলাটি তাকে মিস করবে। “