ওয়েব ডেস্ক : রাজ্যপাল জগদীশ ধনখড় এরাজ্যের রাজ্যপালের আসনে বসার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে প্রায় প্রতিদিনই চলছে যুদ্ধ৷ তাদের দুজনের সম্পর্ক যেন একেবারে আদায় কাঁচকলায়। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ফের মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর মুখ খুলেই বৃহস্পতিবার বিস্ফোরক মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন রীতিমতো কড়া ভাষায় তাকে হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ভার্চুয়াল বৈঠকে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যরা যোগ না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আচার্য তথা রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক এনিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি। রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বলেন, রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা রাজনীতিতে বন্দী। আজ রাজভবনে সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যপাল বলেন, “মানুষের হয়ে কথা বলাই আমার কাজ। কলেজ ভর্তির ক্ষেত্রে দুর্নীতি হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছি। ৬ মাসে মুখ্যমন্ত্রী উত্তর দেননি। আমাদের শিক্ষার পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। উপাচার্যদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক ডেকেছিলাম। রাজ্য বলছে এই বিষয়ে আইন নেই।” পালটা রাজ্যপালকে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
এদিন রাজ্যপালের উদ্দেশ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আপনার শুভবুদ্ধির উদয় হোক। উনি বিজেপির পলিটিক্যাল মাউথ পিসের মতো কাজ করছেন। বিজেপির পার্টির নেতাদের থেকেও ভয়ঙ্কর কথা বলছেন। মনে হয় যেন আমরা নির্বাচিত লোকেরা ওনার চাকর-বাকর। সকাল থেকে রাত অবধি ওনাকে প্রণাম করে যেতে হয়। কাল ও ওনাকে চারবার ফোন করেছি। কোভিড সামলাব না ওনার প্রশ্নের উত্তর দেব? একজন রাজ্যপাল রাজনৈতিক নেতাদের মতো কথা বলছেন। ওনার অসহ্য কথার দংশনে আমি লজ্জিত, মর্মাহত।”
এরপরই তিনি রাজ্যপালকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “তবে গায়ের জোরে কিছু করতে গেলে… let us fight the battle.” একইসঙ্গে এদিন তিনি উপাচার্যদের নিয়েও রাজ্যপালকে তীব্র কটাক্ষ করে বলেন, “রাজ্যপালকে অনুরোধ করছি উপাচার্যদের সম্মান করুন। এটা বাংলার সংস্কৃতি। যাঁরা শিক্ষা জগতে আছেন, চিরকাল তাঁদের সম্মান করি আমরা। উপাচার্যদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে কিছু করা হলে বাংলা গর্জে উঠবে।” সেই সাথে এদিন সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী হেমতাবাদের বিধায়ক খুন নিয়ে রাজ্যপাল যে মন্তব্য করেছেন তার কড়া নিন্দা করেন। এদিন মুখ্যমন্ত্রী রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছোঁড়েন, “ওনাকে প্রমাণ করতে হবে যে বিধায়ককে খুন করা হয়েছে।”
আচার্যের তরফে বুধবার উপাচার্যদের ভার্চুয়াল বৈঠক আমন্ত্রণ নিয়ে প্রথম থেকেই চাপান-উতর চলছিল। উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করতে সরাসরি চিঠি লেখেন রাজ্যপাল। কিন্তু রাজ্য সরকারের নতুন বিধি অনুযায়ী এই চিঠি উচ্চশিক্ষা দপ্তরের মাধ্যমে উপাচার্যদের কাছে যাওয়ার কথা। তা যায়নি। রাজ্যপালকে বিষয়টি জানিয়ে দেন উপাচার্যরা। সোমবার রাজভবন থেকে ফের চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়, বৈঠকে উপস্থিত না থাকলে বিধি অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে। মঙ্গলবার আবারও রাজভবন থেকে চিঠি পান উপাচার্যেরা। তাতে বলা হয়, ৭ জুলাই উপাচার্যদের কাছ থেকে পড়ুয়া সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন আচার্য। কিন্তু কোনও উপাচার্য উত্তর দেননি। উপাচার্যদের খুব তাড়াতাড়ি জানাতে হবে, কেন তাঁরা উত্তর দিতে পারলেন না। তার পরে আচার্য হিসেবে যা করণীয়, তিনি তা করবেন। রাজ্যপালের জোড়া চিঠি পেয়ে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন উপাচার্যরা। শেষ পর্যন্ত গতকালের ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দেননি তাঁরা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সারাক্ষণ কাজ করব না। কনফারেন্স হবে কি হবে না সেটা শিক্ষা দপ্তরের ব্যাপার। সবাই যা বলার বলেছে। উপাচার্যরাও বলেছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যেন প্রণাম করতে যতে হবে। সময় পেলে সেটাও যেতাম। আমি তো চাকর-বাকর। নির্বাচিত লোকেরা সব চাকর-বাকর হয়ে গেছে। পশ্চিমবঙ্গে অনলাইনে অ্যাডমিশন হয়। উনি আগে উত্তরপ্রদেশ, বিহারের দিকে তাকিয়ে দেখুন। ভিসিরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন না যাওয়ার। যেহেতু আইন বলছে দপ্তরই শেষ কথা। আমি মুখ্যমন্ত্রী আছি বলে কাউকে বলব আপনার চাকরি দিতে হবে, প্রণাম করতে হবে। সেটা সম্ভব নয়। প্রতিহিংসা মূলক কিছু করতে গেলে বাংলা গর্জে উঠবে। ভাষার দংশনে আমরা লজ্জিত। গায়ের জোরে কিছু করতে গেলে মানুষ জবাব দেবে।”