নিজস্ব সংবাদদাতা: কমিশনের নির্দেশ মেনেই শীতলকুচির কর্মসূচি বাতিল করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চতুর্থ দফার নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের ছোঁড়া গুলিতে নিহত হয়েছিলেন ৪ তৃনমূল সমর্থক। ঘটনাকে ঘিরে রাজ্য জুড়ে রাজনৈতিক তর্ক বিতর্ক চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁচেছে। তারই মধ্যে তৃনমূল সুপ্রিমো ঘোষণা করেন শীতলকুচি যাবেন তিনি। এদিকে অশান্তির আশঙ্কায় আগামী ৭২ ঘণ্টা কোচবিহারের শীতলকুচিতে রাজনৈতিক নেতাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে নির্বাচন কমিশনল। এই টানা পোড়েনের মধ্যে ফের কী হতে পারে তাই নিয়ে জল্পনা তৈরি হচ্ছিল। কিন্তু শেষ অবধি কমিশনের নির্দেশকে মান্যতা দিয়েই রবিবার শীতলকুচি যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পরিবর্তে রবিবার রাজ্য জুড়ে ধিক্কার মিছিলের কর্মসূচি নিয়েছে তৃনমূল কংগ্রেস।
উল্লেখ্য অষ্টমদফার মধ্যে এখনও অবধি সবচেয়ে রক্তাক্ত নির্বাচন হয়েছে চুতর্থ দফাতেই। ওই দিন শীতলকুচিতে পরপর পাঁচজনের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়। প্রথমে এক আঠারো বছরের যুবকের গুলি লাগে। রাজনৈতিক সংঘর্ষের বলি ওই যুবক। বুথে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। তখনই তৃণমূল ও বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। গুলি ছিটকে এসে লাগে ওই যুবকের। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। জীবনে প্রথমবার ভোট দিতে এসে আর বাড়ি ফেরা হল না সদ্য আঠারোতে পা রাখা যুবকের।
এর ঠিক কিছু সময় পরেই ফের গুলি। এবার কাঠগড়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। শীতলকুচিরই জোরপাটকির ১২৬ নং বুথের বাইরে জটলা চলছিল। অভিযোগ, হঠাৎই বুথের বাইরে অসুস্থ হয়ে পড়েন এক যুবক। এলাকায় রটে যায় ওই যুবককে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা মারধর করেছেন। এরপরেই তিনশো থেকে চারশো গ্রামবাসী এলাকায় জড়ো হন। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘিরে ধরে চলে বিক্ষোভ। অভিযোগ ঠিক সেই সময় জওয়ানদের বন্দুক কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়। আত্মরক্ষার্থে জওয়ানরা গুলি চালালে চারজনের মৃত্যু হয়। নিহতরা তৃণমূলের সমর্থক বলে দাবি। এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে।
বনগাঁর সভা থেকে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর একাংশকে কড়া ভাষায় আক্রমণ শানান তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের তুলোধনা করেন তৃণমূলনেত্রী। তিনি বলেন, ‘ভোটের লাইনে গুলি করে চারজনকে মেরে ফেলেছে দিল্লির পুলিশ৷ পঞ্চায়েত ভোটেও এত মানুষের মৃত্যু হয়নি৷ অমিত শাহের চক্রান্তের জেরেই এই ঘটনা৷ অমিত শাহের পদত্যাগ করা উচিত৷’
এরপরই রবিবার শীতলকুচিতে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই সন্ধেয় নয়া নির্দেশ নির্বাচন কমিশনের। শীতলকুচির পরিবেশ এখনও বেশ উত্তপ্ত রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজবৈতিক নেতারা সেখানে গেলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে নির্বাচন কমিশন। সেই কারণেই আগামী ৭২ ঘণ্টা শীতলকুচিতে কোনও রাজনৈতিক দলের নেতাদের যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কমিশন।
এদিকে শীতলকুচির ঘটনায় রবিবার রাজ্য জুড়ে যেমন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা প্রতিবাদ ও ধিক্কার মিছিল করেছেন তেমনই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে দেখা গিয়েছে তৃনমূলপন্থী বিদ্দজনেদের। এদিন মিছিলে যোগ দেন ব্রাত্য বসু, কবীর সুমন, শিল্পী শুভাপ্রসন্ন, সুদেষ্ণা রায়ের মতো বুদ্ধিজীবীরা। সংবাদমাধ্যমকে ব্রাত্য বসু জানান বিজেপির খাকি ব্রিগেড একেক বার একেক রকম কথা বলছে। বাঙালি বিদ্বেষকে সামনে এনে ভোট করাতে চাইছে বিজেপি। যা বাংলায় কখনও সম্ভব নয়।