অশ্লেষা চৌধুরী: পোস্টার পাল্টা লড়াইয়ে সরগরম বাংলা। একদিকে, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোচবিহার সফরের আগেই অনুগামীদের যুবরাজ অর্থাৎ শুভেন্দুর সমর্থনে একাধিক জায়গায় ব্যানার, ফ্লেক্স। অন্যদিকে, হলদিয়ায় শুভেন্দুর অরাজনৈতিক সভা। সভাস্থলে ঢোকার মুখেই মমতা ও অভিষেকের ছবি দেওয়া পোস্টার ও তৃণমূলের পতাকা। এককথায়, শাসকদলের দু’পক্ষের পোস্টার- পোস্টার খেলায় জমজমাট বাংলার রাজনীতি।
সোমাবার চারদিনের জন্য উত্তরবঙ্গ সফরে এসছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন ৩ টা ৪৫ নাগাদ জলপাইগুড়ি পুলিশ লাইনের হেলিপ্যাডে অবতরণ করে তার হেলিকপ্টার। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় পুলিশ লাইন চত্বর। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মীসভা রয়েছে শহরের কলেজপাড়ার এবিপিসি মাঠে। এরপরেই কোচবিহার উড়ে যাবেন তিনি।
আজ দুপুরের মধ্যেই কোচবিহারে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। দলীয় বৈঠক ছাড়াও একাধিক সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। কিন্তু তার আগে কোথাও যেন তাল কাটল। আজ সকালেই কোচবিহার শহরের সাগরদিঘি, কেশব রোড, বাস স্ট্যান্ড সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মমতার ছবির পাশেই শুভেন্দুর ছবি সহ ব্যানার, ফ্লেক্স দেখা যায়। কোথাও লেখা দাদার অনুগামী, তো আবার কোথাও বাংলার মুক্তি সূর্য।
তবে কোচবিহারেই প্রথম নয়। গত সপ্তাহেও মেদিনীপুর শহরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার আগে বিভিন্ন জায়গায় শুভেন্দু অধিকারীর ছবি সহ পোস্টার পড়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর কাটআউটের পাশেই রাতারাতি লাগানো হয়েছিল শুভেন্দুর সমর্থনে ব্যানার, পোস্টার। সেই পোস্টারে লেখা, মেদিনীপুরের ভূমিপুত্র শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুর সঙ্গে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের দূরত্ব স্পষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর থেকে দক্ষিণ–রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তৃণমূল বিধায়কের সমর্থনে “আমরা দাদার অনুগামী” লেখা পোস্টার-ফ্লেক্স পড়ে।
অন্যদিকে, আজ হলদিয়া হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডে স্বাধীনতা সংগ্রামী ও হলদিয়া বন্দরের জনক সতীশচন্দ্র সামন্তের ১২১-তম জন্মজয়ন্তী পালন কর্মসূচি। সেখানে উপস্থিত থাকবেন শুভেন্দু অধিকারী। তার আগে সভাস্থলের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া পোস্টার দেখা যায়। এর আগে তৃণমূলের একাধিক অনুষ্ঠান ও মুখ্যমন্ত্রীর সভার আশপাশে শুভেন্দুর সমর্থনে দাদার অনুগামী লেখা পোস্টার দেখা গিয়েছে।
আর শুধু শুভেন্দু অধিকারীই কেন! যেদিন থেকে রাজীবও বেসুরো গাইতে শুরু করেছেন, সেদিনের পর থেকে দাদা হিসেবে তার প্রতিপত্তিও যে বেশ বেড়ে গিয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। দক্ষিণ থেকে উত্তরের জেলাতেও রাতারাতি এই দাদার ভক্তরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছেন। গোপালনগরে গত বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর সভার আগেই রাজীবের নামের পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছিল সেখানকার আশেপাশের এলাকা। বাদ যায়নি উত্তরবঙ্গও। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী আসার আগেই রাজীবের পোস্টার পড়েছে জেলায় জেলায়। শুধু কী তাই!
অন্যদিকে রবিবার রাতে মন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জির ছবিসহ একাধিক ফ্লেক্স ভর্তি একটি গাড়ি আটক করে রায়গঞ্জ থানার পুলিশ। রায়গঞ্জ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান অরিন্দম সরকারের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে গাড়ি সহ মন্ত্রীর ছবিসহ ফ্লেক্সগুলি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। একই সঙ্গে ফ্লেক্স লাগানোর কাজে নিযুক্ত ৪ যুবককে আটক করে পুলিশ। যদিও ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়। আর আজ ফের কোচবিহারে মুখ্যমন্ত্রী পা রাখার আগেই শুভেন্দুর পোস্টার পড়া স্বাভাবিক ভাবেই শাসক দলের জন্য হুমকির কারণ বলেই মনে করা হচ্ছে।