নিজস্ব সংবাদদাতা: রাজনীতির প্যাঁচে ১৬৫র ছানা ২০০হতেই দমবন্ধ হয়ে গেছিল খড়গপুরের। তার ওপর লকডাউন ভেঙে দিয়েছে কোমর। শহর খড়গপুরের তাবৎ ছানা খেয়ে নিয়েছে রজনীতি। তৃণমূলের নেতাদের ফরমানে ছানার যা দাম বেড়েছিল তাতেই ১২টা বেজে গিয়েছিল মিষ্টি দোকানের আর ষোলো কলা পুর্ন করেছে লকডাউন। রাজ্য সরকার তাই সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা অবধি মিষ্টি দোকান খুলতে বললেও মনে সুখ নেই দোকানদারদের।
কারন রাজনৈতিক ফাঁদে পড়া ছানা ওয়ালাদের নির্ধারিত দাম মানেনি খড়গপুর। কিছু দোকানদার যাঁরা ছোট কিংবা মাঝারি তাঁরা নিজেরা দুধ কাটিয়ে ছানা বানাচ্ছেন আর বড় দুয়েকটি দোকানদার নিজদের গাড়ি করে ছানা আনিয়ে নিচ্ছে বাঁকুড়া ঘেঁষা বিষ্ণুপুর থেকে। যদিও সবটাই পরিমানে অন্তত কম তাই আগের চেয়ে মিষ্টি উৎপাদন কমেছে, মিষ্টি কোথাও সাইজে ছোট হয়ে দাম এক আবার কোথাও সাইজ একই রেখে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১২শতাংশ। লকডাউনে বাজার খুললেও তাই মনে সুখ নেই।
মিষ্টি দোকান খোলার নির্দেশিকা পাওয়ার পরেই খড়গপুর শহরের মহাশক্তি মিষ্টান্ন ভান্ডার, গোপাল মিষ্টান্ন ভান্ডার, অভিনন্দন কিংবা পুরোনো বাজারের শীতলা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে খরিদ্দার আসছে বটে কিন্তু মনের সুখে মিষ্টি কেনার উপায় নেই। কারন সাধ আর সাধ্যের ফারাক ঢের। দোকানদারদের বক্তব্য ১৫৩টাকা কিলো ছানা যদি ১৯০ টাকা চেয়ে বসে তাহলে উপায় কী ? মেদিনীপুর শহরে ছানা ১৬৫ টাকা। যাঁদের মেদিনীপুর আর খড়গপুর দু’জায়গাতেই দোকান রয়েছে তাঁরা মেদিনীপুরে ছানা কিনছে। মিষ্টি বিক্রি করছেন খড়গপুরে। আর যাঁরা শুধুই খড়গপুরে দোকান করেন তাঁদের ছানা কিনতে হবে ১৯০টাকায়! প্রতিদ্বন্দ্বীতায় থাকবেন কী করে ?
শীতলার শহরে দুটো দোকান আর গোলবাজারের রসরাজ বড় দোকান, এরা নিজেদের গাড়িতে ছানা আনছেন বিষ্ণুপুর থেকে। তবুও পোষাতে পারছেননা। শীতলার বাপী দা, জিতেন্দ্র নাথ গুঁইন জানালেন, ”ছানা আনার খরচ বেড়েছে দাম না বাড়লে পোষাবো কী করে? তাও যতটা না হলে নয়, ততটাই বাড়িয়েছি। বাজারও সেই অর্থে নেই। কম করে বানাচ্ছি। বাজার না বাড়লে উৎপাদন বাড়বে কী করে?” ফলে যে টুকু হচ্ছে উবে যাচ্ছে।
মহাশক্তির সুব্রত ভক্তা সহ তিনটি দোকানকে শালবনী থেকে ছানা জোগান দিচ্ছেন একজন। তিন কুইন্টল ছানা ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন। অভিনন্দন, গোপাল হয় মিষ্টি ছোট অথবা দাম বেশি নিয়ে পোষাতে হচ্ছে।
ঝাপেটাপুরের চৌধুরী সুইটস কিংবা খরিদার রবি সুইটস স্থানীয় ভাবে দুধ কিনে ছানা তৈরি করে কিছুটা মিষ্টি বানাচ্ছেন। এঁদের কথা, ” দিদি লকডাউনে আমাদের কথা ভাবলেন ঠিকই কিন্তু স্থানীয় নেতারাই আমাদের কোমর ভেঙে দিয়েছে। বেশি কমিশন খাওয়ার জন্য যাঁরা জোর করে ছানা ব্যাবসায়ীদের দিয়ে দাম বাড়লেন এবং ধর্মঘটে গেলেন এখন তাঁরা দেখুন শুধুই আমরা নই, এখন মরছেন ছানার ব্যবসায়ীরাও। কেউ কেউ এখন গোপনে যোগাযোগ করছেন। বলেছেন ১৬৫টাকা কেজিতেই দেব। কারন লকডাউনে গরু মহিষগুলোকে খেতে দিতে পাচ্ছিনা। কিন্তু আমরা কী করব?”
খড়গপুরে ছানা আসত নারায়নগড়, বাখরাবাদ থেকে। ছানার জন্যই এখানে অনেক ঘরে ঘরেই ১০থেকে ২০অবধি গবাদিপশু। অবস্থা সব চেয়ে খারাপ এদের। লকডাউনে নিজেদের খাবার জোগাড় করতে হিমসিম তো পশুদের কী হবে? নেতাদের পাল্লায় পড়ে ছানার দাম নিয়ে জেদাজেদিতে গিয়ে বিপদে এখন এঁরাই। এখন বলছেন এতটা দাম না বাড়লেও চলত। অন্তত মেদিনীপুরের মত ১৬৫টাকা কেজি হলেও খুব ক্ষতি ছিলনা। এখন মিষ্টি বিক্রিতে ছাড় পাওয়ার পরও তাই লাভ নিতে পারছেননা এঁরা। ধর্মঘট করে বেসেছিলেন এখন সোশ্যাল ডিস্টেন্স ভেঙে মধ্যস্থতায় আসবে কে ?
প্রায় সমস্ত দোকানের সামনেই সোশ্যাল ডিস্টেন্স মানার সতর্কতা, ক্রেতা বিক্রেতা সবার মুখেই মাস্ক কিন্তু মনে সুখ নেই কারও। দামের চোটে খরিদ্দারের মুখ গম্ভীর আর লোকসানের ধকল সামলাতে বিক্রেতার অবস্থা খারাপ। অল্প হলেও মিষ্টি আছে কিন্তু মনের জিভে তার স্বাদ তেতোই।