নিজস্ব সংবাদদাতা: লকডাউনে ঘরে বসে বসে যাঁরা রবিবার ভুলতে বসেছেন এ পাড়ার সেই অধিবাসীরা ক্যালেন্ডার মিলিয়ে নেন এই দশ কন্যাকে দেখে। রবিবার মানেই তাঁদের ব্যস্ত পায়ে সকাল সকাল বাড়ি ছাড়ার আয়োজন। সেদিন সংসারের যাবতীয় দায় আর দায়িত্ব অন্য কোনও মহিলা থাকলে তাঁর অথবা কর্তার। হেঁসেল থেকে কাচ্চা বাচ্চা সামলাও তোমরা, দশ কন্যা চললেন যুদ্ধে। যুদ্ধ মানে হরেকরকম, সংগঠনের বস্তা থেকে মেপে মেপে চাল নামাও , ডাল নামাও, আলু , তেল , মশলাপাতি, সাবান প্যাকেটে প্যাকেটে ভর। একটা আধটা প্যাকেট নয়, শয়ে শয়ে। তারপর সব তৈরি করে সহযোদ্ধাদের সাথে বেরিয়ে পড়া পড়শি পাড়া দীনেশ নগর, রবীন্দ্রপল্লী, আধাঁরকুলি, তালবাগিচার আদিবাসী পাড়া ইত্যাদি ইত্যাদি। গরীব আর দুঃস্থ পরিবারগুলির হেঁসেলে দু’মুঠো অন্নের যোগান দিতে।
খড়গপুর শহরের তালবাগিচা এলাকার এই দশভুজা দশ কন্যারা হলেন মৌসুমি ঘোষ (রায়), অদিতি ঘোষ, তনুশ্রী পাল, গৌরী পাল, দেবযানী চৌধুরী, সুমনা দেবনাথ, সূচনা মূখার্জী, জোনাকি দাস, লক্ষ্মী শর্মা, শ্রাবণী চক্রবর্তী। তালবাগিচা ও সংলগ্ন এলাকার এই দশকন্যাই এখন অন্নপূর্ণা হয়ে পড়শি নগরের হেঁসেল সামলাচ্ছেন। সব সময় হয়ত সময় কুলিয়ে ওঠেনা তখন পড়শি নগরের বাসিন্দাদের ডেকে নেওয়া হয় নিজেদের শিবিরে। লাইন দিয়ে তাঁরা নিয়ে যান যথা সাধ্য রান্নার উপকরণ।
এই রবিবার, ২৬এপ্রিল এমনই শিবির অনুষ্ঠিত হয়ে গেল তালবাগিচা বাজার সংলগ্ন যুব সংঘ দূর্গা মন্ডপে। লোধা শরব ও আদিবাসী অধ্যুসিত আধাঁরকুলি, তালবাগিচা আদিবাসী পাড়ার ১৫৫টি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হল খাদ্য সামগ্রী। এই দশ কন্যার মুল সংগঠন হল ভগৎ সিং শতবার্ষিকী কমিটি। খড়গপুরের বিখ্যাত যুব সংস্কৃতি উৎসব ছাড়াও বছর ভর নানা কর্মসূচী নিয়ে ব্যস্ততা থাকে। তারই মধ্যে লকডাউনে বিপর্যস্ত পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ানো। কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, পঞ্চম দফার এই শিবিরের আগের চার দফায় বিভিন্ন এলাকার ৬৭০ পরিবারে খাদ্য উপকরণ পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি লকডাউনে আটকে পড়া খড়গপুর রেলস্টেশনের যাত্রী, ভবঘুরে, ভিক্ষাজীবীদের রান্না করা খাবার পরিবেশন করাও হয়েছে।
দশকন্যার এক কন্যা মৌসুমী জানান, ” সাধ অনেক, মনে হয় এই দুর্দিনে সবার পাশে গিয়ে দাঁড়াই আমরা। সবার সাথে ভাগ করে নেই অন্নের সুখ কিন্তু সমর্থ্য কোথায়? আমরা তাই সবাইকে আহ্বান জানাই আপনিও ওঁদের পাশে এসে দাঁড়ান। সময় না থাকলে আপনার নূন্যতম সাহায্য আমাদের দিন। আপনার প্রতিনিধি হয়ে আমরাই পৌঁছে দেব ওঁদের কাছে।”