নিজস্ব সংবাদদাতা: ২৪ ঘন্টা পের হয়নি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় দু’দুটি জায়গায় রেশনে কম দ্রব্য দেওয়ার অভিযোগ তুলে ক্রোধে ফেটে পড়লেন উত্তেজিত জনতা। মাত্র ৭২ঘন্টা আগেই এই জেলারই গোয়ালতোড় থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এক এম.আর.শপ মালিক কিন্তু তারপরেও হুঁশ ফেরেনি অনেক রেশন দোকানের মালিকেরই। তারই প্রমান জেলার মেদিনীপুর সদর ব্লকের ২৪ঘন্টার মধ্যেই ঘটে যাওয়া দু’দুটি গন বিক্ষোভ যার জেরে এক এম.আর.শপ মালিক ও তার দুই ছেলেকে রবিবার গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হল মেদিনীপুর কোতয়ালি থানার পুলিশ।
রবিবার ঘটনাটি ঘটেছে মেদিনীপুর সদর ব্লকের বনপুরা গ্রামপঞ্চায়েতের অন্তর্গত বলবানদিঘী গ্রামে। এখানকার এম.আর.শপ মালিকের নাম শেখ মহম্মদ ইলিয়াস। ইলিয়াস একাই আশে পাশের প্রায় সাতটি মৌজা এলাকার সাড়ে চার হাজার কার্ডের মালিক, হিসাব অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে কয়েকশ কুইন্টল রেশন দ্রব্য তোলে সে। লকডাউনের কারনে সেই পরিমান বেড়ে হাজার কুইন্টল ছাড়িয়ে গেছে। সেই রেশন বন্টনের কথা বহনাগেড়্যা, কিশমত আঙ্গুয়া,
বাগাগেড়্যা, আগরপাড়া, রামচন্দ্রপুর, বলবানদিঘী, কৃষ্ণদেউলি, ঘুরা চক
রাতারিবাড় সহ কয়েকটি গ্রামে। লকডাউনের কারনে সরকার বিনামূল্যে চাল ডাল আটা দিচ্ছে। ঠিক করে দিয়েছে কার্ড প্রতি প্রাপ্যের পরিমানও কিন্তু ইলিয়াস তো তা দিচ্ছিলইনা পাল্টা প্রতিবাদ করতে গেলে সে ও তার ছেলেরা মিলে রেশন বন্ধ করে দেওয়া এমন কি মারধরের হুমকিও দিচ্ছিল বলে স্থানীয় গ্রামবাসীদের অভিযোগ।
শনিবার এরকমই ক’জন কম রেশন পাওয়ার অভিযোগ করায় তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়। রবিবারও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতেই ক্ষেপে যায় জনতা। আশেপাশের গ্রামগুলি থেকে শ’য়ে শ’য়ে মানুষ জড়ো হয়ে যায় তার প্রাসাদোপম বাড়ির সামনে। শুরু হয় বিক্ষোভ। বাড়ি ঘিরে রেখে জনতা তীব্র আক্রোশে ফেটে পড়ে। কেউ কেউ বাড়ি ভাঙচুর শুরু করার কথাও বলে, কেউ দাবি করে ইলিয়াস ও তার ছেলেদের বাইরে বের করে গাছে বেঁধে রাখার। ঘটনার খবর পেয়েই কোতওয়ালি থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে জনতাকে নিরস্ত্র করে এবং ইলিয়াস ও তার দুই ছেলেকে তুলে নিয়ে আসে। সীল করে দিয়ে আসা হয় রেশন দোকানটি।
স্থানীয় এক বাসিন্দা নাম জানাতে অস্বীকার করে বলেছেন, স্থানীয় তৃণমূলের নেতাদের রীতিমত নিয়ন্ত্রন করে এই রেশন দোকানের মালিক। আর সে কারনেই গত ৯ বছর ধরে তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস দেখাতে পারেনি জনতা। ওই ব্যক্তির বক্তব্য, ”রেশন দোকানের পাশাপশি গ্রামের অন্য প্রান্তে একটি ভূষিমাল দোকান রয়েছে ইসমাইলের ছেলেদের। রেশনের চুরির মাল সেখানেই গাঁটের কড়ি খসিয়ে কিনতে হয় জনতাকে।” ওই ব্যক্তি আরও জানান, ” এতদিন আমরা খাটার সুযোগ পেয়েছি, রেশনে কি পেলাম না পেলাম দেখিনি। কিন্তু এখন লকডাউনের জন্য আমাদের খাটার সুযোগ নেই! বউ বাচ্চা নিয়ে মরতে বসেছি। বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছি আমরা। পুলিশ বাঁচিয়ে দিয়েছে ওদের না হলে আজই ওদের হারামের খাওয়া বন্ধ করে দিতাম।”
স্থানীয় আগরপাড়া গ্রামের এক বাসিন্দা এক চাঞ্চল্যকর তথ্য জোগান দিয়ে বলেন, ” আগে ওর কাছে এত কার্ড ছিলনা। আমাদের এলাকায় আরও কয়েকজন এম.আর.শপ দোকানদার ছিলেন কিন্তু ইসমাইল ও তার দলবল এবং শাসকদলের কয়েকজন নেতার চক্রান্তে সেই ডিলারদের ডিলারশিপ বাতিল হয়ে যায়। সব কার্ড চলে যায় ইসমাইলের পকেটে। আর তখন থেকেই ফুলে উঠেছে ইসমাইল।”
উল্লেখ্য শনিবারও এই একই ঘটনা ঘটে ঠিক পাশের গ্রাম বনপুরায়।একই অভিযোগ ওঠে রেশন ডিলার আশাদুল হকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রেশন ডিলার প্রতিটি গ্রাহককে তাদের পাওনা রেশন সামগ্রীর থেকে কম দিয়ে আসছে, কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়, দোকান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই অভিযোগ স্বীকার করে নেন গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান মুদেশ্বর দিগার। জানান, এলাকার লোকের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি, আমরাও প্রশাসনের কাছে এই ঘটনার তদন্তের দাবি জানাব। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় কোতওয়ালী থানার পুলিশ ও মেদিনীপুর সদর বিডিও অফিসের আধিকারিকরা। যদিও গ্রেপ্তার হয়নি। তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল।
এদিকে পুলিশের পাশাপাশি রবিবার ঘটনাস্থলে পৌঁছায় খাদ্য নিয়ামক দপ্তর ও বিডিও অফিসের একটি দল। মানু্ষের সঙ্গে কথা বলার পাশাপশি কাগজপত্র খতিয়ে দেখেন ওই তিন সদস্যের দলটি। দলের এক সদস্য জানান, ” মানু্ষের অভিযোগ অনেকাংশেই সত্য। কম দ্রব্য দেওয়া হচ্ছিল। আমরা বিভাগীয় প্রক্রিয়া চালু করেছি।”
এর আগে কেশপুর তারপর গোয়ালতোড় এবং পর পর দুদিন মেদিনীপুর সদরের ঘটনায় রেশন ডিলার রা পড়েছেন সাঁড়াশি চাপে। প্রকাশ্যে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন তাঁরা কিন্তু গোপনে বলছেন, শাসকদলের ত্রাণের এই বহর কোথা থেকে হচ্ছে, সেটাও সরকার খোঁজ নিক। রেশন ডিলারদের কাছ থেকে চাল নিয়ে নেওয়া হলে তারা কি করবেন ? যদিও বিষয়টা মূখ্যমন্ত্রী জেনেছেন ও বারবার বলে যাচ্ছেন সমস্ত মানুষ যেন নির্ধারিত মাপেই রেশন পায়। খাদ্যমন্ত্রী বারংবার তৃনমূল নেতা থেকে কাউন্সিলর , নির্বাচিত সদস্যদের বলছেন যে ”আপনরা রেশন দোকানের শষ্য তুলে নিয়ে মানুষকে ত্রান দিতে যাবেননা তাহলে রেশন দোকানদার বিপদে পড়বে।” পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি জানান, ” উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করেছে প্রশাসন। মূখ্যমন্ত্রী মানু্ষের এই দুর্দিনে সবার মুখে অন্য তুলে দিতে চাইছেন আর যারা তা বিঘ্নিত করতে চাইছে তাদের কঠোর সাজা হওয়া উচিৎ।”