নিজস্ব সংবাদদাতা: যাঁদের অনেক আছে তাঁরাই নিতে পারেন লকডাউনে বাড়িতে বসে থাকার আনন্দ। কিন্তু দিন আনি দিন খাই মানুষের সে উপায় কোথায়? বিশেষ করে যাঁদের প্রতিদিনই কাজ খুঁজে নিতে হয় আর কাজ খুঁজতে খুঁজতে চলে যেতে হয় এক জেলা থেকে আরেক জেলায়। আর গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মতই বন্ধ গনপরিবহন। পেটের তাগিদে তাই কেউ সাইকেলে ছুটছেন তো কেউ পায়ে হেঁটেই। সেই সাইকেলে করেই কাজ করতে গিয়ে সাত সকালে দুর্ঘটনায় প্রান হারালেন এক প্রৌঢ়।
রবিবার দুর্ঘটনাটি ঘটেছে ঘাটাল-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়কের ওপর দাসপুর থানার গৌরা সিং পাড়ার কাছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে মৃত ব্যক্তির নাম লক্ষীকান্ত মনি। ৫৮ বছরের লক্ষীকান্তর বাড়ি পার্শ্ববর্তী পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়া থানার টালটিয়া গ্রামে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, লোকের বাড়িতে জ্বালানি কাঠ কাটার কাজ করতেন ওই ব্যক্তি। গাছের গুঁড়ি কিংবা আসবাবের জন্য ব্যবহৃত কাঠের বর্জিত অংশ অথবা জ্বালানির জন্য ব্যবহৃত গাছ চিরে তা জ্বালানির উপযোগী করে কেটে দিতেন কুঠার দিয়ে। কাজের পরিমান অনুসারে মজুরি ঠিক হত।
ঘটনা সুত্রে জানা গেছে যেহেতু বাস ট্রেকার চলেনা তাই সাইকেল নিয়েই রবিবার ভোর ভোর বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন লক্ষীকান্ত। ঘটনাস্থল নিজের বাড়ি থেকে প্রায় ৮কিলোমিটার। সকাল ৬টা নাগাদ তিনি যখন গৌরা সিং পাড়ার কাছাকাছি তখনই ঘাটালগামী একটি পিকআক ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পেছন থেকে ধাক্কা মারে সাইকেল আরোহী লক্ষীকান্তকে। পীচের রাস্তার ওপর রাক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে যান তিনি। ঘটনাটি দেখতে পেয়েই ছুটে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরাই তৎপর হয়ে গুরুতর আহত লক্ষীকান্তকে একটি আ্যম্বুলেন্সে তুলে দিয়ে ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা করিয়ে দেন। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে স্থানীয় ভিলেজ পুলিশ মারফৎ থানায় খবর দেওয়া হলে,ঘটনার স্থলে পুলিশ এসে পৌঁছায়। ঘাতক গাড়িটিকে ধরার জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠে পুলিশ। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে গাড়ির বর্ননা পেয়ে বিভিন্ন জায়গাকে সতর্ক করা হয়। এরপর প্রায় ৪কিলোমিটার দুরে গাড়িটিকে সাহাচক গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সয়লাগ্রামের কাছাকাছি গাড়িটিকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আটক হয়েছে চালকও। যদিও সকাল সকাল পুলিশের এই তৎপরতায় রাজ্য সড়কে কোনও যানজট হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন গৌরা, সোনামুয়ী, সাহাচক, খুকুড়দহ এলাকায় খুবই পরিচিত লক্ষীকান্ত সহ আরও কয়েকজন। ওই এলাকার বিশ পঁচিশটি গ্রামের গৃহস্থরা জ্বালানি কাঠের প্ৰয়োজন পড়লেই গাছ কেটে খবর দিত লক্ষীকান্ত বা তাঁর সহযোগীদের। গাছের আসবাব বা চৌকাটের জন্য বরাদ্দ অংশ আলাদা করে বাকি অংশ জ্বালানির জন্য কেটে দিয়ে যেত তাঁরা। স্থানীয়দের মতে কখনও বাস, কখনও বা ট্রেকারে করে কুঠার নিয়ে একা অথবা কয়েকজন মিলে আসতেন কাজে কারন ১০ থেকে ২৫কিলোমিটার অবধি কাজের জন্য ঘুরতে হত তাঁদের। লকডাউনে গনপরিবহন বন্ধ কিন্তু নিজের আর সংসারের পেট তো আর বন্ধ নয়। পেটের জ্বালা মিটবে কী করে? জ্বালানি না হলে? অগত্যা সাইকেলই ভরসা। সেই সাইকেলেই শেষ যাত্রা হল লক্ষীকান্তর। না, তাঁর অবশ্য পেটের আর জ্বালা রইলনা।