নিজস্ব প্রতিনিধি: ‘হাম লোলিত ইয়া নীরব মোদি থোড়ি হ্যায়, হাম মজদুর হ্যায়। মালিকনে জো আ্যহেসান কিয়া, হামে সাত দিয়া। হ্যাম জরুর চুকায়েঙ্গে। সত্যি এরা পাতি মজুর, ইটভাটার শ্রমিক। খড়গপুর আর মেদিনীপুর এবং সংলগ্ন এলাকায় যে ছোট বড় ইমারত সে সব এঁদেরই হাতের তৈরি ইটে গড়ে ওঠা। কংসাবতী নদীর দু’পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা সারি সারি ইটভাটার শ্রমিক এরা। শুক্রবার যে শ্রমিকের দলটির সঙ্গে কথা হল এরা সবাই বিহারের নওদা জেলার কয়েকটি গ্রামের প্রায় শ’চারেক মানুষ। স্বামী স্ত্রী কাচ্চাবাচ্চা, কিশোর কিশোরীর দল।
লকডাউন শুরু হওয়ার আগেই বে-কাজ হয়ে পড়েছিল মানুষগুলি। হোলির পর থেকেই অবহাওয়া খারাপ ছিল ৷ ঝড় বৃষ্টির কারনে বন্ধ ছিল ইট ভাটা গুলির কাজ ৷ ফলে ভাটা শ্রমিকেরা বসে কাটিয়েছিল ৷ এমনই কয়েকটি ভাটা ছিল মেদিনীপুর সদর ব্লকের হাতিহলকা, হোসনাবাদ সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে ৷ যেখানে বিহার থেকে প্রায় চারশো শ্রমিক সপরিবারে থেকে কাজ করতেন ৷ ঝড়ের পরে লকডাউনে আরও তিনমাস বসে থাকতে হয়েছিল ৷ রোজগারের টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় মালিকের কাছে দাদন নিয়ে খেতে হয়েছে তাদের ৷ তিনমাসে সেই ধারের পরিমান অনেক বাড়তেই মালিকও আর সামাল দিতে পারেনি। আর তাই ঘরে ফেরার সিদ্ধান্ত। পশ্চিমবঙ্গ আর বিহার সরকারের কাছে আবেদন। অবশেষে তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বিহার ও পশ্চিম বঙ্গে সরকার যৌথ উদ্যোগ নিয়ে বাড়ি পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে।
শুক্রবার মেদিনীপুর সদর ব্লকের বিভিন্ন এলাকাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কয়েকটি ইঁটভাটার চারশোরও বেশি শ্রমিক নিজেদের বিছানা, সংসারের সামগ্রী নিয়ে সপরিবারে উঠে জড়ো হয়েছিলেন মেদিনীপুর শহরের প্রান্তে হোসনাবাদ সংলগ্ন বাজারে ৷ দু মাসের বাচ্চা থেকে বড়ো, পুরুষ মহিলা সকলেই অপেক্ষা করছিলেন বাসের জন্য ৷ভাটাতে থাকার সময়ের নিজেদের অস্থায়ী সংসারের সামগ্রী বস্তায় ভরে বাড়ি ফেরার জন্য উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছিলেন ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে থাকা বন্ধ বাজারের ওপরে৷
বেলা ১২ টার সময় ৪ টি বড়ো ভলভো বাস বিহার থেকে হাজির হয় সেখানে ৷ যে বাসগুলিতে পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার সরকারের সংশাপত্র চেটানো তালিকা সাঁটানো ছিল সামনের কাঁচে ৷ বাস হাজির হতেই সামান্য কিছু প্রক্রিয়া শেষ করে নিজেদের বস্তা ও প্যাকিং গাড়িগুলির ছাদে তুলে নেন তাঁরা ৷ বেলা দুটোর পরে পরপর বাস গুলি রওয়ানা দেয় বিহারের গরীব বাসিন্দা গুলিকে নিয়ে ৷
যাওয়ার আগে বিহারের নাওদা জেলার বাসিন্দা এক প্রৌঢ় জানিয়ে গেলেন, “তিনমাসের বেশি সময় ধরে বসে থাকতে হয়েছে ৷ প্রথমে নিজেদের জমা করা টাকা শেষ হয়েছে ৷ বাড়িতেও আর পাঠাতে পারিনি ৷ পরে মালিকের কাছে ধার নিতে হয়েছে ৷ সেখান থেকে দুমাস বসে খেয়েছি ৷ মালিককে বলেছিলাম দুমাসের কিছুটা টাকা ছাড় দিতে ৷ কিন্তু তারা দিতে চায় নি ৷ তারপর মালিককে প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে যে আমরা পরের বছর হলেও কাজ করে শোধ করবো ৷”
একই জেলার বাসিন্দা আরও এক যুবক ধর্মেন্দ্র সিং বলেন- ” কাজ বন্ধ থাকার কারনে আমাদের বাড়ি পাঠানোর টাকা ছাড়াও মালিকের কাছে অনেক টাকা ধার হয়ে গিয়েছে ৷ পরের বছরে কাজ করে শোধ করবো বলতে আমাদের ধার দিয়ে ছেড়েছে ৷ জানিনা বাড়িতে গিয়ে কি করবো ৷ তবে পরিস্থিতি ভালো হয়ে গেলে আমরা বাঁচবো ৷ না হলে সেখানেও না খেতে পেয়ে মরতে হবে ৷” শুধু তাই নয় বলে গেলেন, বহুত শুক্রিয়া খড়গপুর ঔর মেদিনীপুর কো কিঁউকি হামে পাতা হ্যায় ইয়ে সব ইটা উনোনেই খরিদ লেতা। ইসি লিয়ে মালিক আউর হাম বাঁচ সাকা। ফির আউঙ্গা জলদি। হাম লোলিত মোদি থোড়া হ্যায়……।