নিজস্ব সংবাদদাতা: দেশ এখন ২০লক্ষ কোটি টাকার করোনা প্যাকেজের চর্চায় আর তারই মধ্যে ব্যাঙ্গালুরু থেকে নিউ জলপাইগুড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া ট্রেনটি এসে পৌঁছাল আসানসোলে। স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ানোর সাথে সাথেই বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন ৫০ দিনেরও বেশি বাইরে আটকে থাকা যাত্রীরা। বৃহস্পতিবার এনজিপি যাওয়ার শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন আসানসোলে দাঁড়াতেই যাত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে ৷
তাঁদের অভিযোগ রেল কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের কাছ থেকে ৯১০ টাকা করে ভাড়া নিলেও কোনো নূন্যতম পরিষেবা দিচ্ছেনা৷ রেলের কামরার টয়লেট অপরিচ্ছন্ন, মিলছে না খাবার ও পানীয় জল ৷ একই সাথে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখারও কোনো ব্যবস্থা নেই ৷ গাদাগাদি করে অমানবিক পরিবেশে যাত্রা করার ফলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে যাত্রীরা ৷
শিলিগুড়ির বাসিন্দা সুমিত ব্যানার্জি জানালেন, বুধবার রাতে কোনও খাবার দেয়নি রেল। তার আগে অন্ধ্রপ্রদেশের একটি স্টেশনে এক মুঠো খাবার পেয়েছিল কেউ কেউ। কাল সারা রাত কিছু খাওয়া জোটেনি আজ আসানসোলে কিছুটা নাস্তা পেলাম। বাথরুমে যাওয়া যাচ্ছেনা, যত্রতত্র পায়খানা আর নোংরা। বেসিন উপচে পড়ছে জল। মেঝেতে গড়িয়ে আসছে সেই জল। রেল বলেছিল সোশ্যাল ডিস্টেন্স মানা হবে, মাঝের বার্থে কাউকে নেওয়া হবেনা। কিন্তু একটি কুপের আটটা বার্থেই লোক ঠাসা। এক অবর্ণনীয় নারকীয় পরিবেশ ট্রেনে।”
ট্রেনের কামরা থেকেই জানলায় কান্নায় ভেঙে পড়ে নিউ জলপাইগুড়ির উদ্দেশ্যে যাওয়া এক মহিলা যাত্রী বললেন, “গত তিন দিন শুধু কলা আর বিস্কুট দিয়ে যাচ্ছে রেল। মেয়েরা কেউ কেউ গত ২৪ ঘন্টা ল্যাট্রিনে যায়নি। যাওয়ার পরিস্থিতি নেই। কোনও স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ালে ল্যাট্রিন জুটছে, কখনও সখনও তাও নয়। সঙ্গে থাকা বাচ্চাটিকে দেখিয়ে বললেন, ওর চিকিৎসা করাতে গেছিলাম। যা দেখছি বাড়ি যাওয়ার আগেই ও ফের অসুস্থ হয়ে পড়বে।”
বিক্ষোভরত যাত্রীরা রেলের কাউকে না পেয়ে রেল পুলিশকেই বিক্ষোভ দেখতে শুরু করেন। কেউ কেউ বলেন, শুরুতে তাঁদের বলা হয়েছিল ট্রেন পুরুলিয়ায় দাঁড়াবে আর এখন বলা হচ্ছে আসানসোলেই নামতে হবে। রেল পুলিশের পক্ষ থেকে যাত্রীদের আশ্বস্ত করা হয় ৷ এই বিষয়ে কমাণ্ড্যান্ট চন্দ্রমোহন মিশ্রা জানিয়েছেন ব্যাঙ্গালোর থেকে আসা শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের বেশ কিছু যাত্রীর ধারণা ছিলো ট্রেনটি পুরুলিয়াতে দাঁড়াবে ৷ তবে রেল রুট অনুসারে ট্রেনটি আসানসোলে দাঁড়ালে তারা তাদের সমস্যার কথা জানায় ৷ সেই অনুসারে সিপির সাথে কথা বলে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে ৷ একদল যাত্রী রেলপুলিশের কাছেই হাত জড়ো করে অনুরোধ করলেন, আমাদের না খেতে দিন কিন্তু বাচ্চাগুলোর অন্তত ভাতের ব্যবস্থা করুন।