নিজস্ব সংবাদদাতা: কোনও দুর্বল রাজনৈতিক দল বনধ ডাকলে যেমন দোকানপাট আর যানবহন বন্ধ থাকে কিন্তু বেপরোয়া মানুষ রাস্তায় বেরোয় ঠিক তেমনই শুক্রবারের লকডাউনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাস্তায় নামল মেদিনীপুর শহর। দোকান পাট বন্ধ ছিল বলেই হয়ত মানুষের ভিড় তেমন নজরে পড়েনি কিন্তু সরকারি ঘোষনার পরও যে মানুষের লকডাউন মানতে কতটা অনীহা তা নজরে পড়ল শুক্রবার।
শহরের সর্বত্রই এদিন বাইক, স্কুটি আর সাইকেল ছুটিয়ে রাস্তায় নেমেছে মানুষ। গোলকুয়াচক, বটতলা, কালেক্টরি, কেরানীটোলা, জজকোর্ট, পাটনাবাজার সর্বত্রই মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। পুলিশ দেখলে আড়াল হয়েছে কিংবা ছুটে পালিয়েছে। পুলিশও এদিন অনেকটাই যেন নিষ্পৃহ উদাসীন রেফারির মত ‘হালকা’ চোখেই দেখেছে লকডাউনকে। দিনের শেষে গ্রেপ্তার মাত্র ৪জন যেখানে আগের লকডাউনগুলিতে গ্রেপ্তার হয়েছে ৫০ জনের ওপরে।
অথচ এরই মধ্যে চুপিসারে শহরের দখল নিয়েছে করোনা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার যে কোনও প্রান্তের চেয়ে মেদিনীপুর শহরেই এখন করোনার বাড়বাড়ন্ত। বলা যেতে পারে শহরে যেন করোনার চাষ হচ্ছে শহরে। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী ৪ঠা সেপ্টেম্বর অবধি মেদিনীপুর পৌরসভা এলাকায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৮০১ জন। জেলায় করোনা শুরু হয়েছিল দাসপুর দিয়ে। বাস্তবিক দাসপুরে হু হু করে ছড়িয়েছিল করোনা কিন্তু সেই সর্বাধিক সংক্রমিত দুই দাসপুর মিলিয়েও হিসাব করলে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৭১ জন।
এমনকি যে খড়গপুর শহরে করোনার বাড়বাড়ন্ত নিয়ে এত চর্চা সেই খড়গপুরেও রেল যোগ বাদ দিলে ৪ঠা সেপ্টেম্বর অবধি আক্রান্ত ৫৩১ জন। অর্থাৎ জেলার তিনটি প্রবল সংক্রমিত এলাকার মধ্যে এগিয়ে মেদিনীপুর শহর। মৃত্যুর নিরিখে দেখলে জেলার করোনা সংক্রমন যুক্ত সর্বাধিক মৃত্যু হয়েছে মেদিনীপুর শহর ও দাসপুর ১ ব্লকে। ১১জন করে। এরপর ঘাটাল শহর, ৯জন। খড়গপুর রেল ও রেল বহির্ভুত শহরে ৮জন করে মারা গেছে। বিপদের কারন এটাই যে মেদিনীপুর শহরে এই মৃত্যু জুলাইয়ের শেষ থেকে সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখ অবধি কিন্তু অন্য জায়গার মৃত্যু গুলি শুরু হয়েছে মে মাস বা তার আগে থেকে। অর্থাৎ মেদিনীপুর শহরে সবেমাত্র করোনা কালের শুরু হয়েছে আর শুরুতেই এই অবস্থা।
কেন বলা হচ্ছে মেদিনীপুর শহরে করোনা কালের শুরু? কারন আগস্ট মাসের শুরুতেই মেদিনীপুর শহরে আক্রান্ত ছিলেন ১৫জন আর সেপ্টেম্বরের ৪তারিখে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়ে গেল ৮০১ জন! অর্থাৎ মাত্র ১ মাসে এই সংক্রমন ঘটেছে শহরে যা জেলার অন্য জায়গায় গত ৫মাসে হয়েছে। বিপদের আরও একটা বড় কারন যে এই মুহূর্তে মেদিনীপুর শহরে সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা জেলার অন্য জায়গার তুলনায় অনেক বেশি। অর্থাৎ যাদের থেকে আরও সংক্রমনের আশঙ্কা থেকে যায়। মেদিনীপুর শহরে এখন সক্রিয় করোনা আক্রান্ত রয়েছেন। ওই তারিখের হিসাবে মেদিনীপুর শহরে সক্রিয় আক্রান্ত ৩৭৭জন।
খড়গপুর শহরে ১৮৮, রেল এলাকায় ৭০, দুই দাসপুর মিলিয়ে ২০১ এবং ঘাটালে ৫০জন। এই সব মিলিয়ে মেদিনীপুর শহরের জন্য লকডাউনটা মানা জরুরি ছিল কিন্ত দুর্ভাগ্য হলেও সেটা হয়নি।
লকডাউনের বাজারেও তাই শহরের প্রান্তে বসেছে মদের ঠেক। শহরের বিভিন্ন এলাকায় মদের ঠেকের রমরমা হয়েছে এদিন। এমনই এক মদের ঠেকে এদিন হানা দিয়েছিল পুলিশ। শহরের নজরগঞ্জ পুলিশের তাড়া খেয়ে মদ্যপরা কাঁসাই নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এখান থেকেই ৪জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বাদবাকি শহর থেকে এদিন কোনোও গ্রেপ্তার হয়নি।