নিজস্ব সংবাদদাতা: অবশেষে দুঃস্বপ্নের অবসান! চালু হল লোয়াদা সেতু। হয়ত সবটা হলনা কিন্তু হওয়ার পথ খুলল বৃহস্পতিবার, ১লা জুলাই। পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার বিধায়ক তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কারিগরী শিক্ষা মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর নির্বাচনের আগে কথা দিয়েছিলেন ১লা জুলাইয়ের মধ্যেই চালু করবেন কাঁসাই নদীর ওপর লোয়াদা সেতু। সবটা হলনা বটে কিন্তু আংশিকভাবে খুলে দেওয়া লোয়াদা সেতু। আপাতত পথচারী, সাইকেল, বাইক এবং আ্যম্বুলেন্স চলতে পারবে এই সেতু দিয়ে। খুব জরুরি প্রয়োজনে চলতে পারবে চারচাকা। মন্ত্রী জানালেন, ‘এখনও কাজ চলছে। সেতুর গুরুত্বপূর্ণ অংশে চলছে নির্মাণ কার্য। এই অবস্থায় ভারি গাড়ি কোনও ভাবেই যাতায়াত করতে পারবেনা। হেঁটে কিংবা সাইকেল ও বাইকে যাতায়াত করা যাবে। রুগী নিয়ে আ্যম্বুলেন্স যাতায়াত করবে আর খুব জরুরি প্রয়োজনে যেতে পারে চারচাকা কিন্তু পুরোটাই নিয়ন্ত্রিত করবে সেতুর দুপারে থাকা পুলিশ। গুরুত্ব প্রয়োজন অনুসারে যাতায়াতের অনুমতি দেবেন তারাই।”
যে কারনে এখুনি লোয়াদায় নদী ফেরিঘাট বন্ধ করা হচ্ছে না। বাদ বাকি সমস্ত গাড়ি পারাপার করবে এই ফেরিঘাট দিয়েই। সেতুর ওপর কাজ চলছে নিবিড় ভাবে। লক্ষ্য রাখা হয়েছে পুজোর আগেই এই সেতু জনসাধারণের প্রয়োজনে পুরোপুরি খুলে দেওয়ার জন্য। পরিকল্পনা রয়েছে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম কিংবা দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে এই সেতু উদ্বোধনের। এইদিন এই সেতু খুলে দেওয়ার অনুষ্ঠানে বহু মানুষ জড়ো হয়েছিলেন।
সেতু খুলল বটে কিন্তু মাঝখানে ১২বছর কেটে গেল অসীম দুর্ভোগ নিয়েই। ২০০৯ সালেই এই সেতুটির নির্মাণকার্য সমাপ্ত হয়ে গিয়েছিল। বাকি ছিল দু’পাশের সংযোগকারী রাস্তা নির্মাণের। তৎকালীন আমলে সেই রাস্তার জন্য কিছু পরিমান জমি মানুষ স্বেচ্ছায় ছাড়বেন আর কিছুটা সরকার কিনে নেবে এই শর্তেই শুরু হয়েছিল সেতু কিন্তু নন্দীগ্রাম আর সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনের রেশ পড়ে এখানেই। জমি না ছাড়ার রাজনৈতিক প্ররোচনা শুরু হয় এখানেও। জমি আন্দোলনে ধাক্কা খেতে থাকা বাম সরকার আর অগ্রসর হয়নি অ্যাপ্রোচ রোড তৈরি করতে। সেই মাশুল দিতে হয়েছে বর্তমান সরকারকেও। নানা অজুহাতে সংযোগকারী রাস্তার কাজ পিছিয়ে যেতে থাকে আর জমির দাম বাড়তে থাকে। ইতিমধ্যে লোয়াদা থেকে আষাঢ়ি অবধি রাজ্য সড়ক সম্প্রসারিত করার কাজ শুরু হলে সংযোগকারি রাস্তার নকশায় রদবদল হয় কিছুটা। প্রয়োজন হয়ে পড়ে আরও জমি অধিগ্রহনের। সব সমস্যা মিটিয়ে অবশেষে সেই বাম সেতুতেই মুক্তির পথ খুলল নদী বন্ধনে আবদ্ধ চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার লক্ষাধিক মানুষের।
বৃহস্পতিবার এই অনুষ্ঠানে মন্ত্রী হুমায়ূন কবীর ছাড়াও প্রাক্তন বিধায়ক সেলিনা খাতুন, বিডিও শিঞ্জিনী সেনগুপ্ত, ডেবরা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়, প্রদীপ কর সহ অনেকে। উপস্থিত পূর্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক তপোজ্জ্বল মন্ডল জানালেন সেতুর কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয় নি। অনেক কাজ বাকি রয়েছে। কিন্তু মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজনের কথা ভেবে আংশিক খুলে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তিনি পুলিশের কাছে অনুরোধ করেছেন কাজের সময় যেন কোনও অসুবিধা না হয় সেদিকে নজর রাখতে। এই সেতু আংশিক খুলে যাওয়ায় ডেবরা থানার লোয়াদা-ষাঁড়পুর গ্ৰাম পঞ্চায়েতের লোয়াদা থেকে অপর প্রান্তে গোলগ্ৰাম গ্ৰাম পঞ্চায়েতের নন্দবাড়ি পর্যন্ত যাতায়াতে কিছুটা সুবিধা হল।
এইদিনই লোয়াদার সমান্তরাল অবস্থায় অবস্থিত ট্যাবাগেড়িয়াতে কাঠের সেতুর ওপর দিয়ে নদী পেরুতে গিয়ে একটি পিকআপ ভ্যান নদীর জলে পড়ে যায়। যদিও হতাহতের কোনও খবর নেই। এই সেতুর দাবিতে গত কয়েকবছর ধরে আন্দোলনরত ডেবরার দিপান্তর মুক্তি সংগ্রামী মঞ্চের অন্যতম সংগঠক গৌতম মাজী জানালেন, “এই সেতুর মুখ খুলে যাওয়ায় অনেকটাই স্বস্তি পেলাম আমরা দিপান্তর বাসীরা কিন্তু এতেই আমাদের সমস্ত সমস্যা সমাধান হল এমনটা নয়। আমাদের মূল সমস্যার সমাধান হবে দক্ষিণের ট্যাবাগেড়িয়া আর উত্তরের ভবানীপুর-দুবরাজপুর সেতুর কাজ সম্পন্ন হওয়ার মধ্যে দিয়েই। ফলে আমাদের কাজ এখনও শেষ হয়ে যায়নি।”