- নিউজ ডেস্ক: সোমবার রাজ্যে বজ্রপাতের ঘটনায় মৃত্যূ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ জন! ওই দিন সন্ধ্যা অবধি মুর্শিদাবাদ, হুগলি ও পশ্চিম মেদিনীপুর মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ২০ জনে। যার মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের ২ব্যক্তি ছাড়াও ওই দুই জেলার ৯জন করে মোট ১৮জন ছিলেন। রাত যত বেড়েছে ততই খবর এসেছে মৃত্যুর। ওই ৩ জেলার সাথে যুক্ত হয়েছে আরও ৩ জেলা যুক্ত হয়ে মোট ৬টি জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭জনে। এখনও কয়েকজন মারাত্মক আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী রাজ্যে বজ্রপাতে সর্বাধিক মৃত্যু হয়েছে হুগলি জেলায়, ১১জন। মুর্শিদাবাদে মৃতের সংখ্যা ৯জনেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়াতে ২জন করে মারা গিয়েছেন। নদিয়ার নবদ্বীপে মৃত্যু হয়েছে ১জনের। রাজ্য সরকার আগেই মৃতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছিলেন। আহতদেরও চিকিৎসার দায়িত্ব ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানিয়ে দেয় রাজ্য। এরই পাশাপাশি এগিয়ে এসেছেন কেন্দ্র সরকারও। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে একদিনে এত মানুষের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে মৃত ও আহতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে একটি ট্যুইট বার্তায় মৃতদের পরিবার পিছু ২লক্ষ টাকা ও আহতদের ৫০ হাজার থাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজ্যের পক্ষ থেকেও ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে। জানা গিয়েছে। মৃত এবং আহতদের সিংহভাগই কৃষিজীবী পরিবার এবং দুর্যোগকালে তাঁরা প্রায় সবাই-ই কৃষি কর্মে নিযুক্ত অথবা কৃষিকাজ সেরে ফিরছিলেন। অনেকেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এঁদের মৃত্যুতে বিপর্যয় নেমে এসেছে পরিবারগুলিতে। ভাগ্যাহত এই পরিবার গুলির পাশে দাঁড়াতে আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছনোর পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে শাসকদল তৃনমূল কংগ্রেস। মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন তৃণমূলের নতুন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী যে তালিকা পাওয়া গেছে তাতে বলা হচ্ছে মুর্শিদাবাদে মারা গিয়েছেন এনামুল শেখ (৪৬), সইনুল ইসলাম (২৫), সুনীল দাস (৩৫), দূর্যোধন দাস (৩৫), সূর্য কর্মকার (২৩), জালালউদ্দিন শেখ (২৮), অভিজিৎ বিশ্বাস (৪৫), প্রহ্লাদ মুরারী (৩২), মারাজুল শেখ (১৭)।পূর্ব মেদিনীপুরে মারা গিয়েছেন,শম্পা মণ্ডল (২৫), গৌরাঙ্গ মাঝি (২৪)।পশ্চিম মেদিনীপুরে মারা গিয়েছেন,অরুণ মণ্ডল (৪৪), অর্চনা রায় (৪১)। অন্যদিকে বজ্রপাতে বাঁকুড়ায় মারা গিয়েছেন — বাসুদেব মাহাত (৪০), কৃষ্ণপদ হাঁসদা (৬৩) এবং হুগলিতে মারা গিয়েছেন,হেমন্ত গুছাইত (৪৩), মালবিকা গুছাইত (২৮), শিশির অধিকারী (৬৭), কানাই লহোরি (৭৮), কিরণ রায় (২৭), হারুন রশিদ (৩৯), দিলীপ ঘোষ (৫০), সুস্মিতা কোলে (৩৮), সঞ্জীব সামন্ত, সৈল মালিক, আনন্দ রায় (৩৫)।
বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ডের মতই এরাজ্যে একই দিনে বজ্রপাতে এতজনের মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা। গত মে মাসের গোড়ায় ভয়ঙ্কর বজ্রপাতের আভাস দিয়ে রাজ্যবাসীকে সতর্ক করেছিল আবহাওয়া দপ্তর কিন্তু এবার সেরকম কোনও সতর্কবার্তা ছিলইনা। ঝড়বৃষ্টির আগাম ইঙ্গিত থাকলেও প্রকৃতির এই রুদ্ররোষ সম্পর্কে কোনোও আভাসই ছিলনা তাঁদের। আবহওয়ার এই মারাত্মক খামখেয়ালিপনা, জলবায়ু পরিবর্তন ভাবাচ্ছে তাঁদেরও। এই মরশুমে গরম ছাড়িয়ে গেছে রাজস্থানের তাপমানকে। এরপর কী কালান্তক বজ্রপাতও ছাড়িয়ে যাবে বিহার ঝাড়খন্ড উত্তরপ্রদেশকেও? ভাবনা এখন সেটাই।
দক্ষিণবঙ্গে প্রাক বর্ষার বৃষ্টির মধ্যেই এই ভয়াবহ মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার মধ্যেই আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর খবর দিয়েছে , শুক্রবার নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে উত্তর বঙ্গোপসাগরে । তার হাত ধরেই বর্ষা প্রবেশ কিরবে দক্ষিণবঙ্গে । শনি ও রবিবার দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা।