অশ্লেষা চৌধুরী: উত্তরাখন্ডে হিমবাহে ফাটল, বড়সড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কায় ধুঁকছেন সকলেই। জারি করা হয়েছে সতর্কতা। সংবাদসংস্থা এএনআই সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ধসের ফলে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেহ দু’টি উদ্ধারও করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, চীন সীমান্তের জোশীমঠের কাছে নীতি উপত্যকায় বড় একটি ফাটল দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কতা জারি করার পাশাপাশি ইতিমধ্যেই ২৯১ জনকে জোশীমঠের সুমনা অঞ্চল থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজরদারি চালাচ্ছে কেন্দ্রও। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে উত্তরাখন্ডের মুখ্যমন্ত্রীর ফোনে আলোচনা হয়েছে এবং সেনা বাহিনীকেও প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে যে, হিমবাহ ধসের সময় বেশ কয়েকজন শ্রমিক সড়ক নির্মাণের কাজ করছিলেন। তাদের এখনও পর্যন্ত কোনও খোঁজ মেলেনি। বিআরও সূত্রে আরও খবর মিলছে যে, নীতি উপত্যকায় তুষারপাতের ফলে যোগাযোগে সমস্যাও তৈরি হয়েছে। আরও বড় দুর্ঘটনা এড়াতে ওই এলাকায় এনটিপিসি সহ অন্যান্য সংস্থাগুলিকে আপাতত যাবতীয় কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
উত্তরাখন্ডের মুখ্যমন্ত্রী তিরথ সিং রাওয়াত ট্যুইট করে জানিয়েছেন, ‘নীতি উপত্যকার সুমনায় হিমবাহ ধসের খবর মিলেছে। ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশনের থেকে খবরাখবর নিচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় হিমবাহ ভেঙে আচমকা তুষারধসের ঘটনায় ভয়ঙ্কর বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় উত্তরাখণ্ডের বিস্তীর্ণ এলাকায়। প্রচুর মানুষ নিখোঁজ হয়ে যায়, যার মধ্যে বাংলারও ৬ জন শ্রমিকও ছিলেন। এর মধ্যে পুরুলিয়ার আড়ষা থানার বাগানডি গ্রামের বাসিন্দা শুভঙ্কর তন্তুবায় ও অশ্বিনী তন্তু বায় এবং মহিষাদলের লালু জানা, বুলা জানা ছিলেন। এই ধসের ফলে ঋষিগঙ্গা ও ধৌলিগঙ্গা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্য়াপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। দুটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রেরই বাঁধ ভেঙে যায়। চামোলি জেলার তপোবনেও ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রচুর। এছাড়াও জোশীমঠ এলাকার ধৌলি গঙ্গা উপত্যকায় ঋষিগঙ্গা জলবিদ্যুত্ কেন্দ্রে কর্মরত বহু শ্রমিক নিখোঁজ হয়ে যায় সেইসময়। ঘটনায় কমপক্ষে ৭২ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। রাজ্য ও কেন্দ্রের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৬০০ সদস্য জোরকদমে উদ্ধারকাজ চালিয়ে অনেকজন নিখোঁজ ব্যক্তিকে উদ্ধার করেন।
এছাড়াও ২০১৩ সালের উত্তরাখণ্ডের হয়ে যাওয়া সেই বিভীষিকাময় ঘটনা আজও শিহরণ জাগায় সকলের মনে। লাগাতার বৃষ্টির জেরে উত্তরাখণ্ডের চোরাবারি হৃদ উপচে হড়পা বান নেমে এসে উপত্যকা ভাসিয়ে দেয়। সেই ভয়ঙ্কর বন্যায় প্রায় ৫ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। জানা গিয়েছিল, সেবছর ১৩-১৭ জুন একনাগাড়ে বৃষ্টির ফলে চোরাবারি হিমবাহ গলে পড়ে। এর ফলে, মন্দাকিনী নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। প্লাবিত হয় উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ ও পশ্চিম পালের একাংশ। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কেদারনাথ। বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে বলিউডে সিনেমাও তৈরি হয়েছিল, যেখানে নায়কের ভূমিকায় ছিলেন জনপ্রয় অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত। কিন্তু তিনিও আজ না ফেরার দেশে।