নিজস্ব সংবাদদাতা: প্রকৃতির এই নির্মম অবস্থাকেও উপহাস করতে পারেন যাঁরা তাঁরা হলেন শ্রমজীবী মানুষ। না হলে যে করোনার জন্য এত দুর্দশা তাঁদের, তাঁদের অন্ন কেড়ে নিয়েছে যে করোনা, যে করোনার জন্য কাজ হারিয়ে শতশত মাইল হাঁটতে হচ্ছে শ্রমজীবী জনতাকে সেই করোনার নামেই কেউ সন্তানের নাম রাখে? কোনও তথাকথিত ভদ্রজন সন্তানের নাম রেখেছে কলেরা বা ইবোলা? না, কারন এতটা নির্মম রসিকতা করার স্পর্ধা কেবল মেহনতি মানুষই দেখাতে পারেন তাই পথ হাঁটতে হাঁটতে স্ত্রীর প্রসব করা সন্তানের নাম করোনা রাখতে পারেন মঙ্গল টুডুই। শনিবার আসানসোল কালীপাহাড়ি ধর্ম চক করেন্টাইন সেন্টারে প্রসব হওয়া কন্যার নাম করোনাই রাখলেন মঙ্গল।
মঙ্গল জানিয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের এক ইট ভাটার শ্রমিক তিনি এবং তাঁর স্ত্রী। একটি শিশুকন্যা সমেত স্ত্রীকে নিয়ে ইটভাটাতেই থাকতেন। সেখানেই গর্ভবতী হন তাঁর স্ত্রী। তিনি যখন পূর্নগর্ভাবস্থায় আসন্নপ্রসবা তখনই লকডাউন ঘোষনা হয়ে যায়। প্রায় ৪৫ দিন ওখানে কাটানোর পর পকেটের পুঁজি শেষ হয়ে যায়। অন্যদিকে কোনও কাজও নেই তাই বাধ্য হয়ে ঝাড়খণ্ডের বাড়ির দিকে রওনা দেন তাঁরা। শিশু সন্তান আর আসন্ন প্রসবা স্ত্রীকে নিয়ে দেড়শ কিলোমিটার পথ হাঁটার পর আসানসোলের পুলিশ তাঁদের আটকায় এবং ঘাঘরবুড়ি মন্দির চত্বরের একটি লজের খোলা বারান্দায় তাঁদের কোয়ারেন্টাইন করা হয় দু’দিন আগে।
শনিবার সকালে ওই গর্ভবতী মহিলা এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। এরপর পরিবারের তরফে ওই কন্যা সন্তানের নাম রাখা হয় করোনা। তবে কেন করোনা নাম দেওয়া হলো এই প্রসঙ্গে মহিলার স্বামী মঙ্গল টুডু বলেন গোটা পৃথিবী জুড়ে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ চলছে। তাই ওর নাম করোনা নাম রাখা হয়েছে।পরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় নবজাতক ও মাকে।হাসপাতাল সুপার নিখিল চন্দ্র দাস জানিয়েছেন মা ও কন্যা দুজনেই সুস্থ আছে। তাদের কে আইলোশন রাখা হয়েছে। কি সেই আইসোলেশন দেখলে অবশ্য আইসোলেশনের ধারনাই বদলে যাবে। লজের খোলা বারান্দাতেই মা ও নবজাতক সমেত গোটা পরিবার। তারপরও মঙ্গল হাসতে হাসতে বলতে পারে, ,’করোনাকে লিয়ে ইতনা পরিসানি হুয়া, ইসি লিয়ে লড়কি কি নাম করোনা রাখখা হুয়া। আরে ভাই পরিসানি কোন সা নয়া চিজ হ্যায় হামলোকন কে লিয়ে?’ বাংলা করলে দাঁড়ায়, করোনার জন্যই এত হয়রানি তাই মেয়ের নাম করোনা রাখলাম। আর হয়রানি আমাদের জীবনে নতুন কি?