নরেশ জানা: দু’জন বা তিন জন করোনা আক্রান্ত এবং তাঁরা যায় যায় অবস্থায় কিন্তু ভেন্টিলেশন আছে একটি। এমতাবস্থায় রাষ্ট্র কী করবে? সোজা কথায় রাষ্ট্র বেছে নেবে কাকে বাঁচার সুযোগ দেব আর কাকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে? আমার পরিবারের সদস্য অথবা আপনার পরিবারের সদস্যর মধ্যে কাকে বাঁচার সুযোগ দেওয়া হবে, আর কাকে নয়! আমাকে অথবা আপনাকে মেনে নিতে হবে কারন এর বিকল্প নেই, ভেন্টিলেশন নেই। ইতালিতে নাকি এমনটাই হয়েছিল, প্রথমে ৮০ পরে ৭০ বছরের উর্দ্ধে আক্রান্তদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনই নেই বলা হয়েছিল।
যাই হোক এবার একটু তথ্য ঘেঁটে নেওয়া যাক, সোমবার জুনের ১৫,কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত দেশে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ৩৩২,৪২৪।লাগাতার দৈনিক রেকর্ড সংক্রমণের ধারায় ছেদ পড়ল সোমবার। তবে সেই সংখ্যাটা খুব একটা কমেনি। বরং টানা তিনদিনের প্রতিদিনই দেশে ১১,০০০-এর বেশি করোনাভাইরাস আক্রান্তের হদিশ মিলেছে। সোমবারও সে নিয়মের ব্যতিক্রম হলনা, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১১,৫০২।
এই হিসেবে বসার সময় লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে জুনের প্রথম ১৫ দিনে ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ১,৪১,৮৮৯ বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই সময় অর্থাৎ গত ১৫ দিনে মৃত্যু হয়েছে ৪,১২৬ জনের। সোমবার বেলা ৮টা, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩২৫ জনের মারা গিয়েছেন। আর সব মিলিয়ে এই সময়ে, আজকের দিনে ভারতে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯,৫২০।
গত ২দিনে আক্রান্তের হার ৭.৬% যা কিনা আগের ৪৮ঘন্টার হিসাবে সামান্য কম, সে সময়ে হার ছিল ৭.৮%। বরং করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যার হারে একটু উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত ২দিনে এই হার ৭.২% আগের ৪৮ ঘন্টায় এটা ছিল ৯.৭%। যদিও এই চিত্রটা মোট মৃত্যুর হারের তুলনায় আশাব্যঞ্জক নয় মোটেই কারন সেই হার যথেষ্টই কম, ২.৫% এর কাছাকছি।
এই মুহূর্তে ভারতে প্রতি ১৬ দিনে মৃত্যুর পরিমান দ্বিগুন হচ্ছে। আর আক্রান্তের সংখ্যা ১৭দিনে দ্বিগুন হচ্ছে। অর্থাৎ আজ সোমবার আক্রান্তের সংখ্যা যে পরিমান (১,৪১,৮৮৯) ১৭ দিন আগে এর অর্ধেক ছিল। সব মিলিয়ে এই হারের এবং দিনের অনুপাতে আগামী ৫দিনে ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪লক্ষে আর পরের ৫ দিনে ভারত ৫লক্ষ আক্রান্তের দেশে পরিনত হবে। আক্রান্ত বৃদ্ধির হার দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে জোরালো চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দেবে, আক্রান্তের তুলনায় আইসোলেশন শয্যা, ভেন্টিলেশন কমতে শুরু করবে তখন আমাদের বাছতে হবে ২জন সঙ্কটজনক আক্রান্তের মধ্যে কাকে আমরা জীবনদায়ী ব্যবস্থার সুযোগ দেব অথবা কার মৃত্যুকে তুলনামূলক কম লোকসান মনে করছে রাষ্ট্র।
খালি চোখে যদিও এটা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে যে শুরুরদিকে যখন করোনা ভাইরাস আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়ে ছিল তখনকার চাইতে আমাদের বর্তমান আক্রান্ত ও মৃত্যুর দ্বিগুন হওয়ার হার বেশ খানিকটা কিন্তু পাশাপাশি এটা অত্যন্তই শঙ্কার যে সম্প্রতি এই দুই হারই দ্রুত হারে বাড়ছে। বিশ্বের যে দেশগুলিতে মৃত্যুর সংখ্যা ৪হাজার। ছাড়িয়ে গেছে তারমধ্যে ভারতে আক্রান্ত ও মৃতের হার গত ১ সপ্তাহে সর্বাধিক এবং সেই হিসাব ধরলে ভারত আক্রান্তের সংখ্যায় ইংল্যান্ড ও মৃতের সংখ্যায় ইরানকে ছড়িয়ে গেছে।
এই মুহূর্তে মহারাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা ৩,৯৫০ ঠিক তারপরেই ১,৪৭৭ মৃত নিয়ে গুজরাট। তৃতীয় স্থানে দিল্লি যেখানে মৃত্যু হয়েছে ১,৩২৭ জনের। চতুর্থ স্থানে রয়েছে বাংলা, ৪৭৫ জন মারা গেছেন আর ৪৫৯ জনের মৃত্যু নিয়ে পঞ্চম স্থানে মধ্যপ্রদেশ। এছাড়াও দিল্লি, হরিয়ানা ও তামিলনাড়ুতে গত ১ সপ্তাহে ফের আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
ওপরে যে মৃত্যুর সংখ্যা ও রাজ্যের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান দেওয়া হয়েছে তা দেখে বাঙালির আশ্বস্ত হওয়ার মত কিছু হয়নি কারন মৃত্যুর হার যদি বেশি হয় তবে মৃত্যুর সংখ্যা ও দেশের মধ্যে স্থানের অদলবদল হতে সময় লাগবেনা বেশি। কারন মৃত্যুর হারে বাংলা এগিয়ে। যেখানে ৬.৩% মৃত্যুর হার নিয়ে গুজরাট প্রথম স্থানে রয়েছে সেখানে ৪.৩% নিয়ে বাংলা দেশের মধ্যে দ্বিতীয়। ৪.২% নিয়ে মধ্যপ্রদেশ তৃতীয় স্থানে। অথচ সারা দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার ২.৯%। একদম নিচের দিকে রয়েছে ত্রিপুরা(০.১%), লাদাখ(০.২%), আসাম(০.২%)।
অন্যদিকে, ভারতে ১৬৯,৭৯৭ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। শতাংশের বিচারে তা ৫১ ছাড়িয়ে গিয়েছে। জুনের পয়লা তারিখ থেকে সুস্থ হয়েছেন ৭৭,৯৭৯ জন। পাশাপাশি সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সঙ্গে সুস্থ রোগীর ব্যবধান ক্রমশ বাড়ছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সক্রিয় রোগীর তুলনায় ১৬,৬৯১ জন বেশি সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
এখন দেশ এবং রাজ্যগুলির নজর দিতে হবে আক্রান্ত হওয়ায় হার এবং আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার কম করার দিকে। যেমন পশ্চিমবঙ্গের দিকে ফের আরেকবার তাকান। পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্ত ১১,০৮৭ আর মৃত্যু ৪৭৫ অথচ ৪৪,৬৬১ আক্রান্ত নিয়ে তামিলনাড়ুতে মারা গেছেন ৪৩৫ জন। আবার ১৩,৬৯৯ আক্রান্ত উত্তরপ্রদেশে কিন্তু মৃত্যু ৩৯৯ কিংবা রাজস্থানে আক্রান্ত ১২,৬৯৪ জন কিন্তু মৃত্যু হয়েছে ২৯২জনের। অর্থাৎ আক্রান্ত বেশি হলেই যে মৃত্যু বেশি হবে এমনটা নয়।আসলে দরকার আক্রান্তদের দ্রুত চিহ্নিত করা এবং চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসা। এটা না হলেই দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাটাই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যাবে। আর সেই সময়টা আসতে দেরি হবেনা যখন সত্যি সত্যি বাছতে হবে কাকে বাঁচতে দেব আর কাকে নয়।