নিজস্ব সংবাদদাতা: বুধবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্য সরকারের দায় কার্যত ঝেড়েই ফেলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টিকা জালিয়াত দেবাঞ্জন দেবের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছবিতে দেখতে পাওয়া নেতা মন্ত্রীদের ক্লীন-চিট দিয়েছেন তিনি। আর সেই বুধবারই দেবাঞ্জন কাণ্ডে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আর সেই প্রশ্নের মুখে পড়ে রীতিমত হোঁচট খেতে হয়েছে রাজ্যের আইনজীবীকে। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে কসবা ভুয়ো টিকাকরন কান্ড নিয়ে শুরু হওয়া জনস্বার্থ মামলায় হাইকোর্ট প্রশ্ন তুলেছে, যেখানে IAS হওয়া স্বত্ত্বেও সবার নীলবাতিওয়ালা গাড়ি নিয়ে ঘোরা ফেরা আইনি অনুমোদন নেই সেখানে পুলিশের চোখের সামনে দিনের পর দিন দেবাঞ্জন ঘুরে বেড়ালো কী করে?
এদিন হাইকোর্ট প্রশ্ন তুলেছে, নীলবাতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুষ্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের। ধৃত দেবাঞ্জন যদি সত্যিই আইএএস হতেন, তাহলে কী তাঁর নীলবাতি ব্যবহারের এক্তিয়ার রয়েছে? কেন রাস্তায় কোনও চেকিং হয়নি? দীর্ঘদিন কীভাবে দেবাঞ্জন ওই গাড়ি নিয়ে ঘুরল? এক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকায় কী ছিল? হাইকোর্ট আরও প্রশ্ন করেছে, দেবাঞ্জন নিজেকে পুরসভার যুগ্ম কমিশনার হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল, সেক্ষেত্রে পুরসভার কমিশনারই বা নিজের অন্তর্গত কর্মীকে কেন চিনতে পারলেন না? হাইকোর্টের আরও প্রশ্ন ছিল কসবা কান্ড প্রকাশ্যে আসার পর রাজ্য সরকার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে? তদন্তের কাজ কতদুর এগিয়েছে?
উল্লেখ্য কসবা কান্ড নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে তিনটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের কোর্টের আইনজীবী সন্দীপন দাস, বিজেপি নেতা তরুণজ্যোতি তিওয়ারি এবং আরও এক ব্যক্তি তিনটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন। বুধবার সেই মামলার শুনানি শুরু হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঞ্চে। শুনানিতে রাজ্যে পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন জেনারেল প্লিডার অনির্বান রায়। রায় আদালতকে জানান, ঘটনা ঘটার পর থেকে সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়নি পুরো ঘটনার তদন্ত করার জন্য। তবে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পুলিশের পক্ষ থেকে SIT গঠন করে তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে।
এরপরই বিচারপতিরা জানিয়ে দেন, যে যে প্রশ্নগুলি উত্থাপিত হয়েছে তা লিখিত আকারে আদালতের কাছে হলফনামায় জমা করতে আগামী শুক্রবারের মধ্যে এবং ওইদিন ফের শুনানি হবে। তবে শুনানি চলাকালীন আরও কিছু প্রশ্ন উঠে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন শুধুই নীলবাতি নয় দেবাঞ্জন তার গাড়ি হিসাবে ব্যবহার করা ভাড়া নেওয়া বাণিজ্যিক গাড়িটির নম্বর প্লেটে ব্যবহৃত হলুদ রঙ তুলে দিয়ে ব্যক্তিগত বা সরকারি গাড়ির নম্বর প্লেটের মত সাদা রঙ ব্যবহার করেছিলেন। শহরের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গাড়ির নম্বর প্লেট গুলির ওপর নজরদারি করা পুলিশের প্রাথমিক ও প্রধানকাজ। অথচ এরকম বিষয় কীভাবে পুলিশের নজর এড়িয়ে গেল? আরও প্রশ্ন উঠবে যে কসবার তৃনমূল কাউন্সিলর নিজে জানিয়েছেন যে তিনি কসবা থানাকে জানিয়েছিলেন পুরসভার বৈধ অনুমতি ছাড়াই ওই টিকাকরন শিবির হচ্ছে। অথচ কসবা থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সেই কথা শোনেননি। উল্লেখ্য ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় CBI তদন্ত দাবি করেও একটি মামলা দায়ের হয়েছে হাইকোর্টে।