নিজস্ব সংবাদদাতা: ,লকডাউনে ছাড়ের সুযোগ নিয়ে প্রথম বাস যাত্রা শুরু হয়েছিল বৃহস্পতিবার। আর সেদিনই মহানগরের ফোর্ট উইলিয়ামে ঘটে যায় বাস দুর্ঘটনা। রাস্তার ধারে রেলিং ভেঙে ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনায় একজনের প্রাণ হারানোর খবর পাওয়া গেছিল। পরে জানা যায় মৃত সেই ব্যক্তি ঝাড়গ্রাম জেলার জামবনী থানা এলাকার চিচড়া গ্রামের ৪৫ বছর বয়সী বিবেকানন্দ দাভ। পুলিশ মারফৎই সেই খবর এসে পৌঁছেছিল ঝাড়গ্রামে। সেখান থেকেই খবর পৌঁছায় জামবনীতে। তারপর কানে কানে সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিবেকানন্দর বাড়িতে আছড়ে পড়েছে সারা গ্রাম। চিচড়ার ঘরে ঘরে কান্নার রোল গ্রামের সবার প্রিয় বিবেকানন্দর জন্য।
জানা গেছে ১৫বছর আগে নিজের দক্ষতার জেরে গ্রাম থেকে মহানগরে কলকাতা পুলিশে নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন বিবেকানন্দ। ছোট বেলায় যে প্রকৃতি তাঁকে জঙ্গলের আঁকে বাঁকে দৌড়াতে শিখিয়েছিল, যে লাল মাটি তার পেশীগুলোকে ঋজু আর দৃঢ় করেছিল তারই নিরন্তর চর্চাই তাঁকে সাহায্য করেছিল কলকাতা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সের চাকরি পেতে। ধীরে ধীরে জুনিয়র কনস্টেবল থেকে কনস্টেবল হয়েছিলেন। বাবা-মার একমাত্র ছেলে বিবেকানন্দ আর পাঁচটা দিনের মতই বাইক নিয়ে বেরিয়ে ছিলেন ডিউটিতে কিন্তু ফোর্ট উইলিয়ামের কাছে তাঁকেই ধাক্কা মেরে রেলিং ভেঙে উল্টো মুখি হয়ে পড়ে ঘাতক বাসটি। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান বিবেকানন্দ।
বিবেকানন্দর বাবা আশিস দাভ এলাকায় পরিচিত একজন গ্রামীণ চিকিৎসক। মা মিনতি দাভএকজন গৃহবধূ। চিকিৎসক পরিবার হওয়ার কারনে গ্রাম জুড়ে পরিচিতি এই পরিবারের। অন্যদিকে বিবেকানন্দ নিজেও খুবই খোলামেলা ও মিশুকে প্রকৃতির। গ্রাম ময় মানুষের সাথেই সদ্ভাব ছিল তাঁর। পরিবার সূত্রে জানা গেছে বছর দশেক আগে ঝাড়গ্রামে বিয়ে করেছিলেন বিবেকানন্দ। স্ত্রী জামবনীরই বেলদা হাইস্কুলের শিক্ষিকা। তাঁদের ৮ বছরের ছেলের লেখাপড়ার জন্য স্ত্রী সেখানেই থাকতেন। বিবেকানন্দ ফিরলে ঝাড়গ্রামে ,শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন। বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনার খবর আসার পর কলকাতা পৌঁছেছেন তাঁর স্ত্রী। এদিকে লকডাউনের মাঝখানেই মাত্র একমাস আগেই দেখা করে গেছেন মা-বাবার সাথে। দেখা হয়েছে বন্ধুদের সাথেও। সেই স্মৃতিও জ্বলজ্বল করছে সবার মনে। এ হেন একজন তরতাজা মানুষের হঠাৎ মৃত্যু হতবাক করে দিয়েছে গোটা গ্রামকেই।
পুলিশের বক্তব্য ঘটনাস্থলের কাছাকাছি মেটিয়াবুরুজ থেকে হাওড়া গামী মিনি বাসটির সামনের চাকা দুটি ধরে রাখা এক্সেল বা ধুরিটি হঠাৎই ভেঙে পড়ায় বাসের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি চালক। গাড়ি সবে মাত্র দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে ওঠার বড় রাস্তা ধরেছিল ফলে গতি ছিল ভালই। ওই সময়ে বিপরীতমুখী বিবেকানন্দ রাস্তার পাশ দিয়ে বাসটিকে পেরিয়ে যাচ্ছিল। সে কল্পনাই করতে পারেনি রাস্তার মাঝখান ছেড়ে বাসটি সেদিকেই ছুটে আসবে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটনাটি ঘটে যায়। তাকে ধাক্কা মেরেই বাসটি ইটের রেলিং ভেঙে উর্দ্ধমূখী হয়ে যায়। চালক সহ আহত হন ১৭জন বাসযাত্রী। ক্রেন দিয়ে বাসটিকে নিচে নামাতে হয়। বিবেকানন্দকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটে পুলিশ কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ।